চকবাজারে ভাসমান দোকানে বাড়ছে বখাটের আড্ডা, চলে মাদক বেচাকেনাও

নগরের চকবাজার থানা এলাকার বিভিন্ন ভাসমান দোকান ঘিরে বখাটের আড্ডা বাড়ছেই। বিশেষ করে চায়ের দোকানগুলোতে বখাটে কিশোর-তরুণদের আড্ডা সবচেয়ে বেশি। অনেক রাত পর্যন্ত জমিয়ে চলে আড্ডা। আর আড্ডার ফাঁকে জড়িয়ে পড়ে অপরাধে। ভাসমান দোকানের আড়ালে বেচাকেনা হয় মাদকও!

অভিযোগ আছে, ভাসমান দোকানগুলোর সামনে আসা-যাওয়ার সময় ইভটিজিংয়ের শিকার হতে হয় নারীদের। বিশেষ করে স্কুল-কলেজের ছাত্রীদের। অনেকেই ঝামেলার ভয়ে প্রতিবাদ করে না। তবে সংশ্লিষ্ট থানা-পুলিশ বিষয়টি জেনেও চুপ। পুলিশকে অভিযোগ দেওয়া হলেও আসেনি কোনো সমাধান।

সরেজমিন দেখা গেছে, পশ্চিম বাকলিয়ার ফুলতলা মোড়, প্যারেড কর্ণারের রশিদ হাজারী লেইন, কলেজ রোড, গণি বেকারি মোড়, হোস্টেল গেইট, চন্দনপুরা, চট্টেশ্বরী রোডের চক মালঞ্চের সামনে ও মেডিকেল হোস্টেল গেটের আশপাশে বখাটেদের দাপট। এসব এলাকায় ভাসমান চা, পান-সিগারেটসহ বিভিন্ন খাবারের দোকান রয়েছে।

আরও পড়ুন: চকবাজারে দলবল নিয়ে এলেন কাউন্সিলর টিনু, হঠাৎ উধাও টিসিবির পণ্যও!

ভাসমান এসব দোকানের সঙ্গে লাগোয়া ফুটপাত ও রাস্তায় বসানো হয়েছে চেয়ার-টুল। পাশাপাশি বিক্রি হচ্ছে পান-সিগারেট। সেখানে প্রকাশ্যে বসে ও দাঁড়িয়ে চলছে ধূমপান। ফুটপাতে এড়িয়ে পথচারী হাঁটছে রাস্তায়। নারীরা চলছে রাস্তার অপর পাশ দিয়ে।

পথচারী ও এলাকার বাসিন্দারা জানান, সিগারেটের ধোঁয়ার গন্ধ, হৈ-হুল্লোড় সারাদিন লেগে থাকে। ফুটপাতে হাঁটাচলা একেবারে দায়। বাধ্য হয়ে ঝুঁকি নিয়ে হাঁটতে হয় রাস্তায়। এসব নিয়ে প্রতিবাদ করলে উল্টো পড়তে হয় বিপদে। পুলিশ দেখেও চুপ। সিটি করপোরেশনও বেশ কয়েকবার উচ্ছেদ করেছে। কিন্তু সকালে উচ্ছেদ করলে বিকেলে আবার দখল হয়ে যায়।

অভিযোগ আছে, ভাসমান এসব দোকান থেকে নিয়মিত চকবাজার থানা-পুলিশ ও ফাঁড়ির নামে টাকা তোলা হয়। আবার টহল পুলিশ সদস্যদের জন্য চা-নাস্তা ‘ফ্রি’। ফলে ভাসমান দোকানিরা রাস্তা ও ফুটপাত দখল করে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে নির্বিঘ্নে। আবার এসব দোকানের আড়ালে বিক্রি করা হয় মাদকও। এলাকার সোর্সরা এসব নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে। থানার কিছু পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে এলাকার অপরাধীদের সখ্যতা। আলোকিত চট্টগ্রামে অনুসন্ধানে সখ্যতার তালিকায় উঠে এসেছে একাধিক পুলিশ সদস্যের নাম। রয়েছে চকবাজার থানার সেকেন্ড অফিসার এসআই ফিরোজ আলম মুন্সির নামও।

