চট্টগ্রামে ১২ খেকো গিলে খাচ্ছে কর্ণফুলীর ‘বাদামতল খাল’

কর্ণফুলী নদীসংলগ্ন চরপাথরঘাটার বাদামতল শাখা খালটি গিলে খাচ্ছে ১২ প্রভাবশালী দখলদার। এসব অবৈধ দখলদার খালের জমি দখল করে ঘরবাড়ি, রাস্তা ও বাথরুম নির্মাণ করেছেন।

জানা যায়, দীর্ঘদিন দখলদারদের বিরুদ্ধে কার্যকর আইনি ব্যবস্থা না নেওয়ায় অবৈধ দখলে খালটি সংকীর্ণ হয়ে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা ব্যাহত হচ্ছে। ফলে চরপাথরঘাটা এলাকায় বেড়েছে জলাবদ্ধতা।

সূত্র জানায়, একাধিকবার স্থানীয় চেয়ারম্যান খালের জায়গা ছেড়ে দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানালেও অবৈধ দখলদারেরা কানে নিচ্ছেন না। কারণ এ পর্যন্ত তাদের উচ্ছেদে কোনো অভিযান না হওয়ায় চেয়ারম্যানের কথাও গুরুত্ব পাচ্ছে না।

যদিও সম্প্রতি প্রশাসনের নির্দেশে জলাবদ্ধতার কারণ ও দখলদারদের চিহ্নিত করে তালিকা করেছেন ভূমি কর্মকর্তারা।

প্রশাসন সূত্র জানায়, খালটি খনন করে পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে এনে জলবদ্ধতা নিরসনে উদ্যোগ নেওয়া হবে। এজন্য অবৈধ দখলদারদের চূড়ান্ত তালিকা তৈরি এবং জমি জরিপ কার্যক্রম শুরু হচ্ছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণপাড়ের কন্টিনেন্টাল গ্রুপের জেটি থেকে বাদামতল খালটি শেষ হয়েছে সৈন্যেরটেক পুলের উপর। জোয়ারে নয়াহাট সেতুর মুখ ও বাদামতল খাল দিয়ে পানি প্রবেশ করতো। এখন আর এ খাল দিয়ে পানি প্রবেশের সুযোগ নেই। দখল-দূষণে পুরো খাল ভরাট হয়ে গেছে।

আরও পড়ুন: চট্টগ্রামে লরির ধাক্কায় মুচড়ে গেল কার, আওয়ামী লীগের ২ নেতা নিহত

ইউনিয়ন ভূমি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চরপাথরঘাটার ১ নম্বর সিটে সরকারি খাস খতিয়ানভূক্ত এই খালে ২৮৫ দাগে জমি রয়েছে প্রায় ৮৭ শতক। কিন্তু খালটির পুরানো ঐতিহ্য হারিয়ে গেছে দখলদারিত্বের কারণে। আগে খালটির প্রশস্ততা ছিল ৪০ থেকে ৫০ ফুট। কোনো কোনো জায়গায় ৩০ ফুট। এখন তা দিনে দিনে দখলে সংকুচিত হয়েছে।

এদিকে দখলদারদের একটি খসড়া তালিকা করা হয়েছে। তাতে দেখা গেছে খালটির দুপাশের দখলদারের সংখ্যা ১২ জন। এদের মধ্যে খালসংলগ্ন যাদের বাড়িঘর তাঁরা হলেন- রহমত, আব্দুর রাজ্জাক, আলা উদ্দিন, সোনা মিয়া, মো. মারুফ, মো. ফারুক, মো. এরশাদ, এজলাস, মুমিন, ইসলাম, গুনা মিয়া ও সাইফুদ্দীন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চরপাথরঘাটা এলাকার এক সংগঠক জানান, যারা বাদামতল খালটি দখল করেছেন তাঁরা সবাই আমার আত্মীয়। এরপরও এলাকার স্বার্থে বলতে হয় খালটি পুরোপুরি দখল-দূষণে অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে। প্রশাসনের উচিত দ্রুত উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে জলাবদ্ধতা থেকে এলাকাবাসীকে বাঁচানো।

এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম নদী ও খাল রক্ষা আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক এম আলীউর রহমান বলেন, বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি দখল ও দূষিত নদী হচ্ছে কর্ণফুলী। নদীর দুপাড়ে থাকা খালগুলোও অবৈধ দখলমুক্ত করা জরুরি হয়ে পড়েছে।

যোগযোগ করা হলে চরপাথরঘাটা ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা উজ্জ্বল কান্তি দাশ আলোকিত চট্টগ্রামকে, উপজেলা ভূমি অফিস থেকে খালটির বিষয়ে প্রতিবেদন চাওয়া হয়েছে। খালটির বর্তমান পরিস্থিতি ও দখলদার বিষয়ে প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে।

একই প্রসঙ্গে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ম্যাজিস্ট্রেট পিযুষ কুমার চৌধুরী বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা এবং খাল খনন করে পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এসআর/আলোকিত চট্টগ্রাম

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!