এসপি বাবুল আক্তার—আদালতে আসতে হচ্ছে একইদিন আসামি, সাক্ষী হয়ে

একইদিন আদালতের কাঠগড়ায় আসামি ও সাক্ষী হয়ে দাঁড়াবেন সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা বাবুল আক্তার। আগামী ১৩ মার্চ মাহমুদা খানম মিতু হত্যা মামলায় চার্জগঠনের শুনানির দিন ধার্য রয়েছে। সেদিন অস্ত্র আইনের একটি মামলায় একই আদালতে সাক্ষ্যও দেবেন তিনি।

সোমবার (২০ ফেব্রুয়ারি) তৃতীয় চট্টগ্রাম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মো. জসিম উদ্দিনের আদালতে মিতু হত্যার চার্জগঠন শুনানির দিন ধার্য ছিল। কিন্তু সেদিন আসামি বাবুল আক্তার আদালতে হাজির হননি। পরে আদালত আগামী ১৩ মার্চ পরবর্তী তারিখ নির্ধারণ করেন।

এদিকে একই আদালতে ডবলমুরিং থানার ২০০৮ সালের অস্ত্র ও বিস্ফোরক আইনের মামলায় বিচার কার্যক্রম শুরু হয়। এ মামলার অন্যতম সাক্ষী সাবেক এসপি বাবুল আক্তার।

বুধবার (২২ ফেব্রুয়ারি) ওই মামলায় সাক্ষ্য দেওয়ার দিন ধার্য ছিল বাবুলের। কিন্তু ১৩ মার্চ মিতু হত্যা চার্জগঠন শুনানির দিন ধার্য থাকায় একইদিন সাক্ষ্যগ্রহণের দিনও ধার্য করেন আদালত।

আদালত সূত্রে জানা যায়, ২০০৮ সালের ২ সেপ্টেম্বর বিকেল সোয়া ৫টার দিকে আগ্রাবাদ উত্তরা মোটরসের পাশে বাবুল আক্তারের নেতৃত্বে অভিযান পরিচালনা করে ডবলমুরিং থানা পুলিশ। এসময় বিপ্লব নামে এক আসামি গুলি বের করে ধরলে তাকে জাপটে ধরেন বাবুল আক্তার। এছাড়া বিপ্লবের সঙ্গে থাকা আরও দুজনকে এসময় গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

গ্রেপ্তাররা হলেন- হাটহাজারী উপজেলার ইজিলপুর সিকদারপাড়ার হাজী নুরুল ইসলামের ছেলে মো. বিপ্লব, বাঁশখালী পুকুরিয়া চৌধুরীপাড়া এলাকার দুলাল সিকদারের ছেলে মো. আলাউদ্দিন ও চকরিয়া বুড়ি পুকুর এলাকার ডা. জমির হোসেনের ছেলে মো. মিজানুর রহমান।

গ্রেপ্তার আসামিদের কাছ থেকে ৬ রাউন্ড লোড করা গুলিসহ বিদেশি পিস্তল, সিগারেটের প্যাকেটে ১১ রাউন্ড গুলিসহ মোট ১৭ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করে পুলিশ। এছাড়া একটি চাপাতি, একটি ছুরি ও একটি ককটেল উদ্ধার করা হয়।

আসামিরা জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, ফটিকছড়ি ধর্মপুর এলাকার মৃত হাফিজুর রহমানের ছেলে জাহাঙ্গীর আলম (৪৪) এক কিলিং মিশনের জন্য এসব অস্ত্র তাদের দেন। মূলত ফটিকছড়ির ফতেহপুর এলাকার মো. রাশেদ (২৬) ও ধর্মপুর এলাকার মৃত খলিলুর রহমানের ছেলে শামসুল আলম গুন্নুকে (৫৫) হত্যা করার জন্য তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। মিশন বাস্তবায়ন করতে তারা ঘটনাস্থলে অবস্থান নেয়।

