চট্টগ্রামের ‘ফাঁদ’ খালের বাঁধ, এবার ড্রেনের পানিতেই ডুবছে রাস্তা

চট্টগ্রামে খালের বাঁধই এখন পরিণত হয়েছে ফাঁদে। রির্টার্নিং ওয়াল নির্মাণের জন্য খালে দেওয়া অস্থায়ী বাঁধে জমছে পানি। ড্রেনের নোংরা পানিতে ডুবছে নগরের রাস্তা থেকে অলিগলি।

বাঁধের কারণে বিভিন্ন এলাকার ড্রেনের পানি যেতে পারছে না খালে। এতে নোংরা পানিতে ডুবছে রাস্তা, অলিগলি ও নিচতলার বাসা-বাড়ি। পানি উঠলে নামছে না সহজে। জমে থাকছে সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে। এতে দিন দিন ভোগান্তি বাড়ছে বিভিন্ন এলাকার মানুষের।

সরেজমিন নগরের চকবাজার, পশ্চিম বাকলিয়া ও পূর্ব ষোলশহর ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে ভোগান্তির এ চিত্র।

এদিকে খালে দেওয়া বাঁধের কারণে এলাকার রাস্তা ও অলিগলিতে পানি জমে থাকছে— বলছেন খোদ স্থানীয় কাউন্সিলরও।

তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জনভোগান্তি লাঘবে তারা কাজ করছেন। অভিযোগ পেলেই নেওয়া হচ্ছে ব্যবস্থা। চলতি বছরেই চাক্তাই খাল ছাড়া অন্যান্য খালের কাজ শেষ করার আশা করা হচ্ছে।

এদিকে নগরের পশ্চিম বাকলিয়া ডিসি রোড এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, রাস্তায় হাঁটুর নিচে জমে আছে নোংরা পানি। সেই পানি ছড়িয়ে গেছে গনি কলোনির আগে থেকে কাউন্সিলরের বাসার সামনে পর্যন্ত। নোংরা পানি থেকে বাঁচতে অনেকেই ১০ টাকা দিয়ে রিকশা করে পার হচ্ছেন।

আবার অনেকে নোংরা পানিতেই হেঁটে চলে যাচ্ছেন গন্তব্যে। পানি থেকে বের হচ্ছে উৎকট দুর্গন্ধ। আশপাশের এলাকার বিভিন্ন অলিগলিতেও জমে আছে পানি। অপরদিকে চকবাজার ধুনীরপুল সংলগ্ন সংযুক্ত চাক্তাই খালে রিটার্নিং ওয়াল নির্মাণকাজ চলছে।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, ধুনীপুল সংলগ্ন খালে বাঁধ তৈরি ও পানি যাওয়ার কোনো বিকল্প ব্যবস্থা না করার কারণে প্রতিদিন রাস্তা ও অলিগলিতে পানি জমে থাকছে। ফলে দিন দিন জনভোগান্তি বাড়ছে। এসব দেখারও কেউ নেই।

দোকানিরা জানান, প্রায় দুসপ্তাহ ধরে পানি জমে আছে রাস্তায়। চলাচলে ভোগান্তির শেষ নেই। ধুনীরপুল সংলগ্ন চাক্তাই খালে বাঁধ দিয়ে কাজ করার কারণেই এ ভোগান্তি। এছাড়া প্রতিদিন জোয়ারে পানিতে তলিয়ে যায় রাস্তা।

স্থানীয় বাসিন্দা লাকি আক্তার বলেন, দুর্গন্ধ ও ময়লা পানিতেই প্রায় দুসপ্তাহ ধরে যাওয়া-আসা করছি। আমাদের কষ্ট দেখার কেউ নেই। কবে যে এ দুর্ভোগ থেকে মুক্তি মিলবে কে জানে! কাউন্সিলরকে অভিযোগ করেও সুফল পাচ্ছি না।

দোকানি আবদুর রাজ্জাক বলেন, পানি জমে থাকার দোকানে বেচাবিক্রি কমে গেছে। ক্রেতারা কেউ আসছে না। কখন যে দোকানে পানি ঢুকে পড়ে এই চিন্তায় রাতের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। যদি দোকানে পানি ঢুকে মালপত্র নষ্ট হয়ে যায় তাহলে অনেক টাকার ক্ষতির মুখে পড়ব। যা কাটিয়ে উঠা আর সম্ভব নাও হতে পারে।

এ বিষয়ে জানতে ১৭ নম্বর পশ্চিম বাকলিয়া ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. শহিদুল আলমের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।

এদিকে ৬ নম্বর পূর্ব ষোলশহর ওয়ার্ডের ওমর আলী মাতব্বর লেইনে কয়েকটি অলিগলিতে পানি জমে থাকতে দেখা গেছে। লক্ষ্মীর মাঝির বাড়ির গলিতে পানি জমে আছে সপ্তাহের বেশি সময়। ড্রেন পরিষ্কার করেও মিলছে না সুফল। কারণ খালে পানি যেতে পারছে না। এছাড়া পাশের কয়েকটি গলিতেও দেখা গেছে একই চিত্র।

