চট্টগ্রাম রেলের ‘অনিয়মকাণ্ডের হোতা’ সেই কর্তা ফের ফিরল পাহাড়তলীতে

অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে বিভাগীয় রেলযান নিয়ন্ত্রক (ডিটিএলএন) মো. শাহিদ হোসেন খোকনকে দুবছর আগে পাহাড়তলী বিভাগীয় কন্ট্রোল থেকে বদলি করে সিআরবি জোনাল কন্ট্রোল অফিসে পাঠানো হয়। কিন্তু দুবছর শেষ হতেই সেই কর্মকর্তা আবারও বদলি হয়েছেন পাহাড়তলীর অফিসে। তাঁর বিরুদ্ধে দায়িত্বে অবহেলা, বাসা বাণিজ্য, নিয়োগ বাণিজ্যসহ রয়েছে বিস্তর অভিযোগ।

এদিকে পুনরায় তাঁর পাহাড়তলী অফিসে আসার খবরে সমালোচনা চলছে অফিসের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মধ্যে।

রোববার (৫ জানুয়ারি) রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের ডেপুটি চিফ অপারেটিং সুপারিনডেন্ট তৌষিয়া আহমেদ স্বাক্ষরিত এক আদেশে মো. শাহিদ হোসেন খোকনকে পাহাড়তলী বদলি করা হয়।

অভিযোগ রয়েছে, মো. শাহিদ হোসেন খোকন পাহাড়তলীতে ডিটিএলএন থাকাকালীন প্রায়সময় কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকতেন। অফিসকালীন সময়ে তিনি ব্যস্ত থাকেন রাজনীতিসহ ব্যক্তিগত কাজে। এমনকি তিনি রাতে দায়িত্ব পালন না করে ঘুমিয়ে থাকতেন। এসব কারণে রেল যোগাযোগে সমস্যা হতো। এ অবস্থায় তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ জমা পড়ে। তখন তাঁকে পাহাড়তলী থেকে সিআরবি বদলি করা হয়। এছাড়া ২০০৭ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত দায়িত্বকালীন সময়ে বাসা বাণিজ্য করে ৩১ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে গঠন হয়েছিল তদন্ত কমিটি।

অফিস সূত্রে জানা গেছে, খোকনের বিরুদ্ধে পোস্টিং বাণিজ্য, অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারীদের ফাইল আটকে রেখে টাকা আদায়, খালাসি নিয়োগ বাণিজ্যসহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে। দুদকেও তাঁর বিরুদ্ধে জমা পড়েছে একাধিক অভিযোগ।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, খোকনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় অফিসের বিভিন্ন কর্মচারীদের নিয়ে বিষোদগারেরও অভিযোগ রয়েছে। এর প্রতিবাদে স্টেশন মাস্টার কর্মচারীরা মানববন্ধনও করে। গত বছরের ২৮ ডিসেম্বর বাংলাদেশ রেলওয়ে মাস্টার ও কর্মচারী ইউনিয়ন চট্টগ্রাম বিভাগ পাহাড়তলীতে এ কর্মসূচি পালন করে। এছাড়া বিভাগীয় পরিবহন অফিসের কর্মকর্তারা তাঁর বিরুদ্ধে পরিবহন কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন।

নাম প্রকাশে রেলের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, পরিবহন কর্মচারীদের বিরুদ্ধে খোকন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্নভাবে বিষোদগার করেছেন। সেই খোকন এখানে কীভাবে স্বাচ্ছন্দ্যে কাজ করবেন?

তারা প্রশ্ন করেন, দায়িত্বে অবহেলাসহ দুর্নীতির জন্য যাকে পাহাড়তলী অফিস থেকে সিআরবি অফিসে বদলি করা হয়েছিল তিনি আবারও কীভাবে পাহাতলী ফেরত এসেছেন? এমন বদলি অন্যান্য দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের উৎসাহিত করবে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ে মাস্টার ও কর্মচারী ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সভাপতি মোখলেছুর রহমান আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, যে কর্মকর্তাকে অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে পাহাড়তলী অফিস থেকে বদলি করা হয়েছিল তাকে আবার কী কারণে পূর্বের কর্মস্থলে ফেরত পাঠানো হলো তা বুঝতে পারছি না। এসব দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার কারণে অন্যান্য দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা উৎসাহিত হবেন এবং রেল যোগাযোগ বাধাগ্রস্ত হওয়াসহ বিভিন্ন সেক্টরে দুর্নীতি আরও বাড়বে।

এদিকে অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে বিভাগীয় রেলযান নিয়ন্ত্রক (ডিটিএলএন) মো. শাহিদ হোসেন খোকন আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, বাসা বরাদ্দ দেওয়ার এখতিয়ার আমার নেই। এটি বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তার হাতে। বাসা বরাদ্দ, বদলি, নিয়োগ- এর কোনটিই সঠিক নয়। আমি রেলের কর্মকর্তা না, আমি একজন রেলের কর্মচারী। এগুলো কোনোটিই আমার এখতিয়ার নয়।

তিনি বলেন, আমি অফিস সহকারী বা কর্মকর্তা নই, আমার কাছে ফাইলপত্র আসার কোনো সুযোগ নেই। শ্রমিক লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত রয়েছি দীর্ঘদিন ধরে। রাজনীতির প্রতিপক্ষ মিথ্যা তথ্য দিয়ে আমাকে নানাভাবে করার চেষ্টা করছে।

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা (ডিটিও) তারেক মো. ইমরান আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, বাংলাদেশ রেলওয়ে একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান। এখানের প্রত্যেক কাজ নিয়ম অনুযায়ী চলে৷ এখানে ব্যক্তিকেন্দ্রিক কোনো কাজ নেই৷ কেউ যদি অন্যায় কিছু করে থাকে তার বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আরবি/আলোকিত চট্টগ্রাম

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!