নৌপুলিশের কারণে নিষেধাজ্ঞায়ও ইলিশ শিকার করে নোয়াখালী কুতুবদিয়া মহেশখালীর বড় বড় ফিশিং ট্রলার

সাগরে মাছ ধরায় ফের ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে সরকার। ৭ অক্টোবর থেকে আগামী ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত এ নিষেধাজ্ঞা কার্যকর থাকবে। আর এ নিয়ে কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে হাজার হাজার জেলে ও বোট মালিকের।

জেলে ও বোট মালিকদের অনেকেই ঋণ নিয়ে বিপদে রয়েছেন। কীভাবে তারা ঋণের টাকা পরিশোধ করবেন এ নিয়ে যেন চিন্তার শেষ নেই। বিশেষ করে বঙ্গোপসাগরের তীরবর্তী গহিরা ও রায়পুর এলাকার হাজার হাজার জেলে পরিবার এখন কষ্টে দিন পার করছে।

এর আগে মা ইলিশের প্রজনন মৌসুমে গত ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছিল। দুমাস সাগরে মাছ ধরার পর ফের নিষেধাজ্ঞায় দেওয়া হলো। গত বৃহস্পতিবার (১৫ সেপ্টেম্বর) মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে এ নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ইলিশের নিরাপদ প্রজননের লক্ষ্যে ৭ থেকে ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত ২২ দিন সারাদেশে ইলিশ আহরণ, পরিবহন, ক্রয়-বিক্রয়, মজুত, ও বিনিময় নিষিদ্ধ থাকবে। এই ২২ দিন সারাদেশে ইলিশ আহরণ, পরিবহন, মজুত, বাজারজাতকরণ, ক্রয়-বিক্রয় ও বিনিময় দণ্ডনীয় অপরাধ। আইন অমান্যকারী কমপক্ষে এক থেকে সর্বোচ্চ দুই বছর সশ্রম কারাদণ্ড অথবা পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা অথবা উভয়দণ্ডে দণ্ডিত হবে।

তবে জেলেদের দাবি, মৎস্য আহরণে ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞার পরও ভরা মৌসুমেও মেলেনি কাঙ্ক্ষিত ইলিশ।

উপজেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা যায়, আনোয়ারার গহিরা উপকূল থেকে ছোট-বড় মিলে সাগরে মাছ ধরতে যায় প্রায় ৯১০টি নৌকা। এর মধ্যে উপজেলার জুঁইদণ্ডি এলাকার ১১০টি, ফকিরহাট থেকে সরেঙ্গা পর্যন্ত ১৭০টি, পারকিতে ১৮টি ও সবচেয়ে বড় ঘাট এলাকা উঠান মাঝির ঘাটে ২৮০টি। অন্য নৌকাগুলো সাত্তার মাঝির ঘাট, গলাকাটা ঘাট, পিচের মাথা, বাছা মাঝির ঘাট এলাকার। এসব নৌকায় মাছ ধরতে যায় অন্তত ১০ হাজার জেলে।

আরও পড়ুন: যুবকের জুতার দাম কোটি টাকা, বাসে চড়ে চট্টগ্রাম থেকে গেল ঢাকায়

জেলেরা জানায়, ভরা মৌসুমে কাঙ্ক্ষিত ইলিশ পাওয়া যায়নি। এর মধ্যে আবারও সাগরে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। এই নিষেধাজ্ঞার সময় তাদের ঋণগ্রস্ত হতে হয়। এছাড়া অন্য কাজ করার সুযোগ থাকে না। সরকার চাল দিয়ে সহযোগিতা করলেও বেশিরভাগ জেলে তা পায় না। প্রভাবশালীরা তা ভাগ-ভাটোয়ারা করে নিয়ে যায়।

ভরা মৌসুমে ইলিশ না পাওয়ার বিষয়ে গহিরা ওঠান মাঝিরঘাট এলাকার জেলেরা জানান, মাছ না পাওয়ার কারণ হচ্ছে- এবার বর্ষায় পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়া এবং অমবস্যার পরবর্তী সময় ও নিষাধাজ্ঞার সময়ে অবাধে মা মাছ ধরা। এছাড়া ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞার সময়ে নোয়াখালী, কুতুবদিয়া, মহেশখালী, হাতিয়াসহ বাইরের বড় বড় ফিশিং ট্রলারের মাধ্যমে মা মাছ ধরে নিয়ে গেছে।

স্থানীয় জেলেদের অভিযোগ, নিষেধাজ্ঞার সময়ে সাগর উপকূলের জেলেদের জন্য মৎস্য আহরণে নৌপুলিশ ও মৎস্য অফিস কঠোর হলেও সাগরে অবাধে মাছ ধরে নিয়ে যায় নোয়াখালী, সন্দ্বীপ ও হাতিয়াসহ বিভিন্ন জেলা থেকে আসা বড় বড় ফিশিং বোটগুলো। নৌ পুলিশের সঙ্গে বাণিজ্য করে নিষেধাজ্ঞার সময়ে মা ইলিশ ধরে বাইরের জেলেরা। বিশেষ করে স্থানীয় পুলিশ ফাঁড়ির দায়িত্বরত নৌ পুলিশরা এ কাজে সহায়তা করে।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে নৌপুলিশ চট্টগ্রাম অঞ্চলের পুলিশ সুপার মো. মোমিনুল ইসলাম ভুঁইয়া আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, নিষেধাজ্ঞার সময় আমরা চেষ্টা করে থাকি মা মাছ ধরা থেকে জেলেদের বিরত রাখতে। গভীর সাগরে যাওয়ার মতো বোট আমাদের নেই। প্রশাসনের অন্যান্য বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে অপারেশন পরিচালনা করতে হবে। সাগরে টহল জোরদার করলে নিষেধাজ্ঞার সুফল অবশ্যই মিলবে।

এদিকে উঠান মাঝিরঘাট কমিটির সভাপতি মো. নাছির উদ্দীন বলেন, মাছ ধরার দীর্ঘ নিষেধাজ্ঞায় উপকূলের মানুষরা মানবেতর জীবনযাপন করছে। সবাই আড়তদার, মহাজন, ব্যাংকসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে ঋণ নিয়ে সাগরে মাছ ধরার কাজে লাগায়। এখন নিষেধাজ্ঞার কারণে ঋণ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন ট্রলার মালিকরা। বিশেষ করে বঙ্গোপসাগরের তীরবর্তী গহিরা ও রায়পুর এলাকার হাজার হাজার জেলে পরিবার খুবই কষ্টে দিন পার করছে।

যোগাযোগ করা হলে উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা রাশীদুল হক আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, মা ইলিশ সংরক্ষণে সাগরে ২২ দিনের জন্য মৎস্য আহরণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এসময় উপকূল সংলগ্ন ৬টি ইউনিয়নের আড়াই হাজার জেলেকে ২৪ কেজি করে চাল দেওয়া হবে। নিষেধাজ্ঞা কার্যকরে প্রশাসন কঠোর অবস্থানে থাকবে।

আরবি/আলোকিত চট্টগ্রাম

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!