‘সেই জহিরুল’—যুবলীগ নেতার তকমায় হালিশহরে ‘ক্ষমতার জোর’

এলাকায় তাঁর পরিচয় ‘যুবলীগ নেতা’। যদিও কোথাও যুবলীগের কোনো পদে নেই তিনি। তবে যুবলীগের নাম ভাঙিয়েই তিনি ক্ষমতার জোর দেখান নগরের হালিশহরে।

জায়গা দখল, পুলিশের ভয় দেখানো, নিরীহ মানুষকে মামলায় ফাঁসানোসহ অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। কেউ তাঁর নির্দেশের বাইরে গেলে হতে হয় নির্যাতিত। এতসব অপকর্ম করেও ধরাছোঁয়ার বাইরে তিনি।

অভিযোগের এই তীর হালিশহর থানার বড়পোল এলাকার সুন্দরীপাড়ার বাসিন্দা জহিরুল আলমের বিরুদ্ধে। অভিযোগ রয়েছে, হালিশহরে দখল বাণিজ্যের মূলহোতা তিনি। আধিপত্য বিস্তারে তাঁর রয়েছে শক্তিশালী চক্র।

নগরের হালিশহরের আর্টিলারি সড়কে ঢুকতেই দেখা মিলে একটি ব্রিজের। সেই ব্রিজের ঠিক বাম পাশের একটি গলিতে রয়েছে কবরস্থান।

স্থানীয়রা জানান, মুক্তিযুদ্ধের সময় এই কবরস্থানের পাশে দুই বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। তাদের স্মৃতিরক্ষায় ১৩ বছর আগে আওয়ামী পরিবারের এক সন্তান তাদের দুজনের নামে দুটি কবরস্থান নির্মাণ করেন। কিন্তু নির্মাণের দুবছরের মধ্যে ক্ষমতার জোর দেখিয়ে সেই কবর ভেঙে ফেলেন জহিরুল আলম। এ নিয়ে এলাকার কয়েকজন বাধা দিলে গেলে তাদের করা হয় মারধর। দেওয়া হয় মিথ্যা মামলার হুমকি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকার একজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, যিনি এই কবর ভেঙেছেন তিনি এলাকায় এখন আওয়ামী লীগের খোলস পড়ে ঘুরে বেড়ান। অথচ তার পুরো পরিবার জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত।

আরেক বাসিন্দা বলেন, দুই বীর মুক্তিযোদ্ধার স্মৃতিরক্ষায় স্থানীয় এক ব্যক্তি দুজনের নামে দুটি কবরস্থান নির্মাণ করে দেন। কিন্তু এই জায়গা দখলের পাঁয়তারা শুরু করেন জহিরুল। একপর্যায়ে ক্ষমতা দেখিয়ে কবর দুটি ভেঙে দেন তিনি। এ নিয়ে কয়েকজন বাধা দিতে গেলে তাদের ওপরও হামলা চালান জহিরুলসহ তার সাঙ্গপাঙ্গরা।

এদিকে গত ৪ নভেম্বর বড়পোলের পূর্ব সুন্দরীপাড়ার আবিদা সুলতানা (৩৭) থানায় জিডি করেছেন জহিরুল আলমের বিরুদ্ধে। ওই নারীর অভিযোগ— জহিরুল তাঁর জমি জোর করে দখল করেছেন, বাধা দেওয়ায় তাঁকে প্রাণনাশের হুমকিও দিয়েছেন।

যোগাযোগ করা হলে ভুক্তভোগী আবিদা সুলতানা আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, জহিরুল আলম তার পোষা সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে দীর্ঘদিন আমাদের সম্পত্তি হাতিয়ে নেওয়ার পাঁয়তারা করে আসছে। কয়েকদিন আগে সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে হঠাৎ আমার বাসার সামনে আসে। এরপর আমার স্বামী নাছির উদ্দিনকে সম্পত্তি লিখে দিতে চাপ দেয়। এ সময় আমি গিয়ে বাঁধা দিতে গেলে আমাকে ও আমার পরিবারকে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। তাই কোনো উপায় না পেয়ে থানায় অভিযোগ করি।

এদিকে সুন্দরীপাড়ার এলাকার মো. খোকন নামের এক স্থানীয় বাসিন্দার অভিযোগ, জহিরুল একজন ছদ্মবেশী গডফাদার। তাই এতো অপকর্মের পরও ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকেন তিনি।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে জহিরুল আলম আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, ‘আমি কোনো বীর মুক্তিযোদ্ধার কবর ভাঙিনি। সব ভুয়া ও মিথ্যা কথা। আপনি সরেজমিন এসে দেখতে পারেন।’

এরপর মোবাইল সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন তিনি। পরে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।

এ ব্যাপারে দৃষ্টি আর্কষণ করা হলে হালিশহর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জহির উদ্দিন আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, জহিরুল নামের এক যুবলীগ কর্মী আছেন শুনেছি। তবে তিনি মাদক ব্যবসা সঙ্গে জড়িত কিনা জানি না। আপনার কাছ থেকেই জানলাম। তার বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে নজরদারিতে রাখা হবে।

আরবি/আলোকিত চট্টগ্রাম

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!