ঘটনাবহুল সীতাকুণ্ডে ৪ প্রার্থী আটক−৩ কেন্দ্রে ভোট স্থগিত, আওয়ামী লীগের হ্যাটট্রিক

সীতাকুণ্ডে ভোটকেন্দ্র দখলের চেষ্টা, পুলিশের ওপর হামলা, ব্যালট ছিনতাইসহ সংঘর্ষের মধ্যদিয়ে সম্পন্ন হলো ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন। তবে ভোটগ্রহণের পরিবেশ না থাকায় ৩টি কেন্দ্রের ভোট স্থগিত করা হয়েছে।

বারইয়াঢালায় রেহান উদ্দিন রেহান, বাড়বকুণ্ডে ছাদাকাত উল্ল্যাহ মিয়াজী, সলিমপুরে সালাউদ্দিন আজিজ চেয়ারম্যান হিসেবে বিজয়ী হয়েছেন। তাঁরা সবাই আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী। এছাড়া বাঁশবাড়িয়ার দুই কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়েছে। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত বিজয়ীদের ভোটসংখ্যা জানা যায়নি।

এদিকে বৃহস্পতিবার (১১ নভেম্বর) সকাল ৮টা থেকে সীতাকুণ্ডের ৯টি ইউনিয়ন পরিষদের ভোটগ্রহণ শুরু হয়। তবে ভোর থেকেই উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, সন্ত্রাসী মহড়া, মহাসড়ক অবরোধসহ নানা অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে।

সরেজমিন দেখা যায়, প্রত্যেক কেন্দ্রে ভোটারের উপস্থিতি বেশি ছিল। কিছু কিছু প্রার্থী ভোটারদের সরিয়ে কেন্দ্র দখলের চেষ্টা চালায়। এতে বিভিন্ন স্থানে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়।

স্থানীয়রা বলেন, ভোর আনুমানিক ৫টার দিকে সোনাইছড়ি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে চার সাধারণ সদস্য প্রার্থীর সমর্থকরা অবস্থান নিলে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। এ সময় প্রার্থীদের সমর্থকরা বাকবিতণ্ডা থেকে সংঘর্ষে লিপ্ত হলে একপক্ষ জোড়াআমতল এলাকার ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে। এক ঘণ্টা পর পুলিশ ও বিজিবি ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে এবং চার সাধারণ সদস্য প্রার্থীকে আটক করে।

এরপর সকাল ১০টার দিকে দুই সাধারণ সদস্য প্রার্থীর সমর্থকরা সোনাইছড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র দখলের উদ্দেশ্যে জড়ো হতে থাকলে পুলিশ তাদের ধাওয়া করে।

আরও পড়ুন : ভোট শুরুর আগেই সীতাকুণ্ডে সংঘর্ষ—দুই যুবক আটক, সঙ্গে ১০ পেট্রলবোমা

বেলা ১২টার পর থেকে উত্তেজনা বাড়তে থাকে বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রেও। এ সময় এলাকা থেকে আগ্নেয়াস্ত্রসহ একজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। বেল সাড়ে ১২টার পর ইউনিয়ন পরিষদ কেন্দ্রে হামলা করে বিদ্রোহী প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকরা। ইউনিয়ন পরিষদে ব্যাপক ভাঙচুর চালায় তারা। সন্ত্রাসীদের বাধা দিতে গিয়ে আহত হন সদস্য প্রার্থী শাহাদাত হোসেন কামরুল ও উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. শিহাব উদ্দিন।

বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাঁশবাড়িয়া উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে হামলা হলে বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকরা কেন্দ্র দখলের চেষ্টা করে। এ সময় তারা ব্যালট পেপারের ৩টি বই ছিনিয়ে নেয়। ঘটনাস্থলে দুপক্ষের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও গুলিবিনিময় হয়।

৭ নম্বর ওয়ার্ডের বোয়ালিয়াকূল ফোরকানিয়া মাদ্রাসায় হানা দিয়ে ব্যালট ছিনিয়ে নেয় এক সদস্য প্রার্থীর সমর্থকরা। হামলায় আহত হন দুই পুলিশ কনস্টেবলও। তাদের দুটি অস্ত্র ভাঙচুর করা হয়।
এসব কারণে বাঁশবাড়িয়া ৩ নম্বর ওয়ার্ডের উচ্চ বিদ্যালয় ও ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বোয়ালিয়াকূল বায়তুল উলুদ ইসলামীয়া আদর্শ এতিমখানা কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়।

এছাড়া বিভিন্ন স্থানে ৪ জন গুলিবিদ্ধসহ প্রায় ১৪ জন আহত হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
সীতাকুণ্ড থানার ওসি (তদন্ত) সুমন বণিক আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, বিভিন্ন স্থানে প্রার্থীদের সমর্থকরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। তাতে গুলিতে কেউ আহত হয়েছে কিনা আমাদের জানা নেই। পুলিশ কোথাও গুলি চালায়নি। বরং কিছু প্রার্থীর সমর্থক পুলিশের ওপর হামলা চালিয়েছে। ব্যালটও ছিনিয়ে নিয়েছে তারা। পুলিশ শুধু ধাওয়া করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেছে।

সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শাহাদাত হোসেন আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, মুরাদপুর ইউনিয়নের পেশকারপাড়া এলাকায় কয়েকটি জালভোটের কথা শোনা গেছে। বাঁশবাড়িয়ায় ৩ নম্বর ও ৭ নম্বর ওয়ার্ডের দুটি কেন্দ্রে ব্যালট ছিনতাই করায় ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়েছে। এছাড়া সদস্য প্রার্থীদের সমর্থকরা নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষ করে মহাসড়ক অবরোধ করায় চার সদস্য প্রার্থীকে আটক করা হয়েছে। তবে বড় ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেনি।

সালাউদ্দিন/ডিসি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!