আসামিদের দেওয়া তথ্যে জানা যায়, জাহাঙ্গীর আলমের খোঁজে তার চট্টগ্রাম নগরের বাসা ২০৯/বি দেবপাহাড় লেইন এলাকায় অভিযান চালায় পুলিশ। অভিযানে জাহাঙ্গীরের বাসা থেকে উদ্ধার করা সেই পিস্তলের লাইসেন্সের ফটোকপি পাওয়া যায়। এছাড়া একটি শর্টগানের লাইসেন্সসহ পাঁচটি বন্ধুকের গুলির মূল লাইসেন্স জব্দ করে পুলিশ।

এ ঘটনায় পাঁচজনকে আসামি করে ২০০৮ সালের ৮ নভেম্বর এসআই হাসেম আদালতে চার্জশিট দেন। এ মামলায় সাক্ষী রাখা হয় ১১জনকে। আদালত পরের বছর ২০০৯ সালের ১১ এপ্রিল চার্জগঠন করে বিচারিক কার্যক্রম শুরুর নির্দেশ দেন।

বিষয়টি নিশ্চিত করে আদালতের অতিরিক্ত পিপি প্রবীর কুমার ভট্টাচার্য আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, বুধবার (২২ ফেব্রুয়ারি) ডবলমুরিং থানার একটি অস্ত্র আইনের মামলায় বাবুল আক্তারের সাক্ষ্য প্রদানের দিন ধার্য থাকলেও আদালত তা ১৩ মার্চ নির্ধারণ করেন। সেদিন স্ত্রী মিতু হত্যা মামলায় বাবুলের চার্জগঠনের শুনানির দিন ধার্য রয়েছে। তবে মামলার তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষ্যগ্রহণ হয়েছে নির্ধারিত দিনেই।

এ বিষয়ে আদালতের বেঞ্চ সহকারী নেছার আহমেদ আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, ডবলমুরিং থানার ২০০৮ সালের অস্ত্র আইনের মামলায় বাবুল আক্তারের সাক্ষ্য প্রদানের দিন ধার্য থাকলেও তা ১৩ মার্চ গ্রহণ করা হবে। সেদিন তার বিরুদ্ধে মিতু হত্যা মামলায় চার্জ গঠনের দিন ধার্য রয়েছে একই আদালতে।

২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে নগরের ও আর নিজাম রোডে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার পথে দুর্বৃত্তদের গুলি ও ছুরিকাঘাতে খুন হন মাহমুদা খানম মিতু। তৎকালীন পুলিশ সুপার ও মিতুর স্বামী বাবুল আক্তার পাঁচলাইশ থানায় অজ্ঞাত পরিচয়দের আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন।

তবে এ মামলায় স্বামী বাবুল আক্তারের সম্পৃক্ততা পায় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। ২০২১ সালের ১২ মে আগের মামলাটিতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার দিন বাবুল আক্তারকে প্রধান আসামি করে পাঁচলাইশ থানায় দ্বিতীয় মামলা করেন মিতুর বাবা সাবেক পুলিশ পরিদর্শক মোশাররফ হোসেন।

প্রথম মামলায় পিবিআইয়ের দেওয়া চূড়ান্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে ২০২১ সালের ১৪ অক্টোবর বাবুল আক্তারের নারাজির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে একই বছরের ৩ নভেম্বর নারাজি ও পিবিআইয়ের প্রতিবেদন খারিজ করে মামলাটি অধিকতর তদন্তের আদেশ দেন আদালত।

এরপর দুটি মামলার তদন্ত করতে থাকে পিবিআই। গত বছরের ২৫ জানুয়ারি বিকেলে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআইয়ের পরিদর্শক আবু জাফর মোহাম্মদ ওমর ফারুক চট্টগ্রাম আদালতের প্রসিকিউশন শাখায় প্রতিবেদন জমা দেন। অন্যদিকে একই বছরের ১৩ সেপ্টেম্বর প্রথম মামলাটি অধিকতর তদন্ত শেষে বাবুলসহ ৭ জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় পিবিআই।

আরবি/আলোকিত চট্টগ্রাম

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!