কক্সবাজারে যুবলীগের নতুন কমিটি জুলাইয়েই, থাকছে চমক

চলতি জুলাই মাসের শেষদিকে ঘোষণা হতে পারে কক্সবাজার জেলা যুবলীগের কমিটি। ইতোমধ্যে কক্সবাজার জেলা থেকে আহ্বায়ক ও যুগ্ম আহ্বায়কের জন্য নেতাদের জীবনবৃত্তান্ত সংগ্রহ করেছে কেন্দ্রীয় যুবলীগ। কেন্দ্রীয় যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ দেশে ফিরলে কমিটির ঘোষণা আসতে পারে বলে ধারনা করছেন জেলা যুবলীগ নেতারা।

সূত্রমতে, কক্সবাজার জেলা যুবলীগকে ঢেলে সাজানোর জন্য সম্প্রতি বাহাদুর-সোহেল কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় যুবলীগ। পরে নতুনভাবে আহ্বায়ক কমিটি দিতে জীবনবৃত্তান্ত সংগ্রহ করে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কক্সবাজার জেলা যুবলীগের নেতৃত্বে আসতে অন্তত অর্ধশত যুবলীগ ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতারা কেন্দ্রীয় যুবলীগের দপ্তরে নিজেদের জীবন বৃত্তান্ত জমা দিয়েছেন। নতুন কমিটিতে কারা আহ্বায়ক, যুগ্ম আহ্বায়ক ও সদস্য হচ্ছেন সেদিকে তাকিয়ে আছেন কক্সবাজার জেলার তৃণমূল পর্যায়ের হাজার হাজার কর্মী।

জানা গেছে, গত ৮ জুন কক্সবাজার জেলা যুবলীগের কমিটি বাতিল ও সাধারণ সম্পাদক শহিদুল হক সোহেলকে বহিষ্কার করে কেন্দ্রীয় যুবলীগ। এরপর জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক ও যুগ্ম আহ্বায়ক পদে আগ্রহীদের কাছ থেকে জীবনবৃত্তান্ত আহ্বান করে কেন্দ্রীয় যুবলীগ। এরই ধারাবাহিকতায় আহ্বায়ক ও যুগ্ম আহ্বায়ক হতে অর্ধশত নেতা নিজেদের জীবনবৃত্তান্ত জমা দেন।

এদের মধ্যে রয়েছেন— সদ্য বাতিল কমিটির সভাপতি সোহেল আহমদ বাহাদুর, বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক শহিদুল হক সোহেল, যুবলীগ নেতা জিএম জাহিদ ইফতেকার, জেলা যুবলীগের সাবেক দপ্তর সম্পাদক ও দুবারের নির্বাচিত ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল মাবুদ, শহর যুবলীগের সাবেক আহ্বায়ক শোয়েব ইফতেখার, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি ও জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক বেন্টু দাশ, সদর উপজেলা যুবলীগ সভাপতি ইফতেখার উদ্দিন পুতু, কেন্দ্রীয় যুবলীগ সদস্য ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ইশতিয়াক আহমদ জয়, রামু উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি রিয়াজুল আলম, চকরিয়া উপজেলা যুবলীগ সভাপতি শহিদুল ইসলাম শহিদ, ঈদগাঁও উপজেলার যুবলীগ নেতা জাহাঙ্গীর আলমসহ আরও অনেকে।

এদিকে সদ্য বাতিল কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পুনরায় দায়িত্ব পেতে জীবনবৃত্তান্ত জমা দেওয়ায় তৃণমূলের অনেক নেতাকর্মীর মাঝে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন যুবলীগ নেতা জানান, দীর্ঘ সাড়ে ৫ বছরের মধ্যে ওই কমিটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক জেলা যুবলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছেন। সে কারণে গত ৮ জুন ওই কমিটি বাতিল ও সাধারণ সম্পাদককে বহিষ্কার করা হয়। কিন্তু তারপরও ক্ষমতার লোভে তারা পুনরায় দায়িত্ব পেতে লবিং করছেন।

এদিকে কক্সবাজার জেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি সোহেল আহমদ বাহাদুর আহ্বায়ক হতে জীবনবৃত্তান্ত জমা দেওয়ার কথা স্বীকার করে আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, সাড়ে ৫ বছরে পূর্ণাঙ্গ জেলা কমিটি করতে না পারার কথা সম্পূর্ণ মিথ্যা। সত্যটা সাধারণ নেতাকর্মীরা জানেন না। সম্মেলনের পরেই পূর্ণাঙ্গ কমিটি করে কেন্দ্রে জমা দিয়েছিলাম। কমিটি অনুমোদন দেওয়ার দায়িত্ব কেন্দ্রের। কী কারণে কমিটির অনুমোদন দেওয়া হয়নি সেটা উনারাই বলতে পারবেন। এখানে জেলা কমিটির কোনো ব্যর্থতা ছিল না, ব্যর্থতা ছিল কেন্দ্রের।

একাধিক সূত্র বলছে, আহ্বায়ক পদে সার্বিক বিবেচনা ও গ্রহণ যোগ্যতায় এগিয়ে রয়েছেন জিএম জাহিদ ইফতেকার। এছাড়া যুগ্ম আহ্বায়ক পদে চমক হিসেবে আসতে পারেন আবদুল মাবুদ।

নেতারা বলছেন, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার আমলে কক্সবাজার পৌর এলাকার মতো গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় যুবলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন আবদুল মাবুদ। তাছাড়া জোট সরকার আমলে একাধিক মিথ্যা মামলায় কারাবন্দীও ছিলেন তিনি। তাই জেলার যুবলীগের তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের পছন্দের তালিকার অগ্রে রয়েছেন তিনি।

অন্যদিকে ক্লিন ইমেজের যুবনেতা শোয়েব ইফতেখারও আহ্বায়ক হওয়ার দৌড়ে পিছিয়ে নেই। আগের কমিটির নানা অনিয়ম তুলে ধরে কেন্দ্রের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তুলেছেন তিনি। এ কারণে তাঁর অবস্থান ভালো বলে মনে করেছেন নেতাকর্মীরা।

এদিকে আহ্বায়কের পদ পেতে কেন্দ্র থেকে শুরু করে নানা জায়গায় লবিং করে যাচ্ছেন বেন্টু দাশ এবং ইফতেখার উদ্দিন পুতু। এদের মধ্যে বেন্টু দাশ সদ্য সমাপ্ত কক্সবাজার পৌর নির্বাচনে নৌকার প্রার্থীকে বিজয়ী করতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। আওয়ামী রাজনীতির সব আন্দোলন-সংগ্রামেও তিনি দলের সঙ্গে রাজপথে থেকেছেন।

আহ্বায়ক নিয়ে জোর প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকলেও যুগ্ম আহ্বায়কের পদে জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও কেন্দ্রীয় যুবলীগ সদস্য ইশতিয়াক আহমদ জয় অনেকটাই এগিয়ে আছেন বলে মনে করছেন তৃণমূল নেতাকর্মীরা।

উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের ৩০ মার্চ কক্সবাজার জেলা যুবলীগের সর্বশেষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেই সম্মেলন ও কাউন্সিলে প্রত্যক্ষ ভোটে সোহেল আহমদ বাহাদুর সভাপতি এবং শহিদুল হক সোহেল সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন।

আলোকিত চট্টগ্রাম

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!