পচন ধরেছে ‘অভিমানী’ বৃদ্ধের শরীরে, পড়ে আছেন চট্টগ্রামের রাস্তায়

মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত নিয়ে চট্টগ্রাম নগরের রাস্তায় পড়ে আছেন সত্তরোর্ধ এক বৃদ্ধ। তাঁর বাম হাতে পচন ধরেছে, কবজি পর্যন্ত কাপড় দিয়ে মুড়িয়ে রেখেছেন। পানি ছাড়া কোনো খাবার খেতে পারছেন না।

গত ৪-৫ দিন আগে নগরের লালদিঘীর পাড় এলাকার জহুর হকার্স মার্কেটের কয়েক গজ দূরে সোনালী হোটেলের বিপরীত পাশের ফুটপাতে তিনি অবস্থান নিয়েছেন বলে জানা গেছে। এরপর থেকে তিনি সেখানেই আছেন। তবে তিনি কোথা থেকে এসেছেন বা তার পরিবার-পরিজন সম্পর্কে কোনো তথ্য জানা যায়নি।

সরেজমিন দেখা গেছে, স্যাঁতসেঁতে ফুটপাতের উপর একটা প্লাস্টিকের বস্তা বিছিয়ে শুয়ে আছেন সত্তরোর্ধ ওই বৃদ্ধ। একটা প্লাস্টিকের বোতলকে বালিশ বানিয়ে শুয়ে থাকা এই বৃদ্ধের মাথায় রয়েছে ক্ষত চিহ্ন। বাম হাতের কবজি পর্যন্ত কাপড় দিয়ে মুড়িয়ে রেখেছেন, তাতে পচন ধরেছে। এছাড়া শরীরের অন্যান্য জায়গায়ও ক্ষত রয়েছে। আশপাশে ভনভন করছে মাছি। কাছে যেতেই ডান হাতে ইশারা করে পানি খাওয়ার আকুতি জানান। পানি আর বিস্কুট দেওয়া হলে কেবল পানিটাই খাবেন বলে জানান আকার-ইঙ্গিতে। শরীরের নানান আঘাতের কারণে তাঁর নড়াচড়া করতে কষ্ট হচ্ছে, তাই শুয়ে শুয়েই খেলেন পানি।

এদিকে খাবার না খাওয়ার কারণে তাঁর শরীরও খুব দুর্বল হয়ে পড়েছে। শারীরিক দুদর্বলতার কারণে স্পষ্ট স্বরে কথা বলার শক্তিও হারিয়ে ফেলছেন। নাম-ঠিকানা, পরিবার-পরিজন সম্পর্কে জানতে চাইলে অস্পষ্ট স্বরে তিনি বলেন, ‘আমার কোনো নাম নাই, ঘর বাড়ি নাই। সারা দুনিয়াটাই আমার ঘর-বাড়ি। আমি বিয়ে করিনি, আমার কোনো পরিবার নাই।’

শরীরে আঘাতের বিষয়ে জানতে চাইলে হাতে-মাথায় অপারেশন করা হয়েছিল বলে জানান তিনি। এ বিষয়ে আর বিস্তারিত জানাতে পারেননি। তবে তাঁর কথায় ছিল অভিমানের সুর। অস্পষ্ট স্বরে ছোট ছোট শব্দে বলা তাঁর কথায় জীবন-সংসারের প্রতি ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ছিল।

আশপাশের দোকানদারেরা জানান, ৪-৫ দিন আগে তিনি এখানে অবস্থান নিয়েছেন। একজন তাঁকে একটা প্লাস্টিকের বস্তা দিয়েছেন, সেটাকেই বিছানা বানিয়ে শুয়ে থাকেন। মাঝে মাঝে অনেক কষ্ট করে উঠে একটু হাঁটেন। তাঁর শরীর খুব দুর্বল। গতকাল শোয়া থেকে উঠে ফুটপাত থেকে রাস্তায় নামার সময় পড়ে মাথা ফাটিয়ে ফেলেছেন। আগে থেকেও শরীরের নানান জায়গায় আঘাত রয়েছে। আশেপাশের দোকানদার আর ভ্যান চালকরা তাকে খাবার খাওয়ানোর চেষ্টা করেছেন, তবে তিনি চা আর পানি ছাড়া কিছুই খান না।

তারা আরও জানান, এভাবে এখানে পড়ে থাকলে যেকোনো সময় মারা যেতে পারেন, তার দ্রুত চিকিৎসার প্রয়োজন। এর জন্য বৃদ্ধাশ্রম বা অন্যান্য মানবিক সংগঠনগুলোর এগিয়ে আসা দরকার। তাঁর নাম-ঠিকানা বা পরিবারের কথা জিজ্ঞেস করলে কিছু নাই বলেন। সম্ভবত অনেক আগে পরিবারের সঙ্গে অভিমান করে বা অন্য কোনো পরিস্থিতির কারণে সব ছেড়ে ভবঘুরে জীবন কাটিয়ে আসছেন।

আলোকিত চট্টগ্রাম

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!