কলেজ রোডের বাসিন্দা ও শিক্ষার্থী সামিয়া রহমান বলেন, প্যারেড কর্ণারের ফুটপাত ধরে প্রতিনিয়ত আসা-যাওয়া করতাম। কিন্তু এখন ফুটপাত ঘেঁষে ভাসমান চায়ের দোকান বসানোর কারণে দিন-রাত আড্ডা। তারা প্রকাশ্যে ফুটপাতে দাঁড়িয়ে সিগারেট টানে। অনেক সময় অশ্লীল মন্তব্য ছুঁড়ে দেয়।

চট্টেশ্বরী রোডের বাসিন্দা মোছা. নাসরিন কাউসার বলেন, সন্ধ্যা হলে এলাকায় বখাটেদের আড্ডা চলে। উঠতি বয়সী ছেলেরা মোটরসাইকেলসহ আসে দলে দলে। দোকান ছেড়ে ফুটপাত ও রাস্তায় চলে আসে বখাটেরা। তখন চলাচলে সমস্যা তৈরি হলেও ঝামেলার ভয়ে এড়িয়ে চলে যেতে হয়। পুলিশকে জানালেও আসছি-দেখছি বলেই শেষ।

ফুলতলা এলাকার বাসিন্দা লোকমান চৌধুরী বলেন, মোড়ে বেশকিছু ভাসমান চায়ের দোকানে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত উঠতি বয়সী ছেলেদের আড্ডা। এখন বাইরের ছেলেরা ভিড় জমায়। বিক্রি বাড়াতে ফুটপাত দখল করে টুল বসানো হয়েছে। ফলে আড্ডা আরও জমজমাট। এছাড়া চা শেষে সিগারেট খাওয়া চলে একেবারে প্রকাশ্যে।

এলাকার আরেক বাসিন্দা নুরজাহান আক্তার বলেন, দোকানগুলোর সামনে দিয়ে আসা-যাওয়ার সময় নারীরা বিভিন্ন সময় ইভটিজিংয়ের শিকার হয়। অনেকে ঝামেলা ও ভয়ে প্রতিবাদ করে না। আশপাশে রয়েছে বেশ কয়েকটি স্কুল। বিকেলে স্কুল ছুটির সময় দোকানের সামনে বখাটেরা দাঁড়িয়ে থাকে চা খাওয়ার ভান করে। কিন্তু থানা পুলিশের গাড়ি প্রতিদিন আসে। কিন্তু তাদের এসব চোখে পড়ে না। এছাড়া এলাকার কিছু সোর্সও এখানে আড্ডা জমায় দিন-রাত।

আরও পড়ুন: চকবাজারে চাঁদার ভাগ নিয়ে ‘কিশোর গ্যাং—ছাত্রলীগ’ মারামারিতে কপাল পুড়ল গরিবের

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চকবাজার থানার সেকেন্ড অফিসার এসআই ফিরোজ আলম মুন্সী আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, ভাসমান দোকানগুলোকে আমাদের নিয়মিত টহল পুলিশ ট্রাফিক পুলিশের সহায়তায় উচ্ছেদ করে। কিন্তু ফিরে আসার পর তারা ফের বসে। আমি থানায় আছি এক বছর ধরে। আমার কাউকে প্রশ্রয় দেওয়ার সুযোগ নেই। অপরাধ ও অপরাধীর বিরুদ্ধে আমরা সবসময় জিরো টলারেন্স।

একই প্রসঙ্গে চকবাজার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই রাজীব পাল বলেন, আমরা প্রায়সময় ভাসমান দোকানগুলোর বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করি। অনেককে সতর্ক করা হয়েছে। আবার অনেকজনকে কোর্টে চালানও দেওয়া হয়েছে। আমি গত এক সপ্তাহ ধরে ট্রেনিংয়ে আছি। বিষয়টি আমি খবর নিয়ে দেখছি।

এ বিষয়ে দৃষ্টি আর্কষণ করা হলে চকবাজার থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মনজুরুল কাদের মজুমদার আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, ভাসমান চায়ের দোকানগুলো রাত ১১টার মধ্যে বন্ধ করে দেওয়ার জন্য বলা আছে। আমি যেদিন পরিদর্শনে বের হয় সেদিন নিজেই সবকিছু তদারকি করি। অভিযোগের বিষয়গুলো গুরুত্বের সঙ্গে দেখে শিগগির প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আলোকিত চট্টগ্রাম

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!