রুবেলের সঙ্গে মায়ের শেষ কথা—২ লাখ টাকা দিতে হবে, নয়ত মেরে ফেলবে

‘মা ২ লাখ টাকা থানায় দিতে হবে। নয়ত তারা আমাকে মেরে ফেলবে।’ মায়ের সঙ্গে এটাই ছিল শেষ কথা কারাগারে মারা যাওয়া রুবেল দে’র।

গত ৫ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে মারা যান রুবেল দে (৩৮)। তবে এ মৃত্যুকে খুন দাবি করে সিনিয়র জেল সুপার, বোয়ালখালী থানার ওসিসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলার আবেদন করেছেন নিহতের স্ত্রী পুরবী পালিত।

মঙ্গলবার (২০ ফেব্রুয়ারি) চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ ড. বেগম জেবুননেছার আদালতে নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনে মামলার আবেদন করা হয়।

আদালত মামলার আবেদন গ্রহণ করে আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি শুনানির দিন ধার্য করেছেন বলে জানিয়েছেন বাদীপক্ষের আইনজীবী অজয় ধর।

মামলায় অভিযুক্তরা হলেন—বোয়াখালী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আছহাব উদ্দিন, পরিদর্শক (তদন্ত) মো. সাইফুল ইসলাম, এসআই এসএম আবু মুসা, এএসআই মাঈন উদ্দিন, এএসআই মো. সাইফুল ইসলাম, কনস্টেবল কামাল ও আসাদুল্লাহ, এসআই রিজাউল জব্বার, বোয়ালখালী থানার ডিউটি অফিসার, চট্টগ্রাম কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার (ভারপ্রাপ্ত) মু. মঞ্জুর হোসেন, জেলার মো. এমরান হোসেন মিয়া, ডেপুটি জেলার নওশাদ মিয়া, মো. আখেরুল ইসলাম, সুমাইয়া খাতুন ও ইব্রাহিম এবং কারাগারের পদ্মা ১৫ নম্বর ওয়ার্ড মাস্টারসহ অজ্ঞাত আরও কয়েকজন।

আরও পড়ুন : চট্টগ্রামে কবর নিয়েও ব্যবসা—লাশ দাফনে ৫০ হাজার টাকা!

মামলার অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, গত ২৭ জানুয়ারি দুপুর ৩টার দিকে বোয়ালখালী উপজেলার দক্ষিণ জৈষ্ঠপুরা ৯ নম্বর ওয়ার্ড ৮ নম্বর শ্রীপুর খরণদ্বীপ বেনী মাধবের বাড়ি থেকে বোয়ালখালী থানা পুলিশের একটি দল রুবেলকে আটক করে। এদিন রাত ৯টার দিকে পারিবারিক ফোন নম্বরে কল করে রুবেলের মাধ্যমে ২ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করে বোয়ালখালী থানা পুলিশ। অন্যথায় ৫০০ লিটার মদ উদ্ধারের মামলা সাজিয়ে তাকে আদালতে পাঠানোর হুমকি দেওয়া হয়। কিন্তু রুবেলের পরিবারের চাহিদামতো টাকা দিতে পারেনি।

এরপর বোয়ালখালী থানার এসআই এসএম আবু মুসা বাদী হয়ে ২০০ লিটার চোলাই মদ উদ্ধারের মামলা করেন রুবেলের বিরুদ্ধে। মামলায় সাক্ষী রাখা হয় বোয়ালখালী ৫ নম্বর ইউপি সদস্য মো. হাসান চৌধুরী ও দক্ষিণ জৈষ্ঠপুরা ৯ নম্বর ওয়ার্ডের চৌকিদার জয় চক্রবর্তীকে। পরদিন এসআই রিযাউল জব্বার আদালতে নিয়ে যান রুবেলকে। ২৮ জানুয়ারি আদালতের নির্দেশে রুবেলকে কারাগারে পাঠানো হয়। তবে রুবেলের শরীরে আঘাতের বিষয়টি গোপন করে তাকে আদালতে হাজির করা হয়েছিল। একইদিন সন্ধ্যা ৬টার দিকে প্রিজনভ্যানে করে তাকে আহত অবস্থায় কারাগারে নেওয়া হয়।

পরবর্তীতে ২ ফেব্রুয়ারি স্বজনরা কারাগারে রুবেলকে দেখতে যান। সেদিন হুইলচেয়ারে করে স্বজনদের সামনে রুবেলকে আনা হয়। এ সময় তার শরীরের বিভিন্ন অংশে আঘাতের চিহ্ন দেখতে পান স্বজনরা। তার মুখ থেকে লালা পড়ছিল। এ বিষয়ে কারারক্ষীদের কাছে জানতে চাইলে তারা সদুত্তর না দিয়ে রুবেলের স্বজনদের তাড়িয়ে দেন।

এরপর কারাগার থেকে ফিরে গত ৪ ফেব্রুয়ারি আইনজীবীর মাধ্যমে রুবেলের উন্নত চিকিৎসার জন্য আদালতে আবেদন করেন। তবে সেই আদেশ আসার আগেই ৫ ফেব্রুয়ারি সকাল ৮টার দিকে রুবেলের মৃত্যু সংবাদ আসে পরিবারের কাছে। এসময় জানানো হয়, রুবেলের মরদেহ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে রয়েছে।

রুবেলের মাসতুতো ভাই রকেট দত্ত রাজিব আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, ২ লাখ টাকা চাওয়ার ফোনকলটি ছিল রুবেলের সঙ্গে তার মায়ের শেষ কথা।

আরএস/আরবি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!