যে কারণে বাড়ছে কেরু মদের চাহিদা, এবার হবে বিয়ার কারখানাও

মদের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় দেশে উৎপাদন বাড়াচ্ছে কেরু অ্যান্ড কোং। সেই সঙ্গে তারা যাচ্ছে বিয়ার উৎপাদনে।

টানা লোকসানের পর গতবছর প্রতিষ্ঠানটি মদ বিক্রি করে মুনাফা করেছে ১৯৫ কোটি টাকা। গত ছয় মাসে কেরু অ্যান্ড কোংয়ের উৎপাদিত দেশীয় মদের চাহিদা বেড়েছে ৫০ শতাংশ।

বাড়ছে চাহিদা, বাড়ছে বিক্রিও

দেশে কেরু অ্যান্ড কোংয়ের মদের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। বিদেশি মদ কম আমদানি হওয়া এবং দেশে বিভিন্ন প্রজেক্টে বিদেশিদের অবস্থানের কারণে কেরুর চাহিদা বেড়ে গেছে।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর এবং শিল্প মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, দেশে ২০১৬ সাল থেকে বেড়েছে অ্যালকোহলের চাহিদা।

আরও পড়ুন : মদ কেন মাদকদ্রব্য—হাইকোর্টের রুল, ব্যাখ্যা দিতে হবে ৪ সপ্তাহে

কেরু অ্যান্ড কোংয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মোশারফ হোসেন জানান, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৪২ লাখ ৬২ হাজার লিটার মদ বিক্রি হয়েছে। ২০২০-২১ অর্থবছরে হয়েছে প্রায় ৪৭ লাখ লিটার। ২০২১-২২ সালের অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত উৎপাদিত মদের বিক্রি প্রায় ৫০ শতাংশ বেড়েছে।

তিনি আরো জানান, করোনার কারণে চাহিদা অনুযায়ী দেশে আমদানিকৃত বিদেশি মদের সরবারহ অনেক কম। এজন্যই দেশি মদের চাহিদা বাড়ছে।

দেশে করোনা সংক্রমণ কিছু কমার পর মানুষের জীবনযাত্রা স্বাভাবিক হতে শুরু করে। সে সময় আরেক দফা বাড়ে মদের চাহিদা।

দেশের একমাত্র মদ তৈরি প্রতিষ্ঠান কেরু অ্যান্ড কোংয়ে মাসে প্রায় ১৩ হাজার কেস মদ বিক্রি হতো। প্রতি কেসে ৭৫০ মিলিলিটারের ১২টি, ৪৬৫ মিলিলিটারের ২৪টি এবং ১৮০ মিলিলিটারের ৪৮টি  বোতল থাকে।

চলতি বছরের অক্টোবর মাসে সেই বিক্রির সংখ্যা গিয়ে দাঁড়ায় ১৮ হাজারেরও বেশি কেসে। যা নভেম্বরে প্রায় সাড়ে ১৯ হাজার এবং ডিসেম্বরে ২০ হাজারের বেশি কেসে গিয়ে দাঁড়ায়।

এখন বর্ধিত চাহিদা মেটাতে দর্শনার দুটি কারখানাতেই উৎপাদন বাড়িয়েছে কেরু অ্যান্ড কোং।

বিয়ার উৎপাদনে যাচ্ছে কেরু অ্যান্ড কোং

মদের উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি কেরু অ্যান্ড কোং এবার দেশে বিয়ার তৈরির কারখানা স্থাপন করতে যাচ্ছে।

শিল্প মন্ত্রণালয়ও বিয়ার তৈরির কারখানা চালুর উদ্যোগ নিয়েছে। এজন্য ১০২ কোটি টাকার বেশি অর্থ ব্যয়ে একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। যা ২০২২ সালের শেষদিকে চালু হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

কেরুর চাহিদা বাড়ার নেপথ্যে

বাংলাদেশে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, দেশে ২০২০-২১ অর্থবছরে বৈধভাবে ১ লাখ ৫ হাজার লিটার অ্যালকোহল আমদানি হয়েছে। বিয়ার আমদানি হয়েছে, প্রায় দেড় লাখ লিটার।

কিন্তু দেশের বার এবং ওয়্যারহাউজগুলোতে এর চেয়ে কয়েকগুণ বেশি মদ বিক্রি হয়েছে। এই বাড়তি চাহিদার একটা অংশ মিটেছে দেশীয় তৈরি মদে।

আরও পড়ুন : এক বোতল বাংলা মদ কেনা যাবে ২৩ টাকায়

তবে চাহিদা বাড়ার আরেকটি কারণ করোনা। এ মহামারীর কারণে মদ আমদানি অনেক কমে গিয়েছিল। সেই সঙ্গে অনেকদিন বন্ধ ছিল ক্লাব এবং ওয়্যারহাউসগুলো। ফলে যারা নিয়মিত মদ পান করেন তাদের কাছে একমাত্র বিকল্প হয়ে দাঁড়ায় কেরু অ্যান্ড কোংয়ের মদ।

এক নজরে কেরু অ্যান্ড কোং

চুয়াডাঙ্গা জেলার দর্শনায় কেরু অ্যান্ড কোং প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৩৮ সালে। ৯টি ব্র্যান্ড রয়েছে এ কোম্পানির। ব্র্যান্ডগুলো হলো—ইয়েলো লেবেল মল্টেড হুইস্কি, গোল্ড রিবন জিন, ফাইন ব্র্যান্ডি, চেরি ব্র্যান্ডি, ইম্পেরিয়াল হুইস্কি, অরেঞ্জ কুরাকাও, জারিনা ভদকা, রোসা রাম এবং ওল্ড রাম।

দেশের ১৩টি ওয়্যারহাউজ ও তিনটি বিক্রয়কেন্দ্রে কেরু অ্যান্ড কোম্পানির মদ বিক্রি হয়। সেইসঙ্গে কক্সবাজার ও কুয়াকাটায় স্থাপন করা হচ্ছে দুটি নতুন বিক্রয়কেন্দ্র।

মদ তৈরির পাশাপাশি কোম্পানিটি ভিনেগার, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, সার, চিনি এবং গুড় উৎপাদন করে।

আলোকিত চট্টগ্রাম

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!