চট্টগ্রামে খামারে বেড়েছে পশু, কোরবানি চাহিদা মিটবে ‘লোকাল’ পশুতেই

চট্টগ্রামে বিগত বছরের তুলনায় এবার গবাদি পশুর উৎপাদন বেড়েছে। জেলার নিজস্ব খামারগুলোতে এবার কোরবানির উপযোগী পশুর উৎপাদন চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে এবারের ঈদে গরু-মহিষের দামে অনেকটাই লাগাম থাকবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

চট্টগ্রাম জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ২০২২ সালে চট্টগ্রামে কোরবানির পশুর চাহিদা রয়েছে ৮ লাখ ২১ হাজার। এর বিপরীতে এবার স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত পশুর সংখ্যা ৭ লাখ ৯১ হাজার ৫০১। যার মধ্যে গরু রয়েছে ৫ লাখ ৩৫ হাজার ৮০৩টি, মহিষ ৬৬ হাজার ২৩৭টি, ছাগল ও ভেড়া ১ লাখ ৮৯ হাজার ৩৬২টি এবং অন্যান্য পশু ৯৯টি। সবমিলিয়ে এবার চট্টগ্রামে কোরবানি পশুর ঘাটতি রয়েছে কেবল ২৯ হাজার ৪৯৯টি।

চট্টগ্রাম জেলার ১৫টি উপজেলা ও মহানগরের ৩টি মেট্রো প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর এলাকায় হৃষ্ট-পুষ্টিকর নিরাপদ গবাদি পশুর খামারগুলোতে এবার কোরবানির পশুর উৎপাদন বিগত বছরের তুলনায় বেড়েছে।

জেলার মিরসরাই উপজেলায় এবার ৩৫৯টি খামারে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত মোট পশুর সংখ্যা ৫৭ হাজার ৬৮০টি। এরমধ্যে ষাঁড় রয়েছে ২৫ হাজার ৩১৫টি, বলদ গরু ১৫ হাজার ১৪২টি, গাভী ১ হাজার ৩৪০টি, মহিষ ৫ হাজার ৪৯২টি, ছাগল ৬ হাজার ৬৮৫টি ও ভেড়া ৩ হাজার ৭০৬টি।

সীতাকুণ্ড উপজেলায় ২২০টি খামারে উৎপাদিত মোট পশুর সংখ্যা ৪৪ হাজার ২৪৮টি। এরমধ্যে ষাঁড় রয়েছে ২০ হাজার ৬১৩টি, বলদ গরু ৯ হাজার ৪১টি, গাভী ১ হাজার ৯০৯টি, মহিষ ২ হাজার ৩৯৪টি, ছাগল ৬ হাজার ৫৫৩টি এবং ভেড়া ৩ হাজার ৭৩৯টি।

সন্দ্বীপ উপজেলায় স্থানীয় ১২২টি খামারে উৎপাদিত মোট পশুর সংখ্যা ৬৯ হাজার ২২৩টি। এরমধ্যে ষাঁড় ২০ হাজার ৩২৯টি, বলদ গরু ৮ হাজার ১৪৫টি, গাভী ২ হাজার ৯২৩টি, মহিষ ১০ হাজার ৩২৯টি, ছাগল ১২ হাজার ৫৪৬টি ও ভেড়া ১৪ হাজার ৮৯১টি।

আরও পড়ুন: ‘ঈদ’—চট্টগ্রামে ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বেচাকেনা শুরু, চলবে ৫ জুলাই পর্যন্ত

ফটিকছড়ি উপজেলায় ৩৩৬টি খামারে এবার উৎপাদিত মোট পশুর সংখ্যা ৫১ হাজার ২৩৫টি। এরমধ্যে ষাঁড় ২৩ হাজার ৭৭৫টি, বলদ গরু ৮ হাজার ৯৩৭টি, গাভী ১ হাজার ৮৩৭টি, মহিষ ৩ হাজার ২৫৭টি, ছাগল ১০ হাজার ৫২৬টি এবং ভেড়া ২ হাজার ৯০৩টি।

