হেলথ কেয়ারের এসআর-এমআর দ্বন্দ্বেই খুন, নেপথ্যে টাকার লোভ

কয়েক বছর আগে কুষ্টিয়ার এরশাদ আলী (৩২) হেলথ কেয়ারে ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিতে যোগ দেন সেলস রিপ্রেজেন্টেটিভ (এসআর) পদে। একই কোম্পানিতে মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভ (এমআর) পদে যোগ দেন আশিক বিল্লাহ সুমন (৩৫)।

আশিক বিল্লাহ সুমন কোম্পানির সেলস বাড়ানোসহ বাড়তি সুবিধা নিতে অনিয়ম শুরু করেন। বিষয়টি নজরে আসে এরশাদ আলীর। তিনি এসব কাজ থেকে তাকে বিরত থাকতে বলেন। কিন্তু আশিক বিল্লাহ তাঁর কথা কানে তুলেননি। পরে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে আশিকের অনিয়মের বিষয়টি জানানোর কথা বলেন এরশাদ। এতে ক্ষিপ্ত হন আশিক। এরপর রাতের আঁধারে নির্জন স্থানে ডেকে নিয়ে দুদফায় গলায় ছুরি চালিয়ে সহকর্মী এরশাদকে খুন করেন আশিক।

রোববার (১৬ জুলাই) বিকাল ৫টায় চকরিয়া থানার কনফারেন্স রুমে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) মো. জসীম উদ্দিন চৌধুরী।

নিহত এরশাদ আলী কুষ্টিয়া জেলার মিরপুর থানার সুতাইল এলাকায় মো. সাফিকুল ইসলামের ছেলে। ঘাতক আশিক বিল্লাহ সুমন ময়মনসিংহ জেলার ফুলপুর থানার ছনধরা এলাকার আব্দুল জলিলের ছেলে।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) মো. জসীম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, এমআর আশিক বিল্লাহ চকরিয়া পৌরশহরের আলরাজি হাসপাতালের জন্য ১৯ হাজার টাকার ভাউচার করে প্রোডাক্ট নিয়ে আসেন। পরবর্তীতে ওই প্রোডাক্ট চকরিয়ার বদরখালীর দুটি ফার্মেসিতে দিয়ে দেন। কিন্তু এই অনিয়মের প্রতিবাদ করেন এসআর এরশাদ আলী। তিনি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানাবেন বললে ক্ষিপ্ত হন আশিক। পরে এরশাদকে হত্যার পরিকল্পনা করেন আশিক।

আরও পড়ুন: চুরি করে ধরা, ৫০০ টাকায় মীমাংসার পরও সহকর্মীকে খুন

তিনি বলেন, পরিকল্পনা অনুযায়ী চকরিয়া পৌরশহরের মসজিদ মার্কেটের সামনের দোকান থেকে ৫০ টাকা দিয়ে একটি ধারালো ছুরি কিনেন আশিক। এদিন রাত ১০টার দিকে এরশাদকে চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মাঠে আসতে বলা হয়। আশিক এরশাদের কথায় ওই স্থানে আসেন। এরপর এরশাদ একটি নির্জন জায়গায় নিয়ে যান আশিককে। এসময় দুজনের মধ্যে কথা কাটাকাটি শুরু হয়। একপর্যায়ে আশিক এরশাদের গলায় ছুরি চালান। এসময় এরশাদ চিৎকার করে কিছুদূর গিয়ে পড়ে যান। এরপর আশিক দৌড়ে গিয়ে পেছন থেকে তাকে লাথি দিয়ে মাটিতে ফেলে দিয়ে গলায় আবারও ছুরি চালান। এসময় ঘটনাস্থলেই মারা যান এরশাদ। ঘটনার পর আশিক হাসপাতালের দেয়াল টপকে বাসায় গিয়ে কাপড় পাল্টান।

তিনি আরও বলেন, হাসপাতালের মাঠে এক যুবকের লাশ পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয় লোকজন পুলিশকে খবর দেয়। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে। এরপর খুনিকে ধরতে মাঠে নামে পুলিশ, র‌্যাবসহ অন্যান্য বাহিনী লোকজন। এর মধ্যে হাসপাতালে থাকা ভিডিও ফুটেজ দেখে আসামিকে শনাক্ত করে পুলিশ। কিছুক্ষণ পর ঘটনাস্থলে ফেলে যাওয়া মোটরসাইকেল নিতে আসলে আশিককে আটক করে পুলিশ। এসময় তার কাছ থেকে ছুরি, নগদ ১৯ হাজার ২০০ টাকা এবং মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বলেন, আটক আশিককে জিজ্ঞাসাবাদ করলে খুনের কথা অস্বীকার করেন তিনি। এরপর তাকে ভিডিও ফুটেজ দেখালে ঘটনার কথা স্বীকার করে নেন। এ ঘটনার সঙ্গে আর কেউ জড়িত আছে কিনা সেটি তদন্ত করে দেখছে পুলিশ।

এ বিষয়ে চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জাবেদ মাহমুদ বলেন, লাশ ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে। ভিকটিমের আত্মীয়-স্বজনদের কেউ এখনও থানায় আসেনি। স্বজনরা এলে লাশ হস্তান্তর করা হবে। পরিবারের পক্ষ থেকে লিখিত এজাহার পেলে মামলা এন্ট্রি করা হবে।

প্রেস ব্রিফ্রিয়ে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন চকরিয়া থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মু. আব্দুল জব্বার, চকরিয়া থানার অপারেশন অফিসার (এসআই) রাজিব সরকার।

এমকেডি/আরবি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!