গরিবের লাশ দাফন—সিন্ডিকেটের কারসাজিতে বন্ধ বিনামূল্যের ‘শেষ স্পর্শ’

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে নিয়ে আসা বেওয়ারিশ ও গরিব পরিবারের লাশ বিনামূল্যে গোসল ও কাফনের জন্য তৈরি করা হয় ‘শেষ স্পর্শ’ নামের গোসলখানা। কিন্তু এটি বন্ধ করে দিয়েছে চমেক কর্তৃপক্ষ।

কেন গোসলখানাটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে জানতে চেয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেছেন এনজিও সংস্থা আলহাজ্ব শামশুল হক ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মু. নাছির উদ্দিন।

সোমবার (৬ ডিসেম্বর) বিচারপতি মামুনুর রহমান ও খন্দকার দিলিরুজ্জামানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে শুনানি শেষে আদালত স্থিতিবস্থার আদেশ দেন।

রিটের প্রার্থনায় বলা হয়, নগরের বেওয়ারিশ ও গরিব-দুস্থ লাশের গোসল এবং কাফনের জন্য পুরাতন লাশ গোসলখানার পাশে এনজিও সংস্থা আলহাজ্ব শামশুল হক ফাউন্ডেশনের অর্থায়নে ‘শেষ স্পর্শ’ নামে একটি নতুন গোসলখানা নির্মাণের জন্য অনুমতি চাওয়া হয় হাসপাতালের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল এসএম হুমায়ূন কবিরের কাছে। গত ৫ আগস্ট পরিচালকের স্বাক্ষরিত অনুমতিক্রমে ‘শেষ স্পর্শ’ নামে আধুনিক লাশ গোসলখানার নির্মাণকাজ শুরু হয়। নির্মাণকাজ শেষে গত ১৯ সেপ্টেম্বর গোসলখানাটি উদ্বোধনের জন্য চমেক কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়। কিন্তু কোনো কারণ ছাড়া চমেক কর্তৃপক্ষ ‘গরিব-দুস্থদের জন্য সম্পূর্ণ বিনামূল্যে কাফন ও দাফন’ লেখা সম্বলিত গোসলখানার সাইনবোর্ডটি খুলে সেখানে তালা লাগিয়ে দেয়। পরে এসব শব্দ বাদ দিয়ে চমেক কর্তৃপক্ষের নীতিমালা অনুসারে তৈরি করা সাইনবোর্ড নির্মাণ করার পরও গোসলখানাটি চালু করতে দেওয়া হয়নি।

ফলে এনজিওর জনকল্যাণমূলক ও জনস্বার্থে অলাভজনক কর্মকাণ্ডে বেআইনি বাধা অপসারণে জন্য রিট দায়ের করা হয়।

আরও পড়ুন : নিয়ন্ত্রণ হারানো ট্রাকের ধাক্কা—মুহূর্তেই লাশ যুবক, হাসপাতালে রক্তাক্ত সঙ্গী

বিষয়টি নিশ্চিত করে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. আবু হানিফা আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, বিচারপতি মামুনুর রহমান ও খন্দকার দিলিরুজ্জামের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে শুনানি শেষে আদালত স্থিতিবস্থার আদেশ দেন। আজকেই অর্ডারটি পাস হয়। রিট পিটিশনে চমেক হাসপাতালের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল এসএম হুমায়ূন কবিরসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্যদের বিবাদি করে সংবিধানের ১০২ ধারায় রিট মামলাটি দায়ের করা হয়।

তিনি আরও বলেন, নগরে প্রতিদিন ১০ থেকে ১৫ জন গরীব-দুস্থ ও বেওয়ারিশ লাশ আসে। গরিব পরিবারের পক্ষে ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা খরচ করে লাশের গোসল ও কাফন করার সামর্থ্য থাকে না। নগর ছাড়াও ফেনী, রাঙামাটি, বান্দরবান, খাগড়াছড়িসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে গরিব মানুষরা আসে। তাদের কথা চিন্তা করে আলহাজ্ব শামশুল হক ফাউন্ডেশনের অর্থায়নে গোসলখানাটি চমেক কর্তৃপক্ষের অনুমতিক্রমে নির্মাণ করা হয়েছিল। এনজিও সংস্থাটি একটি জনকল্যাণমূলক ও অলাভজনক প্রতিষ্ঠান। গোসলখানাটি বন্ধ করে দেওয়ার পেছনে একটি সিন্ডিকেট রয়েছে। তাদের লাশ নিয়ে অসাধু ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাবে। যার কারণে তারাই এসব করছে।

এএইচ/ডিসি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!