সিএমপির বন্দর—ইপিজেড থানা কন্ট্রাক্টেও ‘সাংবাদিক’, অবৈধ স্পট থেকে নেন চাঁদাও

চট্টগ্রাম নগর পুলিশের (সিএমপি) বন্দর ও ইপিজেড থানার ওসির সঙ্গে তাঁর খুব ভাব। যেকেউ চাইলে মাসোহারার বিনিময়ে ওসির সঙ্গে কন্ট্রাক্ট করে দেওয়া তাঁর বাঁ হাতের খেল। মাদক বা দেহ ব্যবসায়ী—সে যেই হোক, প্রতিটি স্পট থেকে তাঁকে দিতে হবে চাঁদা।

বলছিলাম ‘দৈনিক আমার প্রাণের বাংলাদেশ’ নামের পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার পরিচয় দেওয়া মো. খায়রুল হাসানের কথা। তাঁর সঙ্গে বিভিন্ন অপরাধে জড়িত বেশ কছু মানুষের সঙ্গে কথোপকথনের রেকর্ড শুনে পাওয়া গেছে এসব তথ্য।

তবে সিএমপির গুরুত্বপূর্ণ দুথানা কর্মকর্তাদের দাবি, তাদের কেউ খাইরুল হাসানকে চেনেন না। কোথাও এমন দাবি করলে তাকে ধরিয়ে দেওয়ারও পরামর্শ দেন তারা।

প্রতিবেদকের হাতে আসা চারটি কলরেকর্ডে শোনা গেছে, পতিতাবৃত্তি করা দুনারীকে ফোন দেন কথিত সাংবাদিক মো. খায়রুল হাসান। ফোন করে তাদের একজনকে তার সঙ্গে দেখা করতে বলেন। কেন দেখা করবে— এমন প্রশ্নের জবাবে খায়রুল হাসান বলেন, তোমরা দেহ ব্যবসা কর, সাংবাদিক কেন ফোন করে জানো না? ডিবি, পুলিশ ও সাংবাদিককে তোমরা টাকা দাও না? ব্যবসা করলে আমার সঙ্গে দেখা কর। না হলে সমস্যা হবে।

আরেকটি রেকর্ডে এক দেহ ব্যবসায়ীর সঙ্গে থানার ওসির মাসোহারা ঠিক করে দেওয়ার কথা হয় কথিত এই সাংবাদিকের। তখন তিনি বলেন, তোমাকে বন্দর থানায় ঠিক (কন্ট্রাক্ট) করে দিলে হবে না? নাকি ইপিজেডে করবা (দেহ ব্যবসা)? যেকোনো থানা ঠিক করে দিতে পারবো। ওসির সঙ্গে আমার সম্পর্ক আছে। এ সময় অপর প্রান্তে থাকা নারী ওসি টাকা খাবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, খাবে মানে? অবশ্যই খাবে।’ এ সময় ওই নারীকে সন্ধ্যার পর রেলবিট বা বাদামতলায় দেখা করতে বলেন তিনি।
স্থানীয়রা জানান, মাস দেড়েক ধরে খায়রুল হাসান নামের ওই ব্যক্তি বন্দর-ইপিজেডে থানার অলি-গলিতে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। টাকা তোলেন বিভিন্ন অবৈধ স্পট থেকে। তিনি নিজেকে কখনো সাংবাদিক, আবার কখনো বন্দর-ইপিজেড থানার ওসিদের ‘কাছের মানুষ’ পরিচয় দেন। কথায় কথায় মানুষকে পুলিশের ভয় দেখান। টাকা না দিলে পুলিশ দিয়ে রেইড (অভিযান) দেওয়ার হুমকিও দেন। মদ, গাঁজা ও দেহ ব্যবসায়ীদের থানার ওসির সঙ্গে কন্ট্রাক্ট করে দেওয়ার কথা বলে টাকা তোলেন তিনি।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মো. খায়রুল হাসান বলেন, ‘এ ধরনের কথা বলার প্রশ্নই ওঠে না। আমি অ্যাকাউন্টিংয়ে মাস্টার্স করেছি। আমিতো ধুর না, যে এমন কথা বলবো।’ এই সময় কলরেকর্ডকে মিথ্যা দাবি করেন তিনি।

খায়রুলের কর্মস্থল দৈনিক আমার প্রাণের বাংলাদেশ পত্রিকার অফিস কোথায় জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রামের অফিস কোথায় জানা নেই। তবে এই পত্রিকার সম্পাদকের এক ভাগিনা চট্টগ্রাম বিভাগীয় প্রধান এবং সম্পাদকের সঙ্গে আমার সম্পর্ক।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহফুজুর রহমান আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, ‘এই নামের কোনো সাংবাদিক আমার থানায় দেখিনি। কেউ চাঁদাবাজির অভিযোগ দিলে মামলা নেওয়া হবে।’ বেআইনিভাবে কোথাও পুলিশ ছাড়া অভিযান করলে আটকে রেখে খবর দেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

অপরদিকে ইপিজেড থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকার্তা (ওসি) আব্দুল করিম আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, খায়রুল হাসান নামের কোনো সাংবাদিক আমি চিনি না। তার রেকর্ড এবং ছবি আমার কাছে পাঠান, বিষয়টি আমি দেখছি।

আলোকিত চট্টগ্রাম

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!