৪ সেতু পাল্টে দিয়েছে দক্ষিণ চট্টগ্রামের যাতায়াত

পাল্টে গেছে দক্ষিণ চট্টগ্রামের যাতায়াত ব্যবস্থা। এ বদলে যাওয়ার নেপথ্যে চার সেতু। এসব সেতুর সুফল পাচ্ছে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ।

দক্ষিণ চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলার পেকুয়া, মহেশখালী ও কুতুবদিয়াসহ দক্ষিণ অঞ্চলের যাতায়াতের রোড় হিসেবে ব্যবহার হয় আনোয়ারা উপজেলা। মূলত শাহ্ আমানত সেতুর পরই কর্ণফুলী উপজেলা হয়ে দক্ষিণ চট্টগ্রামের প্রবেশপথ আনোয়ারা।

জানা যায়, দক্ষিণ অঞ্চলের পিএবি সড়ক, পটিয়া-আনোয়ারা আরকান সড়ক, আরকান সংযুক্ত পিএবি সড়কে রয়েছে দক্ষিণ চট্টগ্রামসহ এসব উপজেলা। উপজেলার সংযুক্তিতে রয়েছে বেশ কিছু সেতু। যার মধ্যে অন্যতম বাঁশখালী পিএবি সড়কের তৈলারদ্বীপ সেতু, আনোয়ারা পটিয়া আরকান সড়কের মুরালী সেতু, পটিয়া আনোয়ারা কালীগঞ্জ সেতু এবং আরকান সংযুক্ত আনোয়ারা চন্দনাইশের পিএবি সড়কের বরকল সেতু। একমাত্র তৈলারদ্বীপ সেতু ছাড়া এখানে গত পাঁচ বছর আগেও ছিল না অন্য তিন সেতু। জোড়া তালি দেওয়া কালীগঞ্জ, বরকল বেইলী ব্রিজ থাকলেও মুরালী খালে যাতায়াতে ভরসা ছিল শুধুই সাম্পান।

আরও পড়ুন: পদ্মার আদলে হবে স্বপ্নের কালুরঘাট সেতু

দক্ষিণ চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলার হাজার হাজার যাত্রীর যাতায়াত ব্যবস্থা ওই দুসড়ক। কিন্তু এসব উপজেলার সংযুক্ত স্থানে সেতু না থাকায় ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতেন এসব অঞ্চলের যাত্রীরা। পিএবি সড়কে তৈলারদ্বীপ সেতু মূলত দক্ষিণ চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলার বেশ কয়েকটি উপজেলার মূল সড়ক হিসেবে ব্যবহার হয়। এছাড়া আরকান সংযুক্ত আনোয়ারা চন্দনাইশ পিএবি সড়ক কক্সবাজার আরকান সড়কের বিকল্প।

অন্যদিকে পটিয়া শান্তিরহাট হয়ে আনোয়ারা রোড়ের কালীগঞ্জ সেতুর ব্যবহার সহজ করেছে দক্ষিণ চট্টগ্রামের যাতায়াত। পাঁচ বছর আগে এসব সেতু না থাকায় ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হতো অসংখ্য মানুষকে।

এদিকে বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় মেগা প্রকল্প টানেল উদ্বোধনের অপেক্ষায়। টানেল ঘিরে ইতোমধ্যে আনোয়ারা হচ্ছে বাণিজ্যিক বাজার। এই মেগা প্রকল্প ঘিরে আনোয়ারার চার সংযোগ সড়কের তিন খালে নির্মাণ করেছে সংযোগ সেতু। যা আনোয়ারার অর্থনীতিসহ দক্ষিণ চট্টগ্রামের যাতায়াত ব্যবস্থাকে সহজাত ও ঝুঁকিমুক্ত করেছে বলে মনে করছেন স্থানীয় সচেতন মহল।

এছাড়া কক্সবাজারের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও সহজতর হবে বলে মনে করছেন সেতু সংশ্লিষ্টরা। ফলে পাল্টে যাবে দক্ষিণ চট্টগ্রামের আর্থসামাজিক অবস্থা।

দক্ষিণ চট্টগ্রামের সংযুক্ত এই চার সেতু হলো— শঙ্খ খালের ওপর তৈলারদ্বীপ সেতু, মুরালী-শিকলবাহা খালের ওপর কালীগঞ্জ সেতু, মুরালী বরকল খালের ওপর মুরালী সেতু এবং সর্বশেষ নির্মিত চাঁনখালী খালের ওপর বরকল সেতু।

