চট্টগ্রামে বইমেলা—ক্রেতার চেয়ে সেলফি তোলার লোক বেশি

সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও চট্টগ্রামে জমে উঠেনি অমর একুশে বইমেলা। এবারের মেলায় স্টল বাড়লেও বাড়েনি পাঠক। সেই সঙ্গে মেলা ঘিরে রয়েছে নানা অব্যবস্থাপনা। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ পাঠক থেকে শুরু করে বিক্রেতারাও।

গত ৮ ফেব্রুয়ারি নগরের এমএ আজিজ স্টেডিয়ামের সিজেকেএস জিমনেসিয়াম মাঠে শুরু হয় বইমেলা। তবে মেলার শুরুতে বই বিক্রির ধুম নেই। ক্রেতার চেয়ে ছবি ও সেলফি তোলা লোকই বেশি। এ নিয়ে হতাশার ছাপ পড়েছে বিক্রেতাদের মনে। তবুও বিক্রি বাড়ার প্রত্যাশায় রয়েছেন তারা।

বিভিন্ন স্টলের বিক্রেতারা বলেন, সবাই এসে বই হাতে নিয়ে দেখে এরপর ছবি তুলে চলে যায়। কিন্তু বই কেউ কিনছে না। তবে নির্দিষ্ট কিছু বই ভালো বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া কাগজের দাম বাড়ায় বইয়ের দামও দ্বিগুণ হয়েছে। তাই বই কেনায় পাঠকদের আগ্রহ কম দেখা যাচ্ছে।

সরেজমিন মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখা গেছে নানান অব্যবস্থাপনার চিত্র। ধুলোবালি কমাতে মেঠো পথে ইট বিছানোর কথা থাকলেও তা করা হয়নি। ইটের পরিবর্তে বিছানো হয়েছে ত্রিপল। ত্রিপলের উপর হাঁটতে গিয়ে ঘটছে দুর্ঘটনা।

মেলায় স্টল নিয়ে আসাদের কয়েকজন জানান, মেলায় ওয়াশরুমের সুব্যবস্থা নেই। একটি ওয়াশরুম থাকলেও ব্যবহারের পরিবেশ নেই। নেই যথাযথ পানির ব্যবস্থাও। খাওয়ার পানি নিয়ে রয়েছে অভিযোগ। মেলায় সবুজ রঙের ট্যাংকে পানি রাখা হলেও সেই পানি খাওয়ার উপযোগী নয়। সবমিলিয়ে রঙ হারাচ্ছে এবারের বই মেলা।

বিক্রেতাদের অভিযোগ, চট্টগ্রামে অমর একুশে বইমেলার খবরই জানে না অধিকাংশ মানুষ। মেলা ঘিরে তেমন একটা প্রচারণা নেই। তাই পাঠক সংকটে ভুগছে মেলা। এরপরও বিক্রি বাড়ায় আশায় সংশ্লিষ্টরা।

মেলা প্রাঙ্গণে আনিন্দ্য প্রকাশনী স্টলের দায়িত্বে থাকা গোলাম কিবরিয়া আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, বই বেচা একদম নেই। মানুষ আসবে, বই দেখবে এবং বইয়ের প্রতি তরুণদের আগ্রহ থাকবে এর ছিটেফোঁটাও এখানে নেই৷ সবাই দলবেঁধে এসে সেলফি তুলছে। আর কিছু বই হাতে নিয়ে দেখার পর চলে যাচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, তবে আমাদের প্রকাশনীর এবার বেশ কয়েকটি বই ভালো বিক্রি হচ্ছে। এগুলো হলো- মাহতাব হোসেনের সাতচল্লিশের ট্রেন, মোশতাক আহমেদের স্বপ্নখুনী, সায়েন্স ফিকশন, প্যারা সাইকোলজি।

অন্যধারা স্টলের মো. ইমরান খান বলেন, মেলায় পাঠক যা আছে সে অনুযায়ী বিক্রি নেই। আমাদের স্টলে দুটি বই ব্যাপক বিক্রি হচ্ছে। চট্টগ্রাম স্টলের পাশাপাশি ঢাকা বইমেলায়ও বইগুলো ব্যাপক বিক্রি হচ্ছে। বই দুটো হলো- সাদাত হোসেনের ‘সে এসে বসুক পাশে’ এবং ‘মায়ামৃগ’।

