এলাকায় তিনি পরিচিত স্কুলশিক্ষক হিসেবে। কিন্তু মহান এই পেশার আড়ালে তিনি ‘বাণিজ্য’ করেন ইয়াবার। চট্টগ্রামে ইয়াবার অন্যতম যোগানদাতাও তিনি।
তাঁর ‘পরিচয়’ একটি মোবাইল নম্বর। যে নম্বরে ফোন করলেই তিনি হাজির হন ইয়াবা নিয়ে। আর ইয়াবার ডেলিভারি হওয়ার পরপরই পাল্টে ফেলেন সেই নম্বর। ইয়াবাবাণিজ্যে তাঁর পরিচয় ‘দুলাভাই’ হিসেবে। যদিও তাঁর আসল নাম জয়নাল আবেদীন।
দুলাভাই পরিচয়ের স্কুলশিক্ষক জয়নাল আবেদীনের এবার আর শেষ রক্ষা হয়নি। এলাকার কেউ না চিনলেও তাঁকে ঠিকই চিনেছে পুলিশ, ইয়াবাসহ ধরেছে হাতেনাতে।
মঙ্গলবার (১০ আগস্ট) গভীর রাতে নগরের দেওয়ানহাট মোড় থেকে ১ হাজার ৭০০ পিস ইয়াবাসহ তাঁকে আটক করে ডবলমুরিং থানা পুলিশ। এ সময় তাঁর কাছ থেকে নগদ সাড়ে আট লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়।
পরে জয়নুলের দেওয়া তথ্যে তাঁর বাাসা নগরের বায়েজিদ বোস্তামির হাজীরপুল এলাকায় অভিযান চালায় পুলিশ। তাঁর বাসা থেকে উদ্ধার করা হয় আরও ২০ হাজার ইয়াবা। এ সময় দু’জনকে আটক করে পুলিশ। এর মধ্যে একজন জয়নুলের শ্যালক মো. মোবারক হোসেন (২৭)। অন্যজন মো. রেজাউল করিম দিদার (৩১)।
আরও পড়ুন: দুই বছর ধরে ছাত্রীকে যৌন হয়রানি করছিলেন প্রাইভেট শিক্ষক রনজিত
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (পশ্চিম) পংকজ দত্ত বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে মঙ্গলবার রাতে দেওয়ানহাট মোড়ের মুম্বাই সুইটস দোকানের সামনে থেকে জয়নাল আবেদীন প্রকাশ দুলাভাইকে আটক করা হয়। পরে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আরও দুই সহযোগীকে আটক করা হয়। তাদের কাছ থেকে মোট ২১ হাজার ৭০০ পিস ইয়াবা এবং নগদ সাড়ে আট লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে।
ডবলমুরিং থানার ওসি মোহাম্মদ মহসীন জানান, জয়নাল আবেদীন ইয়াবার গডফাদার। তাকে সবাই চেনেন দুলাভাই নামে। চট্টগ্রাম থেকে ইয়াবার অন্যতম প্রধান যোগানদাতা তিনি। তার আসল নাম কেউ জানে না। তাকে কেউ কখনও দেখেনি। শুধুমাত্র একটি মোবাইল নম্বরই ছিল নির্দিষ্ট সময়ের পরিচয়। সেই নম্বরে ফোন করলেই তিনি ইয়াবা নিয়ে হাজির হতেন। ইয়াবা দিয়ে সেই নাম্বার আবার দ্রুত পাল্টে ফেলতেন। দুদিন আগে প্রায় ২২ হাজার পিস ইয়াবাসহ চালক-হেলপারকে আটকের পর উঠে আসে এ দুলাভাইয়ের নাম।
তিনি জানান, মঙ্গলবার রাতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে দেওয়ানহাট মোড়ে ১ হাজার ৭০০ পিস ইয়াবাসহ তাকে আটক করা হয়। পরে তার দেওয়া স্বীকারোক্তি অনুযায়ী বায়েজিদ বোস্তামি থানার হাজীরপুল এলাকায় তার বাসায় অভিযান চালানো হয়। বাসার আলনার নিচে লুকিয়ে রাখা একটি শপিং ব্যাগ থেকে উদ্ধার করা হয় আরও ২০ হাজার ইয়াবা। এ সময় আটক করা হয় তার দুই সহযোগী মো. মোবারক হোসেন ও মো. রেজাউল করিম দিদারকে।
ওসি মহসীন আরও জানান, ইয়াবার গডফাদার হলেও জয়নুলের ইয়াবা বাণিজ্যের কথা এলাকাবাসী জানে না। এলাকায় তিনি স্কুলশিক্ষক হিসেবে পরিচিত। তিনি কুরুসকুল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন। এর আগেও একবার ইয়াবাসহ আটক তিনি।
জয়নাল আবেদীন প্রকাশ দুলাভাই কক্সবাজার জেলার কুতুবদিয়া থানার জুলহারপাড়া গ্রামের মো. সিদ্দিক আহমেদের ছেলে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জয়নুল জানান, তিনি মূলত কক্সবাজার থেকে ইয়াবা এনে নিজের কাছে মজুদ করেন। এরপর তা সারাদেশে বিক্রি করেন।
জাহেদ/আরবি