রাউজান উপজেলার ৪৪০টি খামারে এ বছর উৎপাদিত মোট পশুর সংখ্যা ৩৮ হাজার ৬৫৩টি। এরমধ্যে ষাঁড় রয়েছে ১৯ হাজার ৬৮৩টি, বলদ গরু ৭ হাজার ৪৫৯টি, গাভী ৮৪৭টি, মহিষ ২ হাজার ৩৬৭টি, ছাগল, ৬ হাজার ৭৯৬টি এবং ভেড়া ১ হাজার ৫০১টি।

একইভাবে এ বছর রাঙ্গুনিয়া উপজেলার স্থানীয় ৪৩৭টি খামারে উৎপাদিত মোট পশুর সংখ্যা ৪৫ হাজার ৮১৮টি। এরমধ্যে ষাঁড় রয়েছে ২১ হাজার ৯৬৯টি, বলদ গরু ৯ হাজার ৩৫৯টি, গাভী ৯০১টি, মহিষ ২ হাজার ৭৮০টি, ছাগল ৮ হাজার ৪২১টি, ভেড়া ২ হাজার ২৮৯টি এবং অন্যান্য পশু ৯৯টি।

হাটহাজারী উপজেলার ৫৩৪টি খামারে এবার স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত মোট পশুর সংখ্যা ৪৪ হাজার ৬৪৬টি। এরমধ্যে ষাঁড় ২১ হাজার ১৮৪টি, বলদ গরু ৮ হাজার ৮৬১টি, গাভী ৯৩৫টি, মহিষ ৩ হাজার ১৫২টি, ছাগল ৮ হাজার ৯৩টি এবং ভেড়া ২ হাজার ৪২১টি।

বোয়ালখালী উপজেলার ৫১২টি খামারে এবার উৎপাদিত মোট পশুর সংখ্যা ৪৮ হাজার ১৩৩টি। এরমধ্যে ষাঁড় ২২ হাজার ১৮০টি, বলদ গরু ৮ হাজার ৬০৭টি, গাভী ১ হাজার ৮০৩টি, মহিষ ৬ হাজার ৪৯টি, ছাগল ৭ হাজার ৬৯৬টি এবং ভেড়া ১ হাজার ৭৯৮টি।

এবার পটিয়া উপজেলার ৯৯৭টি স্থানীয় খামারে মোট উৎপাদিত পশুর সংখ্যা ৭২ হাজার ৩১৭টি। এরমধ্যে ষাঁড় ৩২ হাজার ৯৬৩টি, বলদ গরু ১১ হাজার ২৩৬টি, গাভী ৮ হাজার ১৩৫টি, মহিষ ৪ হাজার ২৮৫টি, ছাগল ১০ হাজার ২৪৯টি এবং ভেড়া ৫ হাজার ৪৪৯টি।

চন্দনাইশ উপজেলায় ৬৫২টি খামারে উৎপাদিত মোট পশুর সংখ্যা ৪০ হাজার ৮৫৪টি। এরমধ্যে ষাঁড় ২১ হাজার ৫১টি, বলদ গরু ৭ হাজার ৭৮৯টি, গাভী ৮১৩টি, মহিষ ১ হাজার ৮৩৯টি, ছাগল ৮ হাজার ৫৬৫টি এবং ভেড়া ৭৯৭টি।

আনোয়ারা উপজেলার ৮১০টি খামারে এবার উৎপাদিত মোট পশুর সংখ্যা ৬৩ হাজার ৬৬৬টি। এরমধ্যে ষাঁড় ২৭ হাজার ১৮৭টি, বদল গরু ৮ হাজার ৫৫২টি, গাভী ৩ হাজার ২১৮টি, মহিষ ৯ হাজার ৬৬৭টি, ছাগল ১২ হাজার ৮১১টি এবং ভেড়া ২ হাজার ২৩১টি।

