চট্টগ্রামে থানা হেফাজতে দুদক কর্মকর্তার মৃত্যু—সেই জসিম রিমান্ডে

চট্টগ্রামে চান্দগাঁও থানা হেফাজতে দুদকের সাবেক উপপরিচালক ছৈয়দ মো. শহীদুল্লাহ’র মৃত্যুর ঘটনায় মামলায় সেই কথিত যুবলীগ নেতা জসিম উদ্দিনের তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।

মঙ্গলবার (২৬ ডিসেম্বর) চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ ড. বেগম জেবুননেছার আদালত এ আদেশ দেন।

এর আগে সোমবার (২৫ ডিসেম্বর) রাতে বাকলিয়া থানার রাহাত্তালপুল এলাকা থেকে জসিমকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) মেট্রো ইউনিট।

বিষয়টি নিশ্চত করে পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্টো ইউনিটের পরিদর্শক মো. ইলিয়াস খাঁন আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, সাবেক দুদক কর্তা শহীদুল্লাহর মৃত্যুর ঘটনায় করা মামলার আসামি মো. জসিম উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হলে আদালত তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।

এর আগে গত ৩ অক্টোবর রাত সাড়ে ১১টায় চকবাজার থেকে বাসায় ফেরার পথে চান্দগাঁও থানার চেয়ারম্যানঘাটা এলাকায় এএসআই ইউসুফ আলী ও সোহেল রানা সাদা পোশাকে সাবেক দুদক কর্তা শহীদুল্লাহকে কলার ধরে টানাহেঁচড়া করে থানায় নিয়ে যায়। এতে অপমানিত হওয়ার কারণে তার মৃত্যু হয়েছে বলে পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়।

এ ঘটনার পর গত ১৬ অক্টোবর চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ ড. বেগম জেবুননেছার আদালতে শহীদুল্লাহর স্ত্রী ফৌজিয়া আনোয়ার মামলার আবেদন করেন। আদালত মামলাটি থানায় রেকর্ড করার নির্দেশের পাশাপাশি পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দেন। এরপর গত ১৮ অক্টোবর চান্দঁগাও থানায় মামলা করেন ফৌজিয়া আনোয়ার।

আরও পড়ুন : চট্টগ্রামে থানা হেফাজতে প্রাণ হারানো সেই দুদক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা তুলে নিতে চান তানিয়া

মামলায় অভিযুক্তরা হলেন— চান্দগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. খাইরুল ইসলাম, চান্দগাঁও থানার এএসআই মো. ইউসুফ, এএসআই সোহেল রানা, পরিদর্শক (তদন্ত) মো. মনিবুর রহমান, চান্দগাঁও থানা এলাকার বাসিন্দা এসএম আসাদুজ্জামান (৫২), মো. জসীম উদ্দীন (৩৭), মো. লিটন (৪৮), রনি আক্তার তানিয়া (২৬) ও কলি আক্তার (১৯)।

জানা গেছে, স্ত্রীর পৈতৃক সূত্রে পাওয়া জমিতে ভবন নির্মাণের কাজ করতে গিয়ে কথিত যুবলীগ নেতা জসিম উদ্দিনের রোষানলে পড়েন দুদক কর্তা শহীদুল্লাহ। তার কাছ থেকে অর্ধকোটি টাকা চাঁদা দাবি করেন জসিম। চাঁদার টাকা না দিলে একটি ফ্ল্যাট দাবি করেন তিনি।

পরে এ ঘটনায় বেশ কয়েকবার দুদক কর্তার বাড়িতে দলবল নিয়ে হামলাও চালান জসিম। কিন্তু এসব করে সুবিধা করতে না পেরে বাঁশখালীর এক অসহায় নারীকে দিয়ে আদালতে মিথ্যা মামলা করান।

সেই মামলার বাদী রণি আক্তার তানিয়া জানান, আগস্টের মাঝামাঝি সময় তিনি বিনামূল্যে ঘরসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য পাওয়ার নিশ্চয়তা পান জসিমের কাছ থেকে। পরে শহীদুল্লাহর নতুন তৈরি করা ভাড়াঘরে তাদের তুলে দেন জসিম। তাদের সেই ঘরে তোলার আগে দলবল নিয়ে শহীদুল্লাহর ভাড়াঘরে হামলা চালান জসিম।

সেদিনের ঘটনায় গত ১৮ আগস্ট নগরের চান্দগাঁও থানায় মামলা করেন ভুক্তভোগী শহীদুল্লাহ। মামলায় জসিম উদ্দিনসহ ৬ নম্বর পূর্ব ষোলশহর ওয়ার্ডের মোজাহের উল্লাহ মুহুরীর বাড়ির মৃত ফিরোজ বকতের ছেলে জসিম উদ্দিন (৬৫), তাঁর মেয়ে নুসরাত তাসু (২৩), মৃত জালাল উদ্দিনের ছেলে মো. শাহজাহান (৪৭), মৃত জামাল উদ্দিনের ছেলে মো. শাহিন (৪৫), মৃত এসএম শফির ছেলে মো. লিটন (৪৭), তার ভাই এসএম মান্নান (৪২), মো. ফরিদ উদ্দিনের ছেলে মো. রিফাত (৩৮), মোছা. বানুসহ (৪৭) অজ্ঞাত আরও ৪-৫ জনকে আসামি করা হয়।

এদিকে মামলার পর গ্রেপ্তার করা হয় রণি আক্তার তানিয়া ও তাঁর স্বামী সোহেলসহ মো. শাহীন, মো. লিটন, রায়হান ও কলি আক্তারকে। চারদিন কারাভোগের পর তাদের জামিনে মুক্ত করেন জসিম। ফিরে এসে ঘরে আসবাবপত্র না থাকায় শহীদুল্লাহ’র বিরুদ্ধে তানিয়াকে মামলা করার পরামর্শ দেন জসিম। কিন্তু জসিমের সেই কথায় রাজি না হওয়ায় এক আইনজীবীর সহায়তায় বশে আনা হয় তানিয়াকে। মামলার আর্জি তৈরি করে মুখস্ত করানো হয় তাকে। পরে বিচারকের সামনে তা বলতে বলেন।

মামলার অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, তানিয়া শহীদুল্লাহর বাসার গৃহকর্মী হিসেবে ৩ হাজার টাকা বেতনে কাজ করতেন। বেতন বাবদ তিনি সাড়ে ৬ হাজার টাকা পাওনা হন। ১২ আগস্ট টাকা আনতে গেলে শহীদুল্লাহ বলেন, তোমাকে ভবনের নিচে একটি রুম ঠিক করে দেব। তখন আর ভাড়া দিতে হবে না এবং বকেয়া টাকাও পরিশোধ করে দেবেন। এরপর ২৩ আগস্ট রাতে বকেয়া টাকা চাইতে গেলে শহীদুল্লাহ তাকে গলা টিপে ধরে মারধর করেন। তার সঙ্গে থাকা কলি আক্তার নামে এক মহিলাকেও লাথি মারেন।

তবে নিজের ঘরের আসবাবপত্র না পাওয়ায় আইনজীবী তানিয়াকে আদালতে যেতে বললে তিনি যাননি বলে জানান। পরে তিনি সেই মামলা প্রত্যাহারও করে নেন।

আরএস/আরবি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!