তৈলারদ্বীপ সেতু : পাঁচ বছর আগেও আনোয়ারার সঙ্গে সংযুক্ত একমাত্র সেতু ছিল এটি। ১৯৯৯ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চট্টগ্রাম-কক্সবাজারের বিকল্প সড়ক হিসেবে পরিচিত আনোয়ারা-বাঁশখালী সীমান্তে শঙ্খ নদীতে তৈলারদ্বীপ সেতুর ভিত্তি স্থাপন করেন। ২০০৫ সালের শেষদিকে এসে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া সেতুটির উদ্বোধন করেন। এই সেতুর উদ্বোধনের মাধ্যমে আনোয়ারা পিএবি সড়ক হয়ে দক্ষিণ চট্টগ্রামসহ কক্সবাজার জেলার নতুন সংযোগ সড়কের দিগন্তের সূচনা হয়। বর্তমানে এই রোড় দিয়ে পাঁচটি পৃথক কোম্পানির গাড়ি সার্ভিস রয়েছে।

কালীগঞ্জ সেতু : দীর্ঘ দুযুগ পর ২০২১ সালে এসে পূর্ণাঙ্গ রূপ পায় আনোয়ারা-পটিয়া সংযোগ সড়কের কালীগঞ্জ সেতু। দুউপজেলার মধ্যবর্তী সংযোগ স্থাপনকারী মুরালী শিকলবাহা খালের ওপর ৩৭ কোটি টাকা ব্যয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই সেতুটি নির্মাণের ফলে যোগাযোগের ক্ষেত্রে নতুন গিন্তের সূচনা হয়েছে আনোয়ারা ও পটিয়া উপজেলায়। পাশাপাশি আনোয়ারা ও পশ্চিম চন্দনাইশের সঙ্গে পটিয়ার বিরাট একটি অংশের জনগণের যাতায়াত আরও সহজ হয়েছে। ৩৭ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সেতুটি নির্মাণ করেছে সড়ক ও জনপদ বিভাগ (সওজ)।

মুরালী সেতু : চট্টগ্রামের পটিয়া ও আনোয়ারা উপজেলাবাসীর বহুল প্রত্যাশিত আরেক সেতু হচ্ছে মুরালী সেতু। ২০১৯ সালের ১৭ জুলাই শুরু হয় এই সেতুর কাজ। সেতু নির্মাণের আগে এই খালে যাতায়াতের একমাত্র ভরসা ছিল সাম্পান। বর্তমানে অত্যাধুনিক পিসি গার্ডার সেতুটির ৩০.৬৩ কোটি ধরা হলেও এতে ব্যয় হয়েছে প্রায় ২৬ কোটি টাকা।

বরকল সেতু : সর্বশেষ দক্ষিণ চট্টগ্রামের গুরুত্বপূর্ণ যে সেতু ভূমিকা রাখে তা হচ্ছে বরকল সেতু। এই সেতু নির্মাণের ফলে আরকান সংযুক্ত পিএবি সড়কের যাতায়াতকে করেছে ঝুঁকিমুক্ত। ১৯৯৪ সালে ১ কোটি টাকা ব্যয়ে বেইলী সেতু নির্মাণ করে সড়ক ও জনপদ বিভাগ।

আরও পড়ুন: কর্ণফুলীর এক পাশে চর, অন্য পাশে বাড়ছে গভীরতা—হুমকিতে শাহ আমানত সেতু

আনোয়ারার এই চার সেতু নির্মাণের ফলে কী প্রভাব পড়বে তা নিয়ে কথা হয় সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সুমন সিংহের সঙ্গে। তিনি আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, দেশের সবচেয়ে বড় প্রকল্প টানেল অর্থনৈতিক এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করে আনোয়ারা সংযোগ সড়ক ও সেতুগুলো নির্মাণ করা হয়েছে। এর মধ্যে আনোয়ারা চলাচলে ঝুঁকিমুক্ত হবে এবং দক্ষিণ চট্টগ্রামের যাতায়াতে বিকল্প হিসেবে আনোয়ারা আরো সহজাত হবে।

আনোয়ারা উপজেলা চেয়ারম্যান তৌহিদুল হক চৌধুরী বলেন, বর্তমানে আনোয়ারা একটি অর্থনৈতিক জোন। এটি একটি পর্যায়ে দেশের অর্থনৈতিক আঞ্চলিক বাজারে পরিণত হবে। উন্নয়নের মূল ভূমিকা হচ্ছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। পাশাপাশি এসব সেতুর মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু টানেলের সাথে সরাসরি সংযুক্ত হতে পারবে পটিয়া, চন্দনাইশ, লোহাগাড়া, সাতকানিয়া উপজেলাসহ পুরো দক্ষিণ চট্টগ্রাম। সবমিলিয়ে পাল্টে যাবে দক্ষিণ চট্টগ্রামের আর্থসামাজিক অবস্থা।

এসআই/আলোকিত চট্টগ্রাম

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!