টাকার জোরে উধাও রেলের সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক দপ্তরের নিয়মনীতি—বাদ পড়েনি প্রতিবন্ধী কর্মচারীও

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল চট্টগ্রামের জেলা সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক দপ্তর, অনিয়মই এখানে নিয়ম। নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা করেন না এ দপ্তরের কর্মরতরা। পালন করা হয় না ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার আদেশ পর্যন্ত। পাহাড়তলীর ক্যান্টিন গেট নিউস্টোর ডিপোও জিম্মি তাদের কাছে।

এ দপ্তরটি নতুন করে আলোচনায় এসেছে বিধি না মেনে বাসা বাণিজ্যে। অভিযোগ— রেলের প্রতিবন্ধী কর্মচারী হাবিবুল ইসলামের বাসা খালি হওয়ার আগেই অন্যজনের নামে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বড় অঙ্কের লেনদেনের বিনিময়েই এটি হয়েছে। আর এ কাজে নাটের গুরু ছিলেন জেলা সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক সাজ্জাদুল ইসলাম ও প্রধান সহকারী বেদার উদ্দিন। যে ঘুষ বেশি দেবে তাকেই আগে বাসা বরাদ্দ দেওয়া হবে- এমন রীতিতেই নাকি বাসা বরাদ্দ দেন এ দুজন।

এদিকে এ ঘটনায় সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক (পূর্ব) বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন প্রতিবন্ধী কর্মচারী হাবিবুল ইসলামের বড় ভাই।

জানা গেছে, বেদার উদ্দিন ছয় বছর ধরে একই দপ্তরে চাকরি করে আসছেন। তাঁর বিরুদ্ধে রেলের টিন চুরির অভিযোগও আছে।

গত ১৪ আগস্ট হাবিবুলের শহীদ লেনের বাসা নম্বর এডিএম-২/সি খালি উল্লেখ করে খালাসি মাকসুদুল হকের নামে বরাদ্দ দেন সহকারী সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক আলমগীর কবির। তবে বাসাটি অন্যের নামে বরাদ্দ দেওয়ার বিষয়ে দপ্তরের কোনো আদেশ পাঠানো হয়নি। অথচ বাসাটি এখনও হাবিবুল ইসলামের নামেই বরাদ্দ আছে বলে নিশ্চিত করেছেন বিভাগীয় প্রকৌশলী কার্য-২ দপ্তর।

জানা গেছে, রেলের কর্মচারী প্রতিবন্ধী হাবিবুল ইসলাম থাকেন ওই বাসায়। তাঁর কোনো সংসার নেই। গত ২৯ মার্চ তিনি অবসরজনিত ছুটিতে যান। ৩০ মার্চ হাবিবুল ইসলাম তাঁর আত্মীয় ইয়াসিনের সম্মতিতে বাসাটি তাঁকে দিতে আবেদন করেন। কিন্তু সেই আবেদনের কোনো সুরাহা না করেই মাসুদুল হককে বাসা বরাদ্দ দেওয়া হয়। নিয়মবহির্ভূত এ কাজের পেছনে ছিলেন জেলা সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক সাজ্জাদুল ইসলাম ও প্রধান সহকারী বেদার উদ্দিন।

অথচ রেলের চাকরিবিধি ৬-এ উল্লেখ রয়েছে, এক বছর পাওনা ছুটি ভোগ করে বা দুই বছর অবসরজনিত ছুটি শেষ করে কর্তৃপক্ষের কাছে বাসা বুঝিয়ে দিলে তবেই অন্যের নামে বাসা বরাদ্দ দেওয়া যাবে। এমনকি বাসা যার নামে বরাদ্দ তিনি ছাড়ার আগে অন্য কোনো ব্যক্তির সঙ্গে মিচুয়াল করতে পারেন। এতে মিচুয়াল করা ব্যক্তির বিষয়টি আগে সুরাহা না করে অন্য কাউকে বাসা বরাদ্দ দেওয়ার সুযোগ নেই।

এ ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে রেলওয়ের (পূর্ব) আইন কর্মকর্তা সালাউদ্দিন আহম্মেদ আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, বাসা বরাদ্দের আদেশটি আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

সংশ্লিষ্টরা জানান, জেলা সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা সাজ্জাদুল ইসলাম যোগদানের পর থেকেই ডিপোর কার্যক্রম নেই বললেই চলে। তিনি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার আদেশও মানেন না। রেলওয়ের বাসা বরাদ্দ নিয়ে ২ থেকে ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত অনৈতিক লেনদেন হয়েছে। যে ঘুষ বেশি দেবে তাকেই আগে বাসা বরাদ্দ দেওয়া হয়।

বাসা হস্তান্তরের আগে কীভাবে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে—এমন প্রশ্নে সহকারী সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক আলমগীর কবির বলেন, আমি আমার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার নির্দেশ পালন করেছি। এদিকে বাসা বরাদ্দ কমিটিতে কারা ছিলেন—এ প্রশ্নের উত্তর দেননি অফিস সহকারী বেদার উদ্দিন।

বাসা বুঝে না পেয়েও কীভাবে অন্যজনকে বরাদ্দ দেওয়া হলো— জিজ্ঞেস করা হলে জেলা সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক (পূর্ব) সাজ্জাদুল ইসলাম বলেন, ‘পিআরএল শেষে বাসা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।’ কিন্তু দপ্তরের আদেশ দেখতে চাইলে তিনি তা দেখাতে পারেননি।

যোগাযোগ করা হলে সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক (পূর্ব) আনোয়ার হোসেন আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, প্রতিবন্ধীর বড় ভাইয়ের লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। অন্যান্য সকল অভিযোগ সম্পর্কে দ্রুত খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আরবি/আলোকিত চট্টগ্রাম

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!