মিতু হত্যায় সাবেক এসপি বাবুলের জড়িত থাকার প্রমাণ যেভাবে পেল পিবিআই

চট্টগ্রামের আলোচিত মাহমুদা খাতুন মিতু হত্যাকাণ্ডে নাটকীয় মোড় নিয়েছে। মিতুর স্বামী পুলিশের সাবেক এসপি বাবুল আক্তারকে প্রধান আসামি করে দায়ের করা হয়েছে নতুন মামলা। যে মামলায় বাবুলকে গ্রেফতার দেখিয়ে রিমান্ডের আবেদন জানানো হয়েছে।

সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন জানানোর পর আদালত বাবুলের পাঁচদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। কিন্তু প্রশ্ন থাকছে, কী কারণে মামলার বাদী বাবুল হয়ে গেলেন প্রধান আসামি?

মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, বাবুল আক্তার কক্সবাজার জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসেবে কর্মরত থাকাকালে গায়ত্রী অমর সিংয়ের সঙ্গে পরকীয়ায় জড়ান। ওই ঘটনায় পারিবারিক অশান্তি সৃষ্টি হলে বাবুল আক্তার তার স্ত্রী মিতুকে হত্যার আগে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন চালাতেন।

মামলাটিতে আসামি করা হয়েছে কামরুল ইসলাম শিকদার প্রকাশ মুসা, এহতেশামুল হক ভোলা, মোতালেব মিয়া, আনোয়ার হোসেন, খায়রুল ইসলাম কালু, সাইফুল ইসলাম শিকদার ও শাহজাহান মিয়া।

পাঁচলাইশ থানায় নতুন মামলাটি দায়েরের পর মিতুর বাবা ও বাবুলের শ্বশুর মোশাররফ হোসেন সাংবাদিকদের জানান, টাকার বিনিময়ে আমার মেয়েকে খুন করিয়েছিল বাবুল আক্তার। পিবিআই মামলার তদন্ত শুরু করার পর সেসব বিষয় বেরিয়ে এসেছে। তাই তাকেসহ আটজনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেছি।

মামলা দায়েরের আগে বুধবার সকালে মামলাটির এখনকার তদন্তকারী সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) প্রধান বনজ কুমার মজুমদার সাংবাদিকদের বলেন, তদন্তে এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে বাবুল আক্তারের সম্পৃক্ততা আছে বলেই তার বিরুদ্ধে মামলা হচ্ছে। আমরা সেরকমই সন্দেহ করছি।

বাবুল আক্তারের ওপর সন্দেহের কারণ হিসাবে পিবিআইপ্রধান বলেন, কামরুল শিকদার মুসাকে বাবুল আক্তার চিনতেন। হত্যাকাণ্ডের ভিডিও ফুটেজে তাকে পরিষ্কারভাবে দেখা গেছে। কিন্তু তাকে তিনি শনাক্ত করেননি কেন? কেন তিনি আরেকজনের দিকে (জঙ্গিদের দায়ী করে) দায় দিলেন?

এটা দেখার পর তার দিকে আমাদের সন্দেহ তীব্র হয়। কারণ মুসাকে তিনি খুব ভালোভাবে চিনতেন, তার সঙ্গে যোগাযোগও ছিল। তাহলে তিনি অস্বীকার করলেন কেন?

বাবুল আক্তারকে চট্টগ্রাম অফিসে ডেকে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের পর তিনি অনেক প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেননি।

এছাড়া এই ঘটনায় বাবুল আক্তারের সম্পৃক্ততা জানিয়ে তার দুইজন ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি সাক্ষ্যও দিয়েছেন। তাদের একজন বাবুল আক্তারের বন্ধু। তারা এই ঘটনায় ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী দিয়েছেন।

এদিকে বুধবার দুপুরে চট্টগ্রাম আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেয় পিবিআই। এরপরই পাঁচলাইশ থানায় বাবুল আক্তারসহ আটজনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা করেন ভিকটিম মাহমুদা খাতুন মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন।

পিবিআইপ্রধান জানান, বাবুল আক্তারের সম্পৃক্ততার বিষয়টি পিবিআইয়ের কাছে পরিষ্কার হয়ে যাওয়ার পর পুলিশ মহাপরিদর্শক এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে কথা হয়েছে। তাদেরকে বলা হয়েছে পিবিআইয়ের আর তো ব্যাক করার সুযোগ নেই। তখন তারা বলেছেন, তদন্ত যা আসবে, তাই হবে। এরপর তারা বাবুল আক্তারকে গ্রেফতার দেখানোর সিদ্ধান্ত নেন।

প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের ৫ জুন ভোরে চট্টগ্রাম শহরের জিইসি মোড়ে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার সময় কুপিয়ে এবং গুলি করে হত্যা করা হয় মাহমুদা খানম মিতুকে।

আলোকিত চট্টগ্রাম

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!