বইয়ের বাজারে আগুন, পুড়ছে শিক্ষার্থীরা

বছর ঘুরেই আসছে নতুন বছর। প্রতিবছর ডিসেম্বরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরীক্ষা কার্যক্রম শেষ হলে ধুম পড়ে বই-খাতা-গাইড বিক্রির। তবে এবার সেই চিত্র নেই। বেশিরভাগ শিক্ষার্থীই পুরনো বই-গাইড সংগ্রহ করছেন পড়ার জন্য। আবার পুরনো বই কিনতেও গুণতে হচ্ছে বাড়তি টাকা।

নগরের আন্দরকিল্লা বইয়ের দোকান, নুপুর মার্কেট, চকবাজার শাহেন শাহ মার্কেট ঘুরে এ চিত্র দেখা যায়।

আন্দরকিল্লা বইয়ের দোকানে গাইড কিনতে এসেছেন স্কুলপড়ুয়া শিক্ষার্থী মেজবাহ। গাইড কিনতে এসে দাম দেখে হতাশ নবম শ্রেণির এই ছাত্র। গাইড কিনতে এসেছেন অথচ ফিরে যাচ্ছেন খালি হাতে। কারণ হিসেবে জানালেন, গাইডের দাম দ্বিগুণ হয়ে যাওয়ায় কিনেননি।

এদিকে চকবাজার শাহেন শাহ মার্কেটে বই কিনতে এসে ফিরে গেছেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী মেহেরাব উদ্দিন অর্নব। তিনি বলেন, ৪৫০ টাকা দামের বই বিক্রি হচ্ছে ৬০০ টাকায়।

কলেজ শিক্ষার্থী নাজিরুল আলম বলেন, যে হারে বইয়ের দাম বেড়েছে তাতে পড়ারেখা করাই কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। পুরনো বইয়ের দাম এখন আগের তুলনায় বেশি। এছাড়া শুধু বই নয়, অন্যান্য সবকিছুর দাম বাড়ায় পড়ালেখার খরচ চালাতে পরিবারের হিমশিম খেতে হচ্ছে।

তাঁর বাবা আশহাদুল্লাহ বলেন, এভাবে যদি বই-গাইডের দাম বাড়ে তাহলে নিম্নবিত্তের শিক্ষার্থীরা কীভাবে লেখাপড়া করবে। মধ্যবিত্ত-উচ্চবিত্ত শিক্ষার্থীদের ওপর প্রভাব তেমন না পড়লেও নিম্নবিত্তের শিক্ষার্থীরা লেখাপড়ার সুবিধা না পেয়ে অচিরেই ঝরে পড়তে পারে।

এদিকে দাম বেড়েছে মেডিকেল শিক্ষার্থীদের বইয়েরও। মেডিকেল পড়ুয়া শিক্ষার্থীদেরও বই কিনতে হচ্ছে দ্বিগুণ দামে।

আন্দরকিল্লা ইসলামিয়া লাইব্রেরির মালিক আসিফ ইকবাল বলেন, নতুন বছর আসছে। শিক্ষাবর্ষও নতুন। শিক্ষার্থীদের নতুন বই-গাইড সবই প্রয়োজন। কিন্তু এবার বইয়ের দাম বাড়ায় বিক্রি কম। নতুন বছরেও ভালো বেচাকেনা নিয়ে শঙ্কা আছে। অনেক শিক্ষার্থী দাম বেশি হওয়ায় বই না কিনেই ফিরে যাচ্ছেন।

চকবাজারের শাহেন শাহ মার্কেটে নিউ হক লাইব্রেরির স্বত্বাধিকারী মাসুম হক আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, কাগজের দাম বাড়ায় সবকিছুর দাম বেড়েছে। আমাদেরও বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। দাম বাড়ায় বেচাকেনাও কমে গেছে। পেপার ছাপানোর প্রেসও বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। সামনে খুবই কঠিন দিন আসতে পারে।

যোগাযোগ করা হলে বাংলাদেশ পেপার হাউজের মালিক মো. ইরফান বলেন, যে নিউজপ্রিন্ট প্রতি রিম ১০০ টাকায় বিক্রি হতো এখন তা ২৪০ টাকা। আগে এক রিম সাদা কাগজ বিক্রি হতো ২০০ টাকা, এখন বিক্রি হচ্ছে ৪০০ টাকা।

দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে শিক্ষাবিদ ড. আনোয়ারা আলম আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, এটি নিঃসন্দেহে অশনিসংকেত। শুধু কি শিক্ষাসামগ্রী? সবকিছুর দামই বেড়েছে। শিক্ষার্থীরা দ্রুত ঝড়ে পড়ার উপক্রম হচ্ছে। এটি জাতীয় সংকট। আমাদের শিক্ষাখাত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। দেশের শিক্ষার্থীরাই আমাদের ভবিষ্যৎ। যদি শিক্ষার্থীরা শিক্ষাসামগ্রীর অভাবে লেখাপড়া করতে না পারে সেক্ষেত্রে বিষয়টি ভীষণ চিন্তার এবং দুঃখজনক। শিক্ষাসামগ্রীর মূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখতে হবে, যেন শিক্ষার্থীরা নির্বিঘ্নে লেখাপড়া চালিয়ে যেতে পারে।

এসআই/আলোকিত চট্টগ্রাম

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!