প্রযুক্তির কারণে ট্রেনের গতি কমছে ঘন কুয়াশায়, প্রতিদিনই দেরি

বাড়ছে শীত। সেই সঙ্গে বাড়ছে কুয়াশাও। ঘন কুয়াশার কারণে গতি কমিয়ে ঝুঁকি নিয়ে চলছে প্রায় সব ট্রেন। নির্দিষ্ট সময়ের চেয়ে দুই থেকে পাঁচ ঘণ্টা বিলম্বে ছাড়ছে ট্রেন। ফলে প্রতিদিনের ট্রেনের আসা-যাওয়ায় দেখা দিয়েছে শিডিউল বিপর্যয়।

এছাড়া স্টেশন ও লেভেলক্রসিং সিগন্যাল দেখতে না পারা এবং নাশকতাকারীরা রেললাইন কেটে ফেলার কারণে বেড়ে গেছে দুর্ঘটনার ঝুঁকিও। অথচ রেলের উন্নয়নে খরচ হচ্ছে হাজার কোটি টাকা। কিন্তু দুর্ঘটনা প্রতিরোধে নেই কোনো আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার। তবে ট্রেনের গতি কমিয়ে আপাতত ক্ষয়ক্ষতি রোধের চেষ্টায় রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।

রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, শীত আসার পর থেকে রেললাইন ঘেঁষে ঘন কুয়াশার কারণে প্রায়ই সব ট্রেনের গতি কমিয়ে চালাতে হচ্ছে। চট্টগ্রাম বিভাগের কুমিল্লা, আখাউড়া, চাঁদপুর, লাকসাম, সীতাকুণ্ড, বড়তাকিয়া ও কক্সবাজার রেললাইন পাহাড় ও বিলের মাঝখানে হওয়ায় রাতের বেলা ঘন কুয়াশায় ঢেকে যায়। এসময় ৮০ কিলোমিটার গতিতে চলা আন্তঃনগর ট্রেনের ৮ থেকে ১৩ কিলোমিটার গতিতে চালাতে হয়। অনেকক্ষেত্রে অতিরিক্ত কুয়াশার কারণে ট্রেন দাঁড়ও করাতে হয়। এসময় চালকের সহকারী বাতি জ্বলিয়ে ট্রেনকে পথ দেখাতে হয়৷ তবে কুয়াশা ভেদে ফগ পাস সিস্টেম ও রেললাইন ঝুঁকি এড়াতে নেই জিপিএস সিস্টেম। কুয়াশায় দৃশ্যমানতা কমে যাওয়ায় চালক মাঝপথে ট্রেন থামাতে একরকম বাধ্য হন।

জানা গেছে, চট্টগ্রাম বিভাগে ৩০০টির বেশি অবৈধ লেভেলক্রসিং রয়েছে। কুয়াশার কারণে যানবাহন অনেক সময় রেললাইনে উঠে আসে। এছাড়া বৈধ লেভেল ক্রসিংগুলোর সিগন্যাল দেখতে না পাওয়া এবং স্টেশনে প্রবেশ ও বাহিরের সময়ও সিগন্যাল দেখতে না পাওয়ায় দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ছে। রেলওয়েতে হাজার কোটি টাকার মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন হলেও যাত্রীদের সুরক্ষায় নেই কোনো পদক্ষেপ। ঘন কুয়াশা ও নাশকতা রোধে আন্তঃনগর ট্রেনের ৮০ কিলোমিটার গতি নেমে এসেছে ৪০ কিলোমিটারে। প্রতিদিন প্রতিটি ট্রেন দুই থেকে পাঁচঘন্টা দেরিতে ছাড়া হচ্ছে। ইঞ্জিন পেট্রোলিং করে চেষ্টা চলছে দুর্ঘটনা রোধের।

সংশ্লিষ্টরা জানান, লাইনে সেন্সর এবং ফগ পাস সিস্টেম যুক্ত থাকলে ট্রেন যথাযথ গতিতে চালানো যায়। ঘন কুয়াশায়ও ট্রেন পরিচালনার ক্ষেত্রে কোনো ঝুঁকি থাকে না। ওই প্রযুক্তিতে কুয়াশাচ্ছন্ন পথে ট্রেনের পরবর্তী সিগন্যাল পোস্ট কত দূরে রয়েছে এর আভাস চালককে স্বয়ংক্রিয়ভাবে জানিয়ে দেয় জিপিএসনির্ভর যন্ত্রটি। ফগ পাস সিস্টেম ট্রেন স্টেশনের হোম সিগন্যাল থেকে কত দূরে সে তথ্যও দেবে। এছাড়া স্ক্রিনে সিগন্যাল দেখা, কুয়াশার কারণে দৃশ্যমান কম হলে পথ দেখিয়ে দেওয়া এবং লেভেল ক্রসিং তথ্য দেবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ট্রেন চালক আবদুল আউয়াল রানা আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, ঘন কুয়াশার কারণে ট্রেনের গতি কমিয়ে চালাতে হয়। কুয়াশার কারণে স্টেশনে প্রবেশ ও বাহিরের সিগন্যাল দেখা না যাওয়ায় জানালা দিয়ে মাথা বের করে দেখতে হয়। এছাড়া নাশকতাকারীরা রেললাইন কেটে ফেলার কারণে দুর্ঘটনার ঝুঁকিও বাড়ছে। এখানে দুর্ঘটনা রোধে সেন্সর ও জিপিএস সিস্টেম বা আধুনিক কোনো ব্যবস্থা নেই। ফলে সবসময় মনে ভয় কাজ করে।

জানা যায়, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রেলপথ নিরাপত্তায় লাইনে বসানো থাকে সেন্সর-জিপিএস। এতে রেললাইন ও সিগনালে ঝুঁকিপূর্ণ কিছু থাকলে সঙ্গে সঙ্গে স্টেশন মাস্টারসহ চালকের কাছে তথ্য চলে যায়। এতে দুর্ঘটনার ঝুঁকি কমে আসে। কিন্তু রেলওয়েতে বড় বড় হাজার কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়ন হলেও দুর্ঘটনা রোধে এখনও আধুনিক কোনো পদক্ষেপ নেওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় ব্যবস্থাপক মো. সাইফুল ইসলাম আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, নাশকতা রোধ ও ঘন কুয়াশার কারণে সব ট্রেনের গতি ৪০- ৫০ কিলোমিটারে নেমে এসেছে। প্রতিটি ট্রেন দুই থেকে পাঁচঘণ্টা দেরিতে ছাড়ছে প্রায় প্রতিদিন। শিডিউল বিপর্যয় হলেও গতি কমানো ছাড়া আপাতত কোনো উপায় নেই। এছাড়া দুর্ঘটনা এড়াতে নিয়মিত ইঞ্জিন পেট্রোলিং করা হচ্ছে।

আরবি/আলোকিত চট্টগ্রাম

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!