আড়ালে বাণিজ্য—নতুন নিয়োগের তোড়জোড় চট্টগ্রাম বন্দরে

এক যুগ আগে ‘ওয়াচম্যান’ হিসেবে ৬৫০ জনকে অস্থায়ী নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল চট্টগ্রাম বন্দরে। চট্টগ্রামের নিবন্ধিত সংগঠনের মাধ্যমে নিয়োগ পাওয়া এসব শ্রমিকের জন্য তৈরি হয়েছিল নীতিমালা। কিন্তু দীর্ঘ এই সময়েও তাদের চাকরি স্থায়ী হয়নি, বেতনও বাড়েনি। এর চেয়ে বড় ব্যাপার, তারা নিয়মিত কাজও পান না!

এদিকে নিয়োগ পাওয়া ওয়াচম্যানরা নিয়মিত কাজ না পেলেও নতুন করে ওয়াচম্যান নিয়োগের তোড়জোড় চলছে। এতে ক্ষোভ বাড়ছে দুঃখ-কষ্টে দিন পার করা ওয়াচম্যানদের।

চট্টগ্রাম বন্দরে ওয়াচম্যান নিয়োগের প্রক্রিয়া চললেও কর্মকর্তারা তা স্বীকার করছেন না। যোগাযোগ করা হলে চট্টগ্রাম বন্দর সচিব ওমর ফারুক আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, ‘বিষয়টি আমি জানি না। পরে জেনে ফোন দেবো।’ এই বলে তিনি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। ঘণ্টাখানেক পরে প্রতিবেদক ফোন দিলে তিনি রিসিভ করেননি। এরপর ওই কর্মকর্তা ‘ব্যস্ত আছেন’ লিখে প্রতিবেদকের মুঠোফোনে এসএমএস করেন।

এদিকে চট্টগ্রাম বন্দর ভবনের ভেতরে ওয়াচম্যান হিসেবে শতাধিক লোকের যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া চলছে বলে দাবি করন চট্টগ্রাম বন্দর মেরিন কন্ট্রাক্টর শ্রমিক ইউনিয়ন সভাপতি মো. হানিফসহ কয়েকজন নেতা।

জানা যায়, ২০০৭-২০০৮ সাল থেকে চট্টগ্রাম বন্দর ও আউটারে ওয়াচম্যান সরবরাহ করে আসছে চট্টগ্রামের পাঁচ সংগঠন। এসব সংগঠনে প্রায় ১২ হাজার শ্রমিক রয়েছে। ২০০৯ সালে সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে ‘ওয়াচম্যান ব্যবস্থাপনা পরিচালনা পদ্ধতি নীতিমালা’ ঘোষণা করে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ।

এ নীতিমালার আওতায় বন্দরের নিরাপত্তা বিভাগের নীতিতে ওয়াচম্যান বুকিং সেল পরিচালনা করা হয়। বন্দরের কর্মরত একজন ডেপুটি ডিরেক্টর সিকিউরিটি (প্রশাসন) ও একজন সিকিউরিটি কর্মকর্তাকে ওয়াচম্যানদের পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়।

আরও পড়ুন: ধর্ষণচেষ্টা—৫ বছর পালিয়ে থেকে ধরা খেল ৫ বছরের সাজার আসামি

নীতিমালার পর চট্টগ্রামের পাঁচটি সংগঠন থেকে ৬৫০ জনকে ওয়াচম্যান হিসেবে অস্থায়ী নিয়োগ দেওয়া হয়। তাদের প্রত্যেককে বন্দরের প্রবেশের অনুমতিপত্র এবং পরিচয়পত্রও সরবরাহ করে বন্দর কর্তৃপক্ষ। এসব শ্রমিকের বেতন নির্ধারণ করা হয় ১২ ঘণ্টায় ৬৫০ টাকা করে।

নীতিমালায় বন্দরের কার্যক্রম বাড়লে শ্রমিকের সংখ্যা বাড়ানোর করার কথা রয়েছে। এছাড়া নীতিমালায় ওয়াচম্যানদের বেতন বৃদ্ধি, ঈদ বোনাস ৫০০০ টাকা, ইউনির্ফম সরবরাহ, যাতায়াত ও চিকিৎসা সেবা দেওয়া, চাকরির স্থায়ীকরণসহ কোনো শ্রমিকের মৃত্য হলে ৫ হাজার থেকে বাড়িয়ে ১০ হাজার টাকা দেওয়ার কথা ছিল।

সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, ১২ বছর আগে নীতিমালার কোনো শর্ত এখন পর্যন্ত বাস্তবায়ন করা হয়নি। সেখানে যারা কর্মরত আছেন তারাই ঠিকমতো কাজ পান না। অথচ দেশের সরকারবিরোধী রাজনৈতিক নেতার সমর্থিত সংগঠন- ‘মেরিন কন্ট্রাক্টর শ্রমিক জোন’ থেকে ১০৪ জন নতুন ওয়াচম্যান নিয়োগের পাঁয়তারা চলছে। নিয়োগ বাণিজ্য করতেই এমন কর্মকাণ্ড করছে বন্দরের কিছু দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বন্দর মেরিন কন্ট্রাক্টর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক এম ফসিউল আলম আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, প্রায় এক যুগ আগে চট্টগ্রামের সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে ৬৫০ জনকে ওয়াচম্যান হিসেবে অস্থায়ী নিয়োগ দেয় বন্দর কর্তৃপক্ষ। তাদের অদ্যাবধি স্থায়ী করেনি বন্দর। ২০০৯ সালের নীতিমালা বাস্তবায়নে কর্তৃপক্ষের কোনো ভূমিকা চোখে পড়েনি। যারা নিযোগ পেয়েছেন তাদের বেশিরভাগই প্রতিদিন ঠিকমতো কাজ পায় না। নতুন করে ওয়াচম্যান নিয়োগ দেখে আমরা হতবাক।

তিনি বলেন, নীতিমালায় একজন ওয়াচম্যানদের ১২ ঘণ্টার ডিউটিতে ৬৫০ টাকার বেতন ধার্য ছিল। সেই বেতন আর বাড়েনি। কোনো শ্রমিক মারা গেলে নীতিমালা বাস্তবায়নের কোনো আগ্রহ নেই। ঈদ বোনাসও নেই। নিয়োগ পাওয়া শ্রমিকরা সবাই মাসে ৫ থেকে ৬ দিন কাজ পায়। এই টাকা দিয়ে কীভাবে তারা সংসার চালাবে।

আলোকিত চট্টগ্রাম

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!