‘বক্তৃতায় অতিরঞ্জন’ যুবলীগ নেতা বদিকে থামতে বললেন সোহাগ

যুবলীগের সম্মেলনে আওয়ামী লীগের কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে বেফাঁস মন্তব্য করেছেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বদিউল আলম বদি। যুবলীগ চেয়ারম্যানের নির্দেশের পরও আওয়ামী লীগের কর্মকাণ্ড নিয়ে একের পর এক বেফাঁস মন্তব্য করতে থাকেন তিনি। এ অবস্থায় মঞ্চে বক্তব্যরত বদির পাশে গিয়ে তাঁকে ‘থামতে’ বলেন সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুর রহমান সোহাগ।

এর আগে বক্তব্য সংক্ষিপ্ত করতে সম্মেলনের সঞ্চালক পার্থ সারথি চৌধুরীকে দিয়ে সতর্ক করা হয়। এসময় বদি বলেন, ‘শেষ করে দিব, চেয়ারম্যান বলেছে, আমি একটু বলি।’

শনিবার (২৮ মে) পটিয়ার আদর্শ বিদ্যালয় মাঠ প্রাঙ্গণে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা যুবলীগের সম্মেলনে এমন ঘটনা ঘটে।

আরও পড়ুন: যুবলীগ—বিদায় বেলায় পার্থকে বুকে জড়িয়ে অঝোরে কাঁদলেন টিপু

কেন্দ্রীয় যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বদিউল আলম সম্মেলনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে নিজেকে জাহির করে বলেন, ‘জামায়াত-হেফাজতের তাণ্ডব থামাতে আমি এবং আওয়ামী লীগের উপপ্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন ছাড়া কোনো মন্ত্রী-এমপিকে পাশে পাওয়া যায়নি।’

আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয় না থাকায় এমপির উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘আপনি যখন এসেছিলেন তখন আওয়ামী লীগের অফিস ছিল। বর্তমানে আওয়ামী লীগের কোনো অফিস নাই। এখানে ঠিকানাহীন আওয়ামী লীগ। আমি এমপিকে বলতে চাই, আমার দল আওয়ামী লীগ আজকে জামায়াত-বিএনপি, জাতীয় পার্টি দখল করেছে। হাইব্রিডমুক্ত আওয়ামী লীগ আমরা চাই। যে আওয়ামী লীগের জন্য ২০০৮ সালে রক্তে-শ্রমে, ত্যাগে-কষ্টে, মানুষের হাতে পায়ে ধরে তিল তিল করে আমরা ভোট নিয়েছিলাম, সেই আওয়ামী লীগ আজ বিচ্ছিন্ন। আজকের আওয়ামী লীগে এক ডিউ লেটারে ১৪টা ইউনিয়ন কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়। এক রাতে ১৭টা ইউনিয়ন ছাত্রলীগের কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়। তৃণমূলে হাত দেওয়া যাবে না।’

এর আগে তিনি বক্তব্য রাখতে গিয়ে সময়ক্ষেপণ করছিলেন। তখন যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশের ইশারায় সঞ্চালক পার্থ সারথি চৌধুরী তাঁকে বক্তব্য সংক্ষিপ্ত করতে বলেন। এসময় বদি বলেন, ‘শেষ করে দিব? চেয়ারম্যান বলেছে, আমি একটু বলি’ বলেই তিনি বক্তব্য চালিয়ে যান। পরে লিখিতভাবে তাকে বক্তব্য সংক্ষিপ্ত করার নির্দেশ দেওয়া হলেও তিনি তা উপেক্ষা করে বক্তব্য অব্যাহত রাখেন।

পরে চেয়ারম্যানের নির্দেশে যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুর রহমান সোহাগ বেশকিছু সময় ধরে তাঁর পেছনে দাঁড়িয়ে থেকে বক্তব্য বন্ধ করানোর চেষ্টা করেন। এসময় তিনি বদিকে বলেন, ‘অনেক হয়েছে এবার থামুন।’ কিন্তু এতেও তিনি ভ্রুক্ষেপ না করে বক্তব্য চালিয়ে যান। এসময় সোহাগ তাঁর পেছনে দাঁড়িয়ে বিরক্তবোধ করছিলেন। পেছন থেকে কয়েকজনের কথপোকথন শোনা যায়। তাঁরা বলছেন, চেয়ারম্যানের নির্দেশ তাঁকে শেষ করতে হবে। তিনি বেয়াদবি করছেন। এসময় তিনি আবার কবিতা পাঠও শুরু করে দেন। চেয়ারম্যানের নির্দেশনা অমান্য করায় বক্তব্য শেষে তাঁকে মঞ্চ থেকে নামিয়ে দেওয়া হয়।

পটিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আ ক ম শামসুজ্জামান চৌধুরী আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, যুবলীগ নেতা বদিউল আলম বদি সম্মেলনে আওয়ামী লীগের কঠোর সমালোচনায় দীর্ঘক্ষণ বক্তব্য রাখেন। তাঁর এমন বক্তব্যে তৃণমূল নেতাকর্মীদের মাঝেও ক্ষোভ দেখা যায়।

তিনি আরও বলেন, পটিয়া উপজেলা ও পৌরসভার আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগসহ অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা হুইপ শামসুল হক চৌধুরীর নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ।

আরও পড়ুন: মনোনয়ন পেলেও কর্ণফুলীর যুবলীগ নেতা বললেন, তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থী নন

দক্ষিণ জেলা যুবলীগ সভাপতি আ ম ম টিপু সুলতানের সভাপতিত্বে সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ। অতিথি ছিলেন জাতীয় সংসদের হুইপ ও আওয়ামী লীগের চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাইদ আল মাহমুদ স্বপন, আওয়ামী লীগের উপপ্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন এবং জাতীয় সংসদের হুইপ সামশুল হক চৌধুরী।

সম্মেলনে প্রধান বক্তা ছিলেন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাঈনুল হোসেন খান নিখিল। বিশেষ অতিথি ছিলেন দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান, মো. নজরুল ইসলাম চৌধুরী এমপি ও মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী এমপি। বিশেষ বক্তা ছিলেন যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নাঈম ও সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুর রহমান সোহাগ।

আলোকিত চট্টগ্রাম

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!