এবার চট্টগ্রাম জেলার সাতকানিয়া উপজেলায় স্থানীয় ৪৩৭টি খামারে উৎপাদিত মোট পশুর সংখ্যা ৪২ হাজার ১৬৯টি। এরমধ্যে ষাঁড় ২১ হাজার ৪০৩টি, বলদ গরু ৭ হাজার ৮৫৫টি, গাভী ১ হাজার ৩৫৩টি, মহিষ ২ হাজার ৫৪২টি, ছাগল ৭ হাজার ৫৪৯টি এবং ভেড়া ১ হাজার ৪৬৭টি।

লোহাগড়া উপজেলার স্থানীয় ৭১৫টি খামারে উৎপাদিত মোট পশুর সংখ্যা ৪৩ হাজার ৯৭৮টি। এরমধ্যে ষাঁড় ২২ হাজার ১টি, বলদ গরু ৮ হাজার ৫৯৩টি, গাভী ৬৮৩টি, মহিষ ১ হাজার ৪৩৩টি, ছাগল ১০ হাজার ১৩টি এবং ভেড়া ১ হাজার ২৫৫টি।

আরও পড়ুন: চট্টগ্রামে পথে পথে ছিনতাই, ৫০ মোবাইল নিয়ে ধরা পড়ল ৪ যুবক

বাঁশখালী উপজেলায় ৩২৪টি খামারে উৎপাদিত মোট পশুর সংখ্যা ৪১ হাজার ৭৮৩টি। এরমধ্যে ষাঁড় রয়েছে ২১ হাজার ৮৩৫টি, বলদ গরু ৫ হাজার ৪৪টি, গাভী ১ হাজার ৫৯টি, মহিষ ২ হাজার ৮৪১টি, ছাগল ৮ হাজার ৯৮৩টি এবং ভেড়া ২ হাজার ২১টি।

কর্ণফুলী উপজেলার ৭৭৫টি খামারে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত মোট পশুর সংখ্যা ৫৪ হাজার ৯৭৯টি। এরমধ্যে ষাঁড় ২৫ হাজার ৯১৭টি, বলদ গরু ৭ হাজার ২৮১টি, গাভী ১ হাজার ৯৪৭টি, মহিষ ৭ হাজার ৩৫৭টি, ছাগল ১১ হাজার ৪২৪টি এবং ভেড়া রয়েছে ১ হাজার ৫৩টি।

এদিকে এবার চট্টগ্রাম মহানগরের কোতোয়ালী থানা এলাকায় ১১৭টি স্থানীয় খামারে উৎপাদিত মোট পশুর সংখ্যা ৪ হাজার ৭০২টি। যার মধ্যে ষাঁড় ১ হাজার ৬৯৭টি, বলদ গরু ১ হাজার ১৫৭টি, গাভী ১ হাজার ২১২টি, মহিষ ২৯টি, ছাগল ৪০৭টি এবং ভেড়া ১৯১টি।

ডবলমুরিং থানা এলাকার ১৭টি স্থানীয় খামারে উৎপাদিত মোট পশুর সংখ্যা ৯ হাজার ১৬৭টি। এরমধ্যে ষাঁড় ৪ হাজার ৪৯৯টি, বলদ গরু ১ হাজার ৪৯২টি, গাভী ১ হাজার ৬৫৯টি, মহিষ ৯৭টি, ছাগল ১ হাজার ৬১টি এবং ভেড়া ৩৫৯টি।

এছাড়া পাঁচলাইশ থানা এলাকায় ১৮টি খামারে এবার স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত মোট পশুর সংখ্যা ১৮ হাজার ২৫০টি। এরমধ্যে ষাঁড় রয়েছে ১০ হাজার ৪৭৩টি, বলদ গরু ১ হাজার ৬৯৭টি, গাভী ২ হাজার ৮৯৯টি, মহিষ ৩২৭টি, ছাগল ২ হাজার ২৯৭টি এবং ভেড়া ৫৫৭টি।

জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর জানায়, ২০২১ সালে চট্টগ্রামে কোরবানির পশুর স্থানীয় উৎপাদন ছিল ৭ লাখ ৫৬ হাজার ৩৩৪টি। ওই বছর পশু জবাই হয়েছিল ৭ লাখ ৪২ হাজার ৪৫৫টি। বিগত বছরগুলোর মধ্যে কেবল ওই বছর চাহিদার তুলনায় প্রায় ১৩ হাজার ৮৭৯টি কোরবানির পশু বেশি ছিল।

