‘ডিম আলু পেঁয়াজে ভূত’ সরকারের বেঁধে দেওয়া দামে পাচ্ছে না চট্টগ্রামের ক্রেতারা

ডিম, আলু ও দেশি পেঁয়াজের দর নিয়ন্ত্রণে দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে চট্টগ্রামসহ সারাদেশে সরকার নির্ধারিত দামে এই তিন পণ্য ক্রেতারা কিনতে পারবে বলে ঘোষণাও দেওয়া হয়। কিন্তু বাস্তবে এর প্রতিফলন দেখা যায়নি। এখনও বাড়তি দামেই ডিম, আলু, পেঁয়াজ কিনতে হচ্ছে চট্টগ্রামের ক্রেতাদের।

১৫ সেপ্টেম্বর থেকে চট্টগ্রামসহ সারাদেশে প্রতিটি ফার্মের ডিম ১২ টাকা, প্রতি কেজি আলু ৩৫-৩৬ টাকা এবং দেশি পেঁয়াজ ৬৪-৬৫ টাকা কেজি দরে পাওয়ার কথা। কিন্তু ১৫ সেপ্টেম্বর নগরের বিভিন্ন খুচরা বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি হালি ফার্মের ডিম বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫৫ টাকায়। এমনকি একটি ডিমের জন্য ক্রেতাকে ১৪-১৫ টাকাও দিতে হয়েছে!

বাজারে এখনও আলু বিক্রি হচ্ছে ৪৮ থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে। এছাড়া দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭২ থেকে ৭৮ টাকায়। সরকার নির্ধারিত দাম না মেনে বাড়তি দাম নেওয়ার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলেই বিক্রেতাদের রোষাণলে পড়তে হয়েছে বলে অভিযোগ ক্রেতাদের।

মাইনুল ইসলাম নামের এক ক্রেতা বলেন, আমি বহদ্দারহাট কাঁচাবাজার থেকে নিয়মিত বাজার করি। বৃহস্পতিবার খবরে দেখলাম ডিম, আলু আর দেশি পেঁয়াজের দাম সরকার নির্ধারণ করে দিয়েছে। আজ শুক্রবার থেকে সরকারের নির্ধারিত দামেই ডিম-আলু-পেঁয়াজ কিনতে পারার কথা। অথচ শুক্রবার এগুলো কিনতে গিয়ে দেখি, আগের দামই নিচ্ছে দোকানিরা। এসময় সরকার নির্ধারিত দামের কথা বলাতে দোকানি রাগান্বিত স্বরে বলেন, পাইকারি বাজার থেকে দাম বেশি দিয়ে কিনে এনে কোন দুঃখে আমি কম দামে বিক্রি করবো? আমার লসের টাকা কি সরকার দিবে?

খুচরা আলু বিক্রেতা রহমত উল্যাহ বলেন, আমি পাইকারি বাজার থেকে কেজি ৪২ টাকা করে আলু কিনেএনেছি। অন্যান্য খরচসহ আমাকে সেই আলু কেজি ৪৮ টাকা বিক্রি করতে হচ্ছে। এখন যদি সরকার নির্ধারিত ৩৫-৩৬ টাকায় আলু বিক্রি করি তাহলে তো আমার ক্ষতি হয়ে যাবে। এগুলো শেষ হলে পরেরবার যদি পাইকারি বাজারে কম দামে পাই, তাহলে আমিও কম দামে বিক্রি করতে পারবো।

অথচ এর আগে ১৪ সেপ্টেম্বর সংবাদ সম্মেলনে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছিলেন, উৎপাদন ব্যয় হিসাব করে আমরা দেখেছি বাজারে ডিম, আলু ও দেশি পেঁয়াজ বেশি দামে বিক্রি করা হচ্ছে। তাই আমরা কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সাথে বসে এসব পণ্যের দাম নির্ধারণ করেছি। খুচরা পর্যায়ে প্রতিটি ডিম ১২ টাকায় বিক্রির সিদ্ধান্ত যদি ব্যবসায়ীরা না মানেন তাহলে পণ্যটি আমদানির অনুমতি দেওয়া হবে। এরমধ্যে ডিম আমদানির অনুমতি চেয়ে ব্যবসায়ীদের আবেদন মন্ত্রণালয়ে জমা আছে। হিমাগার থেকে বেশি দামে আলু বিক্রির অভিযোগ পাওয়া গেলে নিলাম করে নির্ধারিত মূল্যে আলু বিক্রি করে দেওয়া হবে।

পরদিন ১৫ সেপ্টেম্বর সকালে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, নির্ধারণ করে দেওয়া দাম বাস্তবায়নে ভোক্তা অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসকরা বাজার মনিটরিং করবেন। জেলা-উপজেলাসহ বড় বড় শহরে মনিটরিং চলবে। সর্বাত্মক শক্তি নিয়ে বাজারের দাম নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হবে বলেও মন্তব্য করেন বাণিজ্যমন্ত্রী।

এদিকে বাড়তি দামের অভিযোগের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের চট্টগ্রামের উপপরিচালক মো. ফয়েজ উল্যাহ আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, সরকারের নির্ধারিত দাম বাস্তবায়নের আমরা প্রথমদিন থেকেই মাঠে রয়েছি। শুক্রবার রিয়াজউদ্দিন বাজারে অভিযান পরিচালনা করেছি। এসময় আলু ক্রয়ের পাকা ভাউচার না থাকা, মূল্য তালিকা যথাযথ না থাকার দায়ে চারটি প্রতিষ্ঠানকে ১৩ হাজার টাকা জরিমানা করেছি।

তিনি বলেন, সরকার নির্ধারিত দাম কার্যকরের ব্যাপারে ব্যবসায়ীদের সাথে আমাদের কথা হয়েছে। তারা জানিয়েছে, ২/৩ দিনের মধ্যে আগের বেশি দামে কেনা পণ্য শেষ হয়ে গেলে তারা কম দামে নতুন পণ্য কিনতে পারবে। তখন তারা সরকার নির্ধারিত দামে বিক্রি করতে পারবে। আমরা নিয়মিত বাজার মনিটরিংযের মধ্যে থাকব। আশা করছি ২/৩ দিনের মধ্যে এসব পণ্যের বাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে।

আলোকিত চট্টগ্রাম

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!