ইমরান আরও বলেন, ধুলোবালির কারণে বইগুলো বারবার পরিষ্কার করতে হচ্ছে। ওয়াশরুম ও সুপেয় পানির ব্যবস্থা নেই। প্রচার-প্রচারণা না থাকায় মেলায় পাঠকের সংখ্যাও কম।

গ্রন্থরাজ্য প্রকাশনীর মো. মিজান বলেন, বইয়ের দাম বেড়েছে কারণ কাগজের দাম বেশি৷ কিন্তু পাঠক তা বোঝার চেষ্টা করে না৷ এছাড়া তরুণদের বইয়ের প্রতি আগ্রহ একদম নেই বললেই চলে।

এদিকে মেলায় আসা অনেক পাঠক তাদের পছন্দের নির্দিষ্ট কিছু বই কিনতে আসছেন এবং দেখছেন। মেলা প্রাঙ্গণের একটি স্টলে কথা হয় চট্টগ্রাম সিটি কলেজের শিক্ষার্থী মাকসুদের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমি এসেছি আরিফ আজাদের বই কিনতে। কিন্তু এখনও খুঁজে পাইনি।

আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শাহরিয়ার আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, আমি হুমায়ূন আহমেদ, সাদাত হোসাইনের লেখা ছাড়াও রাজনৈতিক বিষয়ক বই কিনতে আসলাম। কিন্তু মেলা ঘুরে দেখছি তেমন একটা আমেজ নেই।

অক্ষরবৃত্ত প্রকাশনীর স্টলে কিছুটা ভিড় দেখা গেছে। স্টলটির দায়িত্বে থাকা তৌহিদুল ইসলাম নুহাশ বলেন, আমাদের স্টলে তোকিব তৌফিকের হিউম্যান বার্গার অ্যান্ড ক্লাড ক্যাফে, নিয়াজ মোরশেদ সায়েমের বিশেষ দ্রষ্টব্য, তৌফিকুল ইসলাম চৌধুরীর লেখা চট্টগ্রাম অতীত ও ঐতিহ্য, মহি মুহাম্মদের অনিন্দিতার একদিন, মাশহুদা খানমের ফ্রেন্ড রিকুয়েস্টসহ বেশ কয়েকটি বই সাড়া ফেলেছে। প্রতিবারের চেয়ে এবার পাঠক অনেক কম। তবুও আশা করছি পাঠকের সংখ্যা ও বিক্রি দ্রুত বাড়বে।

অন্যদিকে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের স্টলে নিরক্ষরের গল্পগুচ্ছ বইটি ঘিরে পাঠকের আগ্রহ সবচেয়ে বেশি। চট্টগ্রাম মেলায় বইটি না এলেও পাঠকের আগ্রহের কেন্দ্রে রয়েছে বইটি।

বই নিয়ে আগ্রহের কারণ জানতে চাইলে স্টলে থাকা ওমর ফারুক বলেন, এগারোজন নিরক্ষর ব্যক্তি লেখক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে এই বইয়ের মাধ্যমে। দেশের প্রত্যন্ত এলাকায় মাঠে, বাজারে কিংবা চায়ের আড্ডায় গল্পকারের খোঁজে ছুটেছিল বিদ্যানন্দ টিম। যারা নিরক্ষর, লিখতে পারে না তাদের গল্প শুনে বাছাইকৃত সেরা গল্পগুলো নিয়ে বইটি প্রকাশ হয়েছে।

প্রসঙ্গত, ২১ দিনব্যাপী অমর একুশে বইমেলার প্রায় ১ লাখ ২ হাজার ৩শ বর্গফুটের সুবিশাল আয়তনের মাঠজুড়ে স্টল রয়েছে ১৪০টি। এর মধ্যে ৩২টি ডাবল স্টল এবং ৭৬টি সিঙ্গেল স্টল। ঢাকা এবং চট্টগ্রামসহ মোট ১০৮টি প্রকাশনা সংস্থা এবার মেলায় অংশ নিচ্ছে।

এআইটি/আরবি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!