মেজর সিনহা হত্যা—সোমবারের রায়ে সর্বোচ্চ সাজার আশা পরিবারের

বহুল আলোচিত সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলার রায় সোমবার (৩১ জানুয়ারি)। ঘটনার প্রায় ১৮ মাস পর রায় ঘোষণা করা হবে। এ মামলার রায়ে আসামিদের সর্বোচ্চ সাজার আশা বাদী ও রাষ্ট্রপক্ষের।

এর আগে বুধবার (১২ জানুয়ারি) রাষ্ট্র ও আসামি পক্ষের যুক্তিতর্ক শুনানি শেষে জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. ইসমাইল এ রায় ঘোষণার দিন ধার্য করেন।

মামলার বাদী ও সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস বলেন, ‘আমার ভাইকে যারা নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করেছে, তাদের সবার সর্বোচ্চ সাজা হোক। যাতে এমন জঘন্য হত্যাকাণ্ড আর না ঘটে। আমার মতো আর কোনো বোনের বুক যেন খালি না হয়। অপরাধ করে কেউ যেন পার না পায়। কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়, এটাই রায়ে প্রমাণ হোক।’

আরও পড়ুন: যুক্তিতর্ক শেষ, মেজর সিনহা হত্যার রায় ৩১ জানুয়ারি

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আদালতের সরকারি কৌঁসুলি ফরিদুল আলম বলেন, সিনহা হত্যা মামলায় সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে ১৫ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি। রায়ে সব আসামির সর্বোচ্চ সাজা প্রত্যাশা করছি।

এই মামলার আসামিরা হলেন- টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, বরখাস্ত পরিদর্শক লিয়াকত আলী, এসআই নন্দ দুলাল রক্ষিত, কনস্টেবল সাফানুর করিম, কামাল হোসেন, আব্দুল্লাহ আল-মামুন, মো. মোস্তফা, এপিবিএনের তিন সদস্য এসআই মো. শাহজাহান, কনস্টেবল মো. রাজীব ও মো. আব্দুল্লাহ, পুলিশের মামলার তিন সাক্ষী নুরুল আমিন, নেজাম উদ্দিন ও মো. আয়াজ, টেকনাফ থানার সাবেক কনস্টেবল রুবেল শর্মা এবং সাবেক এএসআই সাগর দেব।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, মেজর সিনহা নিহতের ছয়দিন পর লিয়াকত আলী ও ওসি প্রদীপসহ সাত পুলিশ সদস্য আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। পরে ঘটনায় সংশ্লিষ্টতা পাওয়ার অভিযোগে টেকনাফ থানায় পুলিশের দায়ের করা মামলার তিন সাক্ষী এবং শামলাপুর চেকপোস্টে ঘটনার সময় দায়িত্ব পালনকারী এপিবিএনের তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হন টেকনাফ থানার সাবেক কনস্টেবল রুবেল শর্মা।

গত বছরের ২৪ জুন মামলার অন্য পলাতক আসামি টেকনাফ থানার সাবেক এএসআই সাগর দেব আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। আসামিদের মধ্যে ওসি প্রদীপ ও কনস্টেবল রুবেল শর্মা ছাড়া অন্য ১২ জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। তদন্ত শেষে গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা র‌্যাব-১৫-এর তৎকালীন সহকারী পুলিশ সুপার মো. খাইরুল ইসলাম ১৫ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন।

এরপর গত ২৭ জুন কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. ইসমাইল মামলার অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন।

আরও পড়ুন: ‘মেজর সিনহা’ হত্যা—ওসি প্রদীপের ফাঁসি চেয়ে ক্ষোভ ঝাড়লেন লোকজন

আদালত সূত্রে আরও জানা গেছে, প্রথম দফায় গত ২৩ থেকে ২৫ আগস্ট পর্যন্ত তিন দিনে এ মামলায় সাক্ষ্য দেন দুজন। তারা হলেন- মামলার বাদী ও সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস এবং ২ নম্বর সাক্ষী, ঘটনার সময় সিনহার সঙ্গে গাড়িতে থাকা সাহেদুল ইসলাম সিফাত।

দ্বিতীয় দফায় চার দিনে চার, তৃতীয় দফার তিন দিনে আট, চতুর্থ দফার দুদিনে ছয়, পঞ্চম দফার তিনদিনে ১৫, ষষ্ঠ দফার তিনদিনে ২৪, সপ্তম দফার তিনদিনে ৫ এবং অষ্টম দফায় তিনদিনে ১ জনের (তদন্তকারী কর্মকর্তা) সাক্ষ্য নেওয়া হয়। নবম দফায় ১৫ আসামির সাক্ষ্য নেওয়া হয়। এরপর রায়ের দিন ধার্য করেন বিচারক।

প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ রোডের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খান। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে তিনটি মামলা দায়ের করে।

বলরাম/আরবি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!