২০২০ সালে স্থানীয় উৎপাদন ছিল ৬ লাখ ৮৯ হাজার ২২টি। জবাই হয়েছিল ৭ লাখ ৩৫ হাজার ৫৫৬টি। ঘাটতি ছিল ৪৮ হাজার ৫৩৪টি। ২০১৯ সালে স্থানীয় উৎপাদন ছিল ৬ লাখ ১০ হাজার ২১৯টি। ওই বছর পশু জবাই হয়েছিল ৭ লাখ ৩০ হাজার ৭৮৯টি। ঘাটতি ছিল ১ লাখ ২০ হাজার ৫৭০টি।

একইভাবে ২০১৮ সালে চট্টগ্রাম জেলায় স্থানীয় উৎপাদন ছিল ৫ লাখ ৮১ হাজার ৬৩৪টি। পশু জবাই হয়েছিল ৬ লাখ ৫৫ হাজার। ঘাটতি ছিল ৭৩ হাজার ৩৬৬টি।

২০১৭ সালে স্থানীয় পশু উৎপাদন ছিল ৩ লাখ ৫৬ হাজার ১৬৩টি। পশু জবাই হয়েছিল ৫ লাখ ৯৫ হাজার ৮৩১টি। ঘাটতি ছিল ২ লাখ ৩৯ হাজার ৬৬৮টি।

২০১৬ সালে স্থানীয় পশু উৎপাদন ছিল ৩ লাখ ৩৬ হাজার ১১৯টি। পশু জবাই হয়েছিল ৫ লাখ ১৬ হাজার ৮৬২টি। ঘাটতি ছিল ১ লাখ ৮০ হাজার ৭৪৩টি।

এছাড়া ২০১৫ সালে স্থানীয় পশু উৎপাদন ছিল ৩ লাখ ২০ হাজার। পশু জবাই হয়েছিল ৪ লাখ ৯২ হাজার ২৫০টি। ঘাটতি ছিল ১ লাখ ৭২ হাজার ২৫০টি।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. দেলোয়ার হোসেন আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, বিগত বছরগুলোতে কোরবানির ঈদে গবাদি পশুর চাহিদার তুলনায় অনেক ঘাটতি থাকত। যার ফলে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে গরু আসা নিয়ে নানা দুঃশ্চিন্তা ছিল। এছাড়া দাম নিয়েও নানা গড়িমসি হয়েছিল। তবে এবারের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। এবারের কোরবানির ঈদে চট্টগ্রাম জেলায় গবাদি পশুর সম্ভাব্য চাহিদা হচ্ছে ৮ লাখ ২১ হাজার। আর জেলার ১৫টি উপজেলা ও ৩টি মেট্রোপলিটন থানা এলাকাজুড়ে এবার নিজস্ব উৎপাদন হয়েছে ৭ লাখ ৯১ হাজার ৫০১টি।

তিনি আরও বলেন, বেশ কয়েক বছর ধরে চাহিদা ও উৎপাদনের মধ্যে লাখের চেয়েও বেশি পার্থক্য থাকত। এবার কিন্তু সেটা নেই। এ বছর জেলায় মোট গবাদি পশুর উৎপাদন ও সম্ভাব্য চাহিদা প্রায় কাছাকাছি। ফলে এবার হাটে গরু-মহিষের তেমন ঘাটতি থাকবে না। তাই এবার দামও অন্যান্য বছরের তুলনায় অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে থাকবে বলে মনে করছি। এছাড়া এবার চট্টগ্রাম জেলার মধ্যেই যেহেতু চাহিদামতো উৎপাদন হয়েছে, তাই যদি জেলার বাইরে থেকে গরু-মহিষ বেশি চলে আসে তা জেলার স্থানীয় খামারগুলোর জন্য দুঃশ্চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়াতে পারে।

আলোকিত চট্টগ্রাম

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!