ঈদের পরের ‘করোনা’ নিয়ে শঙ্কায় বিশেষজ্ঞরা

কয়েকদিন ধরে পশুর হাটে ছিল ক্রেতার ঢল। আর এখন স্টেশনে স্টেশনে ঘরমুখো যাত্রীর ঢল। রাস্তায় বের হওয়ার মানুষের বেশিরভাগের মুখেই নেই মাস্ক। কোনোখানেই পালন হচ্ছে না সামাজিক দূরত্ব। এ অবস্থায় ঈদের পরের ‘করোনা’ নিয়ে শঙ্কিত বিশেষজ্ঞরা।

চট্টগ্রামে করোনার ‘ভয়ঙ্কর’ সংক্রমণ এবং মৃত্যুর মিছিলের পরও স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না অসংখ্য মানুষ। অনেকের মুখে মাস্ক নেই। আবার এমনও মানুষ আছেন যাদের মাস্ক থাকলেও তা থুনতিতে কিংবা গলায় ঝুলছে। আর সামাজিক দূরত্ব, সে তো কথার কথা। করোনার অতিমারিতে যাত্রাপথে সবার মাঝে যেন ‘ডোন্ট কেয়ার’ ভাব।

সরেজমিন নগরের বহদ্দারহাট, বিআরটিএ, একেখান মোড়, শাহ আমানত ও অক্সিজেন এলাকার বাস কাউন্টার ঘুরে দেখা গেছে, ঘরমুখো মানুষের উপচেপড়া ভিড়। এদের মধ্যে মাস্কবিহীন মানুষের সংখ্যাই ছিল বেশি। সামাজিক দূরত্ব ছিল না বললেই চলে। সরকারি সব নির্দেশনা এখানে কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ।

এসব এলাকার রাস্তা থেকে শুরু করে বাস কাউন্টার সবখানেই ছিল মানুষের জটলা। কার আগে কে কাটবেন টিকিট, কত আগে বাসে উঠা যায় তা নিয়ে ছিল তুমুল প্রতিযোগিতা।

এর আগে করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সর্বশেষ দুই সপ্তাহের বিধিনিষেধ দেওয়া হলেও কোনো ইতিবাচক প্রভাব পড়েনি। বিধিনিষেধ শিথিলের পর পবিত্র ঈদুল আজহার জন্য পশুর হাটগুলোতে প্রায় প্রতিদিনই ছিল হাজার হাজার মানুষ ভিড়। সেই সঙ্গে বেড়েছে শহর ছেড়ে গ্রামের বাড়ির যাওয়ার প্রবণতা।

কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে আজও মঙ্গলবার নগরের শাহ আমানত ব্রিজ এলাকায় দেখা গেছে মানুষের জনস্রোত। গাড়ির জন্য রাস্তায় দাঁড়ানো শত শত মানুষের অপেক্ষা সামাজিক দূরত্ব ভুলে। মাস্কবিহীন যাত্রী, চালক হেলপার ও সাধারণ মানুষের সংখ্যা কম ছিল না।

এছাড়া নগরে অক্সিজেন মোড়, বহদ্দারহাট এলাকার যাত্রাপথে ছিল প্রায় একই চিত্র। যাত্রাপথের সবখানেই চোখে পড়েছে স্বাস্থ্যবিধি না মানার ভয়াবহ চিত্র।

স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করে শাহ আমানত সেতু সংলগ্ন এলাকায় যাত্রীদের ভিড় : আলোকিত চট্টগ্রাম

এ অবস্থায় শঙ্কার কথাই শুনিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, সহসাই সংক্রমণ পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ার আশা নেই। বরং ঈদের পর অবস্থার আরও অবনতি হতে পারে। কারণ সাধারণ মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মানার ব্যাপারে এখনো উদাসীন।

চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন সেখ ফজলে রাব্বি আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, গত লকডাউনে তেমন ইতিবাচক প্রভাব পড়েনি। পশুরহাটে যেভাবে লোকসমাগম হয়েছে, সংক্রমণে তার প্রভাব দেখা যাবে ঈদের পরে। এখন বাড়ি যাওয়া মানুষের ভিড় বিভিন্ন স্টেশনে। মানুষের মাঝে স্বাস্থ্যবিধি মানার ব্যাপারে এখনো উদাসীনতা লক্ষ্য করছি।

তিনি বলেন, আমরা যে কাজই করিনা কেন অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি মেনে করতে হবে। তা না হলে করোনার সংক্রমণ আরও বাড়তে পারে। বর্তমানে হাসপাতালে করোনা রোগীর সংখ্যা অনেক বেশি। তাই বাড়ির বাইরে গেলে সবাইকে মাস্ক পড়ার পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।

এদিকে সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রামে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ৭২ হাজার ছাড়িয়েছে। এদের মধ্যে নগরে আক্রান্ত ৫৫ হাজার ৮২ জন এবং উপজেলায় ১৭ হাজার ৫১০ জন। এ পর্যন্ত করোনায় মৃত্যু হয়েছে ৮৫৬ জনের। যার মধ্যে ৫২৬ জন এবং ৩৩০ জন উপজেলার বাসিন্দা।

গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৯২৫ জন। মারা গেছেন রেকর্ড ১৫ জন।

আলোকিত চট্টগ্রাম

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!