শিকলের নিষ্ঠুর বাঁধনমুক্ত জীবনের পথ খুঁজছে শিশু আবদুল্লাহ

শিশু মোহাম্মদ আবদুল্লাহর বয়স ১০ বছর। এ বয়সে আর দশজন শিশুর মতো তারও স্কুলে যাওয়ার কথা। কিন্তু সাত বছর বয়সেই তাকে পরানো হয় লোহার শিকল। পা থেকে কোমর পর্যন্ত প্রায় ৫ ফুট লম্বা শিকল নিয়ে জীবনের তিনটি বছর পার করে আসছে সে। শিকলে বাঁধা অবস্থাতেই তার খাওয়া, গোসল, ঘুমানোসহ যাবতীয় কাজ করতে হয়। বন্দী অবস্থায় একদিনের জন্যও শিকলের বাঁধন থেকে মুক্তি মেলেনি তার।

কক্সবাজার পৌরসভার ১ নং ওয়ার্ডের ঝরঝরিপাড়ার ফরিদ আহমেদ ও নুর বানুর কনিষ্ঠ ছেলে মোহাম্মদ আবদুল্লাহ। পাঁচ ভাই এক বোনের মধ্যে সে সবার ছোট।

গত ২৪ ফেব্রুয়ারি তার বাড়িতে গেলে সাক্ষাৎ হয় আবদুল্লাহর সঙ্গে। কথা হলে সে জানায়, দীর্ঘদিন থেকে তাকে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে। কেন বেঁধে রাখা হয়েছে এমন প্রশ্নে সে বলে, আমি চলে যাই সেজন্য বেঁধে রাখে।

এরপর কাতর কণ্ঠে বলে, আমাকে খুলে দিলে আমি আর কোথাও যাবো না। আমি ভালো হয়ে যাবো।

আবদুল্লাহর পায়ে এবং কোমরে বড় আকারের পাঁচ ফুটের একটি শিকল পেঁচানো। শিকলের সঙ্গে কোমর ও পায়ে দুটি বড় তালা। কখনো সে দাঁড়িয়ে থাকছে, কখনো বসে কাটাচ্ছে সময়।

শিকলের আঘাতে তার হাতে ও পায়ে সৃষ্টি হয়েছে ক্ষত। শিকলে মোড়ানো ডান পা চিকন হয়ে গেছে। হাঁটুর নিচে কালো দাগ পড়ে গেছে।

আবদুল্লাহর বাবা ফরিদ আহমেদ বলেন, আবদুল্লাহকে আগে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হতো না। তখন সে সারাদিন ঘরের বাইরে থাকে। প্রতিদিন তার নামে বিচার আসে। মানুষের কাছে মানসম্মান বলতে আর কিছু নেই। তাই অতিষ্ঠ হয়ে শিকল দিয়ে বেঁধে রেখেছি। মানুষের কথা থেকে রেহাই পেয়েছি।

মা নুর বানু বলেন, বর্তমানে আমার সহায় সম্পদ বলতে তেমন কিছুই নেই। মানুষের দ্বারে দ্বারে হাত পেতে জীবিকা নির্বাহ করি।

আবদুল্লাহর চারজন বড় ভাই রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, তাদের বিয়ে হয়েছে। আলাদা সংসার আছে। আবদুল্লাহ সবার ছোট। তাকে কলাতলী দাখিল মাদ্রাসায় ভর্তি করিয়েছিলাম। অভাবের কারণেই তাকে পড়াতে পারিনি। তার নামে মানুষ বিচার দেয়।

আবদুল্লাহর কথা তুলতেই কান্নায় ভেঙে পড়েন তার মা নুর বানু। বলেন, মানুষের কথা থেকে বাঁচতেই এই পথ বেঁচে নিয়েছি। আমার ছেলের জীবনটা আমার সামনেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এত সরকারি সহযোগিতা আছে শুনেছি, কিন্তু কেউ কোনো সহযোগিতা বা পরামর্শ দেয়নি। আমি অশিক্ষিত মানুষ। কার কাছে গেলে কী হবে তা-ও জানিনা। মাঝেমধ্যে ছেলের দিকে চেয়ে খুব খারাপ লাগে।

কথা বলে জানা যায়, আবদুল্লাহকে তার মা প্রতিদিন সকালে ঘর থেকে শিকলবাঁধা অবস্থায় বের করে আবার রাতে শিকল বাঁধা আবস্থায় ঘরে নিয়ে শুইয়ে দেন। রাতেও বাঁধা থাকে শিকল।

শিকলে বেঁধে রাখলে আবদুল্লাহর মন খুব খারাপ থাকে। দিনভর সে একাকী বসে থাকে। ছেলেকে লেখাপড়া করানোর ইচ্ছা থাকলেও দারিদ্র্যের কারণে তা সম্ভব হয়নি।

এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপপরিচালক হাসান মাসুদ আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা অন্যায়। যেহেতু আপনি বিষয়টি জানিয়েছেন, আমরা সোশাল ওয়ার্কার পাঠাবো। তার বাবা-মা ও তার সাথে কথা বলে কাউন্সিলিং করা যায় কিনা, তাকে লেখাপড়া সুযোগ করে দেয়া যায় কিনা আমরা দেখবো। তারপর একটি সিদ্ধান্ত হয়ত নিতে পারি।

এসআই/আলোকিত চট্টগ্রাম

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!