ট্রেন চলবে না সোমবার থেকে, মাইলেজ জটিলতায়

রেলের মাইলেজ জটিলতার সুরাহা না হওয়ায় আন্দোলন অব্যাহত রেখেছেন রেলওয়ে রানিং স্টাফরা। দাবি আদায়ে গত তিনদিন ধরে আট ঘণ্টার বেশি কাজ করেননি কেউ। সৃষ্ট জটিলতা দূর না করলে আগামী ৩১ জানুয়ারি (সোমবার) থেকে ট্রেন চলাচল বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং কর্মচারী ঐক্য পরিষদ বিভাগীয় কমিটি।

এদিকে সমস্যা সমাধানে গত বৃহস্পতিবার (২৭ জানুয়ারি) বিকালে রেল সচিব আন্দোলনকারীদের সাথে বৈঠকে ডাকেন। কিন্তু তাতে সাড়া দেননি আন্দোলনরতদের কেউ।

রানিং স্টাফরা জানান, এর আগেও মন্ত্রী ও সচিব মহোদয় আশ্বাস দিয়েছিলেন, কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। তাই দাবি আদায় ছাড়া আলোচনা নয়।

আরও পড়ুন: রেলে মাইলেজ জটিলতা—৪ দপ্তরে চিঠি চালাচালি, রেল বন্ধের হুমকি

জানা গেছে, ব্রিটিশ আমল থেকে রেলওয়ে রানিং কর্মচারীরা ‘মাইলেজ’ রেলওয়ে কোডে ‘পার্ট অব পে’ হিসাবে এবং ম্যানুয়াল বিধান মতে নিয়মিত মাসিক বেতন ও অর্জিত মাইলেজ সংযুক্তভাবে পেয়ে আসছিলেন। কিন্তু ২০১৯ সালে হঠাৎ রানিং কর্মচারীদের মাইলেজ বেতন বাজেট থেকে আলাদা করে টিএ খাতে সংযুক্ত করা হয়। এতে টিএ খাতে আর্থিক বরাদ্দ কম থাকায় ‘মাইলেজ’ নিয়ে সৃষ্টি হয় নানা জটিলতা।

পরে জটিলতা নিরসনে ‘মাইলেজ ভাতা’ নামের আলাদা কোড খোলা হয়। যেখানে আইবাস প্লাস সিস্টেমে রানিং কর্মচারীদের অর্জিত মাইলেজ সর্বোচ্চ ৩ হাজার মাইল বা ৩০ দিনের বেশি হতে পারবে না- এমন শর্ত জুড়ে দেওয়া হয় । ফলে এ নিয়ে রানিং স্টাফদের মধ্যে অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ে।

গত বছরের ৩ নভেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব শামীম বানু শান্তি স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, চলন্ত ট্রেনে দৈনিক ১০০ কিলোমিটার কিংবা তার চেয়েও বেশি দায়িত্ব পালন করলেও ওইদিনের বেতনের ৭৫ শতাংশের বেশি মাইলেজ ভাতা পাবেন না সংশ্লিষ্ট রানিং কর্মচারীরা। আর মাস শেষে এই মাইলেজ মূল বেতনের বেশি হবে না। এই প্রজ্ঞাপন জারির পর ৪ নভেম্বর ট্রেন চলাচল বন্ধ রেখে বিক্ষোভ জানায় লোকোমাস্টাররা। এ সময় চট্টগ্রাম রেলস্টেশন থেকে বিলম্বে যাত্রা শুরু করে বিভিন্ন রুটের ট্রেন।

আরও পড়ুন: আবার শাটল ট্রেনের সঙ্গে সংঘর্ষ—এবার দুমড়েমুচড়ে গেল অটোরিকশা

এদিকে ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসের কর্মচারীদের বেতন বিল হিসাব বিভাগ থেকে ফেরত পাঠানোর পর আবারো উত্তপ্ত হয়ে উঠে রেলওয়ে। এরপর ২০ জানুয়ারি বিকেল ৫টার মধ্যে নিয়মিত বেতন পরিশোধ না করলে ট্রেন বন্ধ রাখার আলটিমেটাম দিয়ে চার দপ্তরে চিঠি পাঠায় রানিং কর্মচারী সমিতির নেতারা।

এরপর সমস্যা সমাধানে রেলওয়ে রানিং কর্মচারী সমিতির নেতাদের সঙ্গে কথা বলতে রেলওয়ে সচিব বৃহস্পতিবার (২৭ জানুয়ারি) বিকালে তাদের প্রতিনিধিদের বৈঠকে ডাকেন। কিন্তু সেই ডাকে কেউ সাড়া দেয়নি।

সংশ্লিষ্টদের মতে, ব্রিটিশ আমলে কয়লাচালিত ট্রেনে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা আসা-যাওয়া করতে প্রায় ৪০ ঘণ্টা সময় লাগত। তখন মাইলেজ যুক্তিযুক্ত ছিল। কিন্তু আধুনিক যুগে ৬ ঘণ্টায় চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা পৌঁছানো যায়। তাই রেলওয়ে রানিং স্টাফদের এ দাবি কতটা যুক্তিগত তা আলোচনার বিষয়।

আরও পড়ুন: ‘মর্মান্তিক’౼শাটল ট্রেনের নিচে দুই পা রেখে যু্বককে নিয়ে যাওয়া হলো হাসপাতালে

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং কর্মচারী ঐক্য পরিষদের বিভাগীয় কমিটির আহ্বায়ক মো. মজিবুর রহমান ভূঁঞা আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, আমরা আন্দোলন করে ক্লান্ত। তাই সচিব মহোদয়ের ডাকে সাড়া দিতে পারিনি। আমরা সবার সঙ্গে আলোচনা করে বৈঠকে বসার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেব। তবে আমাদের একটাই কথা- আশ্বাস নয়, দাবি আদায় ছাড়া আলোচনা হবে না। দাবি আদায় না হলে সোমবার থেকে আমরা ট্রেন চালাব না, এটাই ফাইনাল।

প্রসঙ্গত, আট ঘণ্টার বেশি দায়িত্ব পালনের জন্য ট্রেনের লোকোমাস্টার, গার্ড ও টিটিইরা আগে অতিরিক্ত আর্থিক সুবিধা পেতেন, যা রেলওয়ের ভাষায় মাইলেজ। সম্প্রতি রাষ্ট্রের বেসামরিক কর্মীদের মূল বেতনের অতিরিক্ত অর্থ পাওয়ার বিধান নেই উল্লেখ করে অর্থ মন্ত্রণালয় এক প্রজ্ঞাপন জারি করে। এতে রেলের রানিং স্টাফদের মাইলেজ সুবিধা বাতিল করা হয়।

সিএম

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!