‘ইশারায়’ বাড়ছে ওষুধের দাম, ‘৭৫ শতাংশ’ বেড়েছে ১৮০ দিনে

চট্টগ্রামসহ সারাদেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসহ প্রায় সব পণ্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী। এর মধ্যে মূল্যবৃদ্ধির কবল থেকে রেহায় পায়নি দেশের ওষুধখাতও।

ইতোমধ্যে দেশের বাজারে প্যারাসিটামলসহ বিভিন্ন ট্যাবলেট ও ক্যাপসুলের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া বৃদ্ধির প্রক্রিয়ায় রয়েছে ফ্লুইড জাতীয় ওষুধের দামও। দেশের ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের ইচ্ছেমতো অনিয়ন্ত্রিতভাবে ওষুধের দাম বাড়িয়েছে, এমনই অভিযোগ কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, গত ৬ মাসের ব্যবধানে দেশের বাজারে বিভিন্ন ওষুধের দাম ১৫ থেকে ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে গেছে। এ সময়ের মধ্যে গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ, অ্যান্টিবায়োটিক, উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন রোগের ওষুধের দাম প্রায় ১৫ থেকে ৩৫ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। এছাড়া গত ৬ মাসের ব্যবধানে দেশের বাজারে শুধু প্যারাসিটামল সিরাপের দাম বেড়েছে প্রায় ৭৫ শতাংশ।

এদিকে দেশের বাজারে ওষুধের মূল্যসহ সার্বিক নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে রয়েছে ওষুধ প্রশাসন। আগে ২২০টির মতো জরুরি ওষুধের মূল্য নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা ছিল ওষুধ প্রশাসনের হাতে। কিন্তু বর্তমানে সে সংখ্যা মাত্র ১১৭টি। এর ফলে দেশের ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে অনিয়ন্ত্রিতভাবে ওষুধের দাম বাড়ানোর সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

এদিকে বুধবার (২৩ নভেম্বর) ‘ঔষুধের অযৌক্তিক ও অনৈতিকভাবে মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদ’ শীর্ষক এক অনলাইন সংবাদ সম্মেলন করেছে ক্যাব। সংবাদ সম্মেলনে সরকারকে ভর্তুকি দিয়ে ওষুধের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণের আহ্বান জানায় সংস্থাটি।

সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা অভিযোগ করে বলেন, দেশের ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো চিকিৎসকদের মাধ্যমে তাদের ওষুধ রোগীর ব্যবস্থাপত্রে লেখায়। এর বিনিময়ে তারা চিকিৎসকদের অনৈতিক বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দেয়। ওষুধ কোম্পানিগুলো চিকিৎসকদের অনৈতিক সুবিধা দেওয়ার পেছনে যে অর্থ খরচ করে তা দাম বাড়িয়ে ভোক্তাদের কাছ থেকে আদায় করে নেয়।

ক্যাবের আয়োজিত অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সংগঠনটির কোষাধ্যক্ষ মনজুর ই খোদা তরফদার। এ সময় ওষুধের দাম নিয়ন্ত্রণে ৬টি দাবি উত্থাপন করা হয়।

দাবিগুলো হলো- দেশের বাজারে প্যারাসিটামলসহ বিভিন্ন ট্যাবলেট ও ক্যাপসুল জাতীয় ওষুধের দাম বৃদ্ধির পর এবার ফ্লুইড জাতীয় ওষুধের দাম বৃদ্ধির প্রক্রিয়া চলছে। ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরকে ওষুধের মূল্য সংশ্লিষ্ট পক্ষের প্রতিনিধি নিয়ে গঠিত কমিটির মাধ্যমে বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করতে হবে।

পুনর্বিবেচনা প্রক্রিয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত ফ্লুইড জাতীয় ওষধসহ বিভিন্ন ওষুধের মূল্যবৃদ্ধির প্রক্রিয়া স্থগিত করতে হবে।

১৯৯৪ সালের কালো আদেশটি বাতিল করতে হবে। কারণ ওই আদেশের প্রভাবে ওষুধ কোম্পানিগুলো যখন-তখন ওষুধের দাম বাড়িয়ে চলছে। ওষুধের কাঁচামালসহ অন্যান্য ওষুধ আমদানিতে মার্ক-আপ কমিয়ে দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। আমদানি করা ওষুধে মার্ক-আপ কমাতে হবে।

সরকারকে ভর্তুকি দিয়ে ওষুধের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। স্যালাইন তৈরি ও বাজারজাতকরণ প্রক্রিয়া জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট বা আইপিএইচের মতো সরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে করতে হবে।

ক্যাব সভাপতি ড. গোলাম রহমান বলেন, ওষুধ কোম্পানিগুলো নিজেদের ইচ্ছেমতো দাম বাড়ানোর কারণে মূল্যস্ফীতি চাঙ্গা হচ্ছে। চিকিৎসকদের অনৈতিক সুবিধা দেওয়ার কারণে ওষুধের দাম বাড়ানো হচ্ছে। সম্প্রতি ওষুধের মূল্যবৃদ্ধির সভায় বলা হয়েছে, সর্বসম্মতিতে ওষুধের মূল্যবৃদ্ধি করা হয়েছে। এ তথ্য সঠিক নয়। মূল্যবৃদ্ধির সভায় ক্যাবের প্রতিনিধি আপত্তি জানালেও তা আমলে নেওয়া হয়নি।

এসআই/আলোকিত চট্টগ্রাম

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!