‘চসিকের গাফিলতি’ মায়ের হাতের শিশু নালায়—এরপর যেন সিনেমার গল্প

স্বপ্না (ছদ্মনাম), তিন বছরের ফুটফুটে শিশু কন্যা। ফুটপাত দিয়ে মায়ের হাত ধরে হাঁটছিলেন। হাঁটতে হাঁটতে চলতি পথেই মায়ের হাত থেকে ছিটকে নালায় ঢুকে পড়েন স্বপ্না। এ সময়ে মায়ের চিৎকারে আকাশ কেঁপে উঠে। মুহূর্তেই নালার গর্তে হাত ঢুকিয়ে স্বপ্নাকে তুলে নেন মা। এতেই অল্পের জন্য মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পায় স্বপ্না।

শনিবার (২৬ মার্চ) দুপুরের দিকে চান্দগাঁও থানার পাঠানিয়া গোদা খতিব বাড়ি মসজিদ সংলগ্ন রোজ গার্ডেন কমিউনিটি সেন্টারের পাশে সাফা মারওয়া ইলেকট্রনিক্স সেন্টারের সামনে এ ঘটনা ঘটে।

ইতোমধ্যে এ ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। ফুটেজ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, দুপুরের দিকে চান্দগাঁও থানার পাঠানিয়া গোদা সাফা মারওয়া ইলেকট্রনিক্স সেন্টারে সামনের ফুটপাত দিয়ে খতিব বাড়ির মসজিদের দিকে যাচ্ছিলেন দুজন মহিলা। তখন তাদের সঙ্গে ছিল তিন বছরের একটা ফুটফুটে শিশু কন্যা। সেও হাত ধরে মায়ের সঙ্গে হাঁটছিলেন। হাঁটতে হাঁটতে তারা সাফা মারওয়া ইলেকট্রনিক্স সেন্টারের সামনে পৌঁছালে হাত থেকে ছিঁটকে মুহূর্তেই নালায় ঢুকে পড়ে শিশুটি। এসময় চিৎকার দিয়ে মহিলা দুজন ফুটপাতে লুটিয়ে গর্তে হাত ঢুকিয়ে শিশুটিকে ধরে তুলে নেন।

আরও পড়ুন: ‘নালায় পড়ে ৫ মৃত্যু’ চউক—চসিকের রশি টানাটানি, বিব্রত আওয়ামী লীগ

শিশুটিকে নালা থেকে বের করার পর বুকে জড়িয়ে কান্না করতে থাকেন মা। মেয়েকে পেয়ে কান্না করতে করতে একপর্যায়ে সুখে জ্ঞান হারিয়ে পেলেন মা। ততোক্ষণে শত শত মানুষ জড়ো হয়ে পড়েন। কেউ দোকান থেকে বেরিয়ে দৌড়ে আসছেন। আবার কেউ কেউ মায়ের চিৎকার শুনে অনেক দূর থেকে দৌড়ে আসছেন। আসার পর সবাই তাদের সান্ত্বনা দিতে দেখা যায়।

শিশুটি যে যায়গায় ঢুকে পড়েন ওই জায়গায় কোনো স্ল্যাব ছিল না। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নীরব ভূমিকায় নালায় পড়ে একের পর এক মৃত্যুর পরও টনক নড়ছে না তাদের। শুধু স্বপ্না নয়, গত আট মাসে নগরের মুরাদপুর, দুই নম্বর গেইট ও আগ্রাবাদ এলাকায় নালায় পড়ে প্রাণ হারায় পাঁচজন।

এ বিষয়ে পথচারীদের সঙ্গে কথা হয় প্রতিবেদকের। তারা জানান, নগরের নালা ও ফুটপাতগুলো যেন মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। এখন কোনো বর্ষাকাল না। তারপরও চলার পথে মানুষ নালায় ঢুকে যাচ্ছে।

তারা আরও জানান, গত পাঁচ মাসে পাঁচ পথচারীর মৃত্যু হলেও টনক নড়ে না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। দুই সংস্থার দায়সারা কাজের মাশুল সাধারণ জনগণকে নিতে হচ্ছে। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন, একে অপরের উপর দায় চাপানোতেই সীমাবদ্ধ। আমাদের নগরবাসীর একটাই দাবি, ফুটপাতের যেখানে স্ল্যাব নাই সেখানে স্ল্যাব দিয়ে যেন মেরামত করে দেয়। তাদের গুরুত্বহীন কাজের দায়ে যেন আর কারো মায়ের বুক খালি না হয়। আমরা সুস্থ জীবন নিয়ে বাঁচতে চাই।

এএইচ/এসআই

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!