বালুখেকোদের নতুন ফন্দি—রাতের ‘চুরি’ দিনে হয়ে যায় ‘বৈধ’ বাণিজ্য

বাঁশখালীতে বালুখেকোরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। এবার বিভিন্ন ছড়া, খাল, নদী থেকে রাতের আঁধারে বালু তুলে মজুদ করছে বাঁশখালীর প্রধান সড়ক সংলগ্ন বিভিন্ন স্পটে। আর দিনের বেলা বৈধ লাইসেন্স আছে বলে মজুদ স্থান থেকে ট্রাকে ট্রাকে বালু বিক্রি করছে।

বাঁশখালী উপজেলা প্রশাসন ছড়া, খাল ও নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে উত্তোলনের স্থানে অভিযান চালানোয় অভিনব এ পন্থায় বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে বালুখেকোরা। বাঁশখালী প্রধান সড়ক সংলগ্ন স্থানে ৫ লাখ থেকে ৫০ লাখ টাকার বালু মজুদের দৃশ্য চোখে পড়েছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, বাঁশখালীর পুঁইছড়ি, চাম্বল, গণ্ডামারা, শেখেরখীল, বৈলছড়ী, কালীপুর, সাধনপুর, পুকুরিয়া, ছনুয়া, খানখানাবাদ, বাহারছড়া ও শীলকূপ ইউনিয়নের বিভিন্ন স্পটে পাহাড়ি ছড়া, শঙ্খ নদী, জ্বলকদর খাল এবং বঙ্গোপসাগর থেকে অবৈধভাবে ড্রেজার বসিয়ে চলছে বালু উত্তোলন। এগুলোর একটিও সরকারিভাবে বালু মহাল ইজারা দেওয়া হয়নি।

এই অবৈধ বালু মহালে বালুখেকোদের দাপট ঠেকাতে সম্প্রতি বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সাইদুজ্জামান চৌধুরী এবং বাঁশখালী উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) খোন্দকার মাহমুদুল হাসান পৃথক পৃথক স্পটে অভিযান চালান। অভিযানে বালুখেকোদের জরিমানা করার পাশাপাশি বালু জব্দও করেন। তারপরও বালুখেকোদের অবৈধ বালু ব্যবসা বন্ধ হচ্ছে না। অথচ এই বালু উত্তোলনের স্থানগুলো সরকারিভাবে ইজারা দেওয়া গেলে সরকারের কোটি কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হতো।

গত শনিবার (১১ মার্চ) ও রোববার (১২ মার্চ) বাঁশখালী প্রধান সড়ক ও ইউনিয়নের আঞ্চলিক সড়কে অন্তত ৩৬টি স্পটে ছোট-বড় বালু মজুদের দৃশ্য চোখে পড়েছে। প্রতিটি স্পটে কমপক্ষে ৫ লাখ থেকে সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকার বালু মজুদ রয়েছে। ওইসব স্পট থেকে দেদারছে চলছে বালু বিক্রি।

চাম্বল পাতলা মার্কেট সড়কের মুখ, নাপোড়া বিল, প্রেমবাজার, প্রেমবাজার ফরেস্ট রোড, নাপোড়া ফরেস্ট রোড, ছনুয়া কুতুবদিয়া ঘাট, পুকুরিয়া চৌমুহনী সড়কসহ বিভিন্ন স্পটে বালু মজুদ রয়েছে।

নাপোড়া বিলে এক স্পটে ৫০ লাখ টাকার বেশি বালু মজুদকারী কামরুল ইসলাম দুলাল বলেন, আমার মজুদ করা বালু অবৈধ নয়। আমি চকরিয়া থেকে এনে বৈধ ব্যবসা করছি। ইসলাম ট্রেডার্স নামে আমার ট্রেড লাইসেন্স রয়েছে। শেখেরখীল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মওলানা মোরশেদুল আলম ফারুকীর কাছ থেকে নিয়েছি। তবে এই বালু মজুদের কোথাও সাইনবোর্ড কিংবা বালু ক্রয়-বিক্রির রেজিস্ট্রার নেই।

যোগাযোগ করা হলে শেখেরখীল ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মওলানা মোরশেদুল আলম ফারুকী বলেন, আমি কাউকে বালু বেচার ট্রেড লাইসেন্স দিইনি। এছাড়া এরকম বালু বেচার লাইসেন্স আমি দিতে পারি না। সবগুলো অবৈধ বালু। তাছাড়া ওই ব্যক্তি পুঁইছড়ি ইউনিয়নের নাপোড়া বিলে বালু মজুদ করে শেখেরখীল ইউনিয়নের নাম ভাঙাবে কেন?

এ ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে বাঁশখালী উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) খোন্দকার মাহমুদুল হাসান বলেন, বাঁশখালীতে ছড়িয়ে ছিঁটিয়ে থাকা সবকটি অবৈধ বালু মজুদের স্থানে অভিযান চালিয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এসআই/আলোকিত চট্টগ্রাম

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!