বিয়ের পিঁড়িতে বসার দিন যেতেই যুবকের জীবন গেল লরির ধাক্কায়

পোর্ট সিটি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম বিভাগের প্রথম ব্যাচের ছাত্র রায়হান উদ্দিন (৩০)। সানজিদার সঙ্গে শুক্রবার (২ ফেব্রুয়ারি) জীবনের নতুন অধ্যায় শুরু করেন তিনি। আকদ অনুষ্ঠানের কথা জানিয়ে তিনি সেদিন ফেসবুকে পোস্টও করেন। কিন্তু তখনও কেউ জানত না এটাই রায়হানের শেষ পোস্ট! জীবনের নতুন অধ্যায় শুরু করার একদিন যেতেই তার জীবনটাই কেড়ে নিলো ঘাতক লরি।

রোববার (৪ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে সীতাকুণ্ড থানার ডিসি পার্কের সামনে ঘটে ভয়াবহ সেই দুর্ঘটনা। বেপরোয়া লরি ধাক্কা মেরে ছিটকে ফেলে মোটরসাইকেল চালানো রায়হানকে। মুহূর্তেই লাশ হয়ে যান তিনি। এ সময় রক্তাক্ত হন বাইকের পেছনে থাকা রায়হানের সহকর্মী মবিনুল ইসলাম (২৮)।

চমেক পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ নুরুল আলম আশেক জানান, সড়কে লরির সঙ্গে ধাক্কা লেগে রায়হানের হেলমেট উড়ে যায়। মাথায় আঘাত পেয়ে ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান। আহত মবিনুলের বুকের হাড় ও হাতের আঙুল ভেঙে গেছে। নাকেও জখম হয়েছে। হাসপাতালের ২ নম্বর ওয়ার্ডে তাঁর চিকিৎসা চলছে৷

জানা যায়, হাটহাজারী উপজেলার শিকারপুর ইউনিয়নের বাথুয়া এলাকার মৃত নাজিম উদ্দিনের ছেলে রায়হান। তিন বোন ও দুভাইয়ের মধ্যে তিনি ছিলেন চতুর্থ।

গত শুক্রবার জীবনের নতুন অধ্যায় শুরু করেছিলেন রায়হান। নববধূর হাত ধরে ‘গট ম্যারিড’ পোস্টও দেন ফেসবুকে। কিন্তু ৪৮ ঘণ্টা না যেতেই নিভে গেল তার জীবনপ্রদীপ।

নগরের কাঠগড়ের এসএপিএল কনটেইনার ডিপোতে একটি বিদেশি বায়িং হাউসের কোয়ালিটি এসিউরেন্স ইন্সপেক্টর ছিলেন রায়হান৷ সহকর্মী মবিনুলকে সঙ্গে নিয়ে কর্মস্থল থেকে ফেরার পথেই দুর্ঘটনায় পড়েন।

এদিকে রায়হানের দুর্ঘটনার খবর পেয়েই চমেক হাসপাতালে ছুটে যান তার বন্ধু, সহপাঠী, স্বজনরা। সাংবাদিক রিমন সাখাওয়াত বলেন, গত শুক্রবার তার আকদ অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম। একসঙ্গে আমাদের কত আড্ডা, কত স্মৃতি। এ মৃত্যু কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছি না। কথা ছিল ঈদের পর তাদের বিয়ের অনুষ্ঠান হবে। নিমিষেই সব শেষ হয়ে গেল।

রিমন যখন কথাগুলো বলছিলেন চমেক হাসপাতালের লাশঘরের মাটিতে লুটিয়ে বিলাপ করছিলেন এক তরুণী— আরে রাখি হডে গেইলা। আইতো একদিনো সংসার গরিন্নফাইল্লাম। আঁর হাতোত অনো মেহেদী ন লাগাই (আমাকে রেখে কোথায় গেলে। আমি তো একদিনও সংসার করতে পারলাম না। আমি তো হাতে এখনো মেহেদি লাগাইনি)।

বিলাপ করা সেই তরুণী সানজিদা। রায়হানের একদিনের স্ত্রী। তাঁর কান্নায় সবার হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হলেও সানজিদাকে সান্ত্বনা দেওয়ার সাহস কেউ করতে পারেননি। এমন মৃত্যুতে সান্ত্বনা দেওয়ার সাধ্যও আছে কার!

আলোকিত চট্টগ্রাম

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!