লোকাল ট্রেন বন্ধ ৫ বছর, ডেমুও—ফেব্রুয়ারির ‘কমিউটার’ কখন চালু হবে তাও অজানা

করোনার সময়ে বন্ধ হওয়া চট্টগ্রাম-দোহাজারী রুটে লোকাল ট্রেন চলাচল চালু হয়নি দীর্ঘ পাঁচ বছরেও। জোড়াতালির একজোড়া ডেমু চলাচলও বন্ধ রয়েছে পাঁচ মাস ধরে। চলতি ফেব্রুয়ারির শুরুতে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার পর্যন্ত একজোড়া কমিউটার ট্রেন চালুর কথা ছিল। কিন্তু এটিও কখন চালু হবে তা নিশ্চিত করতে পারছে না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

এদিকে লোকাল ট্রেন চলাচল বন্ধের কারণে দক্ষিণ চট্টগ্রামের মানুষের যাতায়াত ব্যয় বেড়ে যাওয়াসহ দুর্ভোগের অন্ত নেই। এছাড়া উৎপাদিত ফসল শহরে আনতে না পেরে ক্ষতির মুখে পড়েছে ওই অঞ্চলের হাজারো কৃষক।

রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, সকাল সাড়ে ১০টায় চট্টগ্রাম থেকে দোহাজারী, দুপুর ২টায় দোহাজারী থেকে চট্টগ্রাম ও সন্ধ্যা ৬টায় চট্টগ্রাম থেকে দোহাজারী দুজোড়া লোকাল ট্রেন চলাচল করত। ২০১৯ সালে করোনার কারণে একজোড়া লোকাল ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সেই থেকে এখন পর্যন্ত চালুর কোনো খবর নেই।

এছাড়া সকাল ৬টায় চট্টগ্রাম থেকে পটিয়া ও সকাল ৮টায় পটিয়া থেকে চট্টগ্রাম এবং বিকেল সাড়ে ৫টায় চট্টগ্রাম থেকে দোহাজারী, সকাল সাড়ে ৫টায় দোহাজারী থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত দুজোড়া ট্রেন চলাচল করত। কক্সবাজারে রেল যোগাযোগ স্থাপনে ২০২৩ সালের ১ আগস্ট কালুরঘাট রেলসেতুর সংস্কার কাজ শুরু হয়। এজন্য ওই রুটে চলাচল করা একজোড়া ডেমু ট্রেন বন্ধ রাখা হয়। সেসময় বলা হয়েছিল, কক্সবাজারে রেল যোগাযোগ হওয়ার পর এই রুটে ফের লোকাল ট্রেন চালু হবে। কিন্তু পাঁচ বছর আগে বন্ধ হওয়া একজোড়া লোকাল ও পাঁচ মাস আগে বন্ধ হওয়া একজোড়া ডেমুর কোনোটিই আর চালু হয়নি।

আরও পড়ুন :  সিন্ডিকেটের কবলে চট্টগ্রামে ২ ট্রেনের যাত্রীরা, ‘জিম্মি’ করে প্রতিদিন লাখ টাকার বাণিজ্য

এদিকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারির শুরুর দিকে চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত একজোড়া কমিউটার ট্রেন চালুর কথা থাকলেও সেটিরও খবর নেই। এ ট্রেন চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত প্রতিটি স্টেশনে থামার কথা ছিল। ঢাকা-কক্সবাজার রুটে দোহাজারীর পর আরও নয়টি স্টেশন স্থাপন করা হয়। তবে জনবলসহ বিভিন্ন কারণে সবগুলো স্টেশন পুরোপুরি চালু করা যায়নি। এতে চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার কমিউটার ট্রেন চালু সম্ভব হচ্ছে না। ফলে দোহাজারীসহ দক্ষিণ চট্টগ্রামের মানুষ রেলসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

অন্যদিকে দীর্ঘদিন ধরে এই রুটে ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকার কারণে চট্টগ্রাম শহরে চাকরিজীবীসহ কয়েক হাজার মানুষ সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছেন। নিয়মিত যাতায়াত খরচ ও দুর্ভোগের কারণে অনেকে চট্টগ্রাম শহরে ভাড়া বাসা নিয়ে থাকতে বাধ্য হচ্ছেন। এছাড়া দোহাজারী ও পটিয়াসহ অন্যান্য এলাকায় উৎপাদিত সবজি চট্টগ্রাম শহরে বিক্রির জন্য আনতে না পারায় ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন কৃষক।

বেসরকারি ব্যাংক কর্মকর্তা পটিয়া পাচুরিয়ার বাসিন্দা আবদুল মাবুদ বলেন, প্রতিদিন বাসে যাতায়াতের কারণে খরচ বাড়াসহ দুর্ভোগের শিকার হচ্ছি। আমাদের এলাকা দিয়ে প্রতিদিন রেল কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম যাওয়া-আসা করছে। কিন্তু আমরা রেলসেবা থেকে বঞ্চিত। এই রুটে দ্রুত লোকাল ট্রেন চালুর দাবি জানাই।

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় ব্যবস্থাপক (ডিআরএম) মো. সাইফুল ইসলাম আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, কক্সবাজারে রেল যোগাযোগ চালু হওয়ার পর এই রুটের গুরুত্ব অনেকে বেড়েছে। আগে দোহাজারীর লোকজন রেলসেবা পেলেও এখন কক্সবাজার পর্যন্ত তা বিস্তৃত হয়েছে। সুতরাং আমাদেরকে এখন সেই পর্যন্ত চিন্তা করতে হয়।

তিনি বলেন, চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার কমিউটার ট্রেন চালু হলে সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। তবে কবে নাগাদ এ ট্রেন চালু হবে তা এই মুহূর্তে বলতে পারছি না। রেলভবন থেকে যখন বলা হবে তখন লোকাল ট্রেন চালু করা হবে।

আরবি/আলোকিত চট্টগ্রাম

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!