এলাকার বাসিন্দা ও দোকানিরা জানান, বির্জা খালে বাঁধের কারণে বিভিন্ন এলাকার ড্রেনের পানি চলাচল বন্ধ। ফলে জোয়ার ছাড়াও তলিয়ে যাচ্ছে নিচু এলাকার রাস্তা ও অলিগলি। জোয়ার এলে পানির উচ্চতা আরও বাড়ে। তখন হেঁটে চলাচল করা কঠিন হয়ে পড়ে। এখন এলাকার মানুষ ১০ টাকা দিয়ে রিকশা করে পার হচ্ছে।

এলাকার বাসিন্দা মো. ওয়াজিউল্লাহ বলেন, খালের বাঁধ দিয়ে কাজ করার পর থেকে এলাকার বিভিন্ন অলিগলিতে প্রায় প্রতিদিন পানি জমে থাকছে। লক্ষ্মী মাঝির বাড়ির গলিতে এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে পানি জমে আছে। কাউন্সিলর মহোদয়কে জানানোর পর তিনি ড্রেন পরিষ্কার করে দিয়েছেন। কিন্তু এরপরও পানি নামছে না।

যোগাযোগ করা হলে ৬ নম্বর পূর্ব ষোলশহর ওয়ার্ড কাউন্সিলর এম আশরাফুল আলম আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে বির্জা খালে দেওয়া বাঁধ এলাকার বিভিন্ন অলিগলিতে পানি জমে থাকার অন্যতম কারণ। তাই বিভিন্ন এলাকার ড্রেন পরিষ্কার করা হলেও এলাকাবাসী সুফল পাচ্ছে না। যতদিন পর্যন্ত খালে বাঁধ থাকবে ততদিন পানি জমে থাকার দুর্ভোগ থাকবে। যদি খালের মুখে জমে থাকা পানিগুলো পাম্পিং করে বের করে দেওয়া যায় তাহলে দুর্ভোগ কিছুটা হলেও কমবে।

তিনি বলেন, বাসা-বাড়ির পানিগুলো ড্রেনের মাধ্যমে খালে যায়। এখন বাঁধের কারণে পানিগুলো স্বাভাবিকভাবে যেতে পারছে না। ফলে নিচু এলাকার মানুষের দুর্ভোগ বাড়ছে। এই বিষয়টি আমি সিডিএ’র বোর্ড সভায়ও তুলে ধরেছি।

তিনি আরও বলেন, আমার ওয়ার্ডের ওমর আলী মাতব্বর লেইনের বিভিন্ন এলাকার অলিগলি ও নিচতলার বাসা-বাড়িতে পানি জমে আছে দীর্ঘদিন। মানুষকে জবাব দিতে দিতে আমি ক্লান্ত। মেয়র মহোদয় ও সিডিএ চেয়ারম্যানকে সমস্যার বিষয়ে অবহিত করেছি।

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে জলাবদ্ধতা নিরসনে মেগা প্রকল্প পরিচালক লে. কর্নেল মোহাম্মদ শাহ আলী আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, আমাদের কাছে যখনই এ ধরনের অভিযোগ আসছে তখনই আমরা সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছি। জনভোগান্তি যাতে না হয় সেদিকে আমরা নজর রাখছি এবং নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছি। কোনো এলাকায় পানি জমে থাকার খবর এলেই সেখানে দ্রুত নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, অধিকাংশ মানুষ তাদের টয়লেটের লাইন দিয়ে রেখেছেন খালে। এখন আমি যখন কাজ করতে যাব তখন তো মানববর্জ্য খালে আসতে দেব না। এখন এসব লাইন বন্ধ করে দেওয়ায় তাদের কষ্ট হচ্ছে। কারণ খালের পাড়ে ঘর করে সব টয়লেটের লাইন দেওয়া হয়েছে খালের মধ্যে। তখন কিন্তু কেউ চিন্তা করেনি তাদের সেপটিক ট্যাংক তৈরি করতে হবে। তবে এখন সবাইকে সেপটিক ট্যাংক অবশ্যই তৈরি করতে হবে। কারণ পরবর্তীতেও মানববর্জ্য খালে আসতে দেওয়া হবে না।

তিনি আরও বলেন, আশা করছি চলতি বছরের শুষ্ক মৌসুমের মধ্যেই অধিকাংশ বড় খালের কাজ শেষ হয়ে যাবে। যদিও চাক্তাই খালের কাজ এবছরও শেষ হবে না। আরও একটা বছর সময় লাগবে। আমরা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব কাজ শেষ করার চেষ্টা করছি। দ্রুততার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছি যাতে জনভোগান্তি কম হয়।

লে. কর্নেল আলী বলেন, কাজ করতে গেলে একটু কষ্ট তো হবেই। কারণ পানি চলাচল বন্ধ করেই কাজ করতে হচ্ছে। যাদের ঘর ভাঙছে এবং যাদের ঘরে পানি উঠছে তাদেরও কষ্ট হচ্ছে। এছাড়া আমার লোক যখন কাজ করছে তাদেরও কষ্ট হচ্ছে। কষ্ট অনেক দিক দিয়েই হচ্ছে। সাময়িক এই কষ্ট নগরবাসীকে মেনে নেওয়ার অনুরোধ জানান তিনি।

আলোকিত চট্টগ্রাম

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!