চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনকে পুঁজি করেই জসিমের সম্পদের পাহাড়

নাসিরাবাদে ৪ ফ্ল্যাট—খুলশিতে হাইরাইজ বিল্ডিং, বিলাসবহুল গাড়ি

হাতে সবসময় থাকে ২০ লাখ টাকা দামের ঘড়ি। রয়েছে বিলাসবহুল একাধিক গাড়িও। নগরের নাসিরাবাদে ৪টি ফ্ল্যাটের পাশাপাশি খুলশিতে তুলছেন ১০ তলার বিল্ডিং। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনকে (চসিক) পুঁজি করেই সম্পদের এই পাহাড় গড়েছেন তিনি।

মাত্র ১৬ বছর চাকরি করেই সম্পদের পাহাড় বানানো চসিকের এই কর্মকর্তার নাম মো. জসীম উদ্দিন। তিনি চসিকের পুরকৌশল বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী।

তবে সম্পদের পাহাড় গড়েও শেষ রক্ষা হচ্ছে না তাঁর। জসীম উদ্দিনের অঢেল সম্পদের উৎস খুঁজতে এবার মাঠে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গত ২৭ আগস্ট চসিকের নির্বাহী প্রকৌশলী জসীম উদ্দিনের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে দুদক।

জসীম উদ্দিনের বিরুদ্ধে অভিযোগের সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে সংশ্লিষ্ট রেকর্ডপত্র, কাগজপত্রাদি সরবরাহ করার অনুরোধ করেছে দুদক। আগামী সাত কার্যদিবসের মধ্যে এসব সরবরাহে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে চসিককে অনুরোধ করেছে দুদক।

চসিককে দেওয়া দুদকের চিঠিতে নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জসীম উদ্দিন পুরকৌশল বিভাগের চাকরিতে যোগদানের পর থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত প্রদেয় বছরভিত্তিক বেতন, বোনাস ও বিলের বিবরণী, চসিক কর্তৃক তার সম্পদের দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণী সরবরাহ করতে বলা হয়। এছাড়া তার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘ফাহিম কন্সট্রাকশন’র স্বত্বাধিকারী সাইফুল ইসলামকে এ পর্যন্ত যেসব কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে সব রেকর্ডপত্র সরবরাহ এবং ‘আমিন ইনফ্রাস্ট্রাকচার এসফল্ট প্ল্যান্ট’-এর স্বত্বাধিকারী দিদারুল ইসলামকে এ পর্যন্ত মালামাল ক্রয় বাবদ চসিক যে অর্থ দিয়েছে তার রেকর্ডপত্র সরবরাহ করতে বলা হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০০৬ সালে মাত্র আট হাজার টাকা বেতনে সড়ক পরিদর্শক হিসেবে অস্থায়ীভাবে চসিকে নিয়োগ পান জসীম উদ্দিন। ২০০৯ সালেই বিভাগের ১১ জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাকে পেছনে ফেলে তিনি হয়ে যান নির্বাহী প্রকৌশলী। বর্তমানে পুরকৌশল বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীর দায়িত্বে রয়েছেন তিনি।

জসীম উদ্দিন তাঁর ভাই ও পরিবারের সদস্য দিয়ে গড়ে তুলেছেন ঠিকাদারি ব্যবসা। আড়ালে থেকে তাদের সেই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের জন্য বাগিয়ে নেন চসিকের কাজ। এমনকি চসিকের নিজস্ব অ্যাসফল্ট প্ল্যান্ট থাকার পরও মাল কেনা হতো জসীম উদ্দিনের কারখানা থেকে!

নগরের সাগরিকা রোডে ‘আমিন ইনফ্রাস্ট্রাকচার অ্যাসফল্ট প্ল্যান্ট’ নামে কারখানা রয়েছে জসীম উদ্দিনের। যেটি পরিচালনা করছেন তাঁর আরেক ভাই দিদারুল ইসলাম। যদিও কাগজে-কলমে ওই কারখানার মালিক দেখানো হয়েছে নুরুল আমিন নামের এক ব্যক্তিকে।

স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) ২০০৯ আইন অনুযায়ী, কর্পোরেশনের কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী কর্তৃক স্বজ্ঞানে, প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে, স্বয়ং বা কোনো অংশীদার মারফত কর্পোরেশনের কোনো ঠিকাদারিত্বে স্বত্ব বা অংশ নেওয়া বেআইনি। কিন্তু তথ্য গোপন করে চাকরির পাশাপাশি ছোট ভাই সাইফুল ইসলামকে দিয়ে ঠিকাদারি কাজ করিয়ে যাচ্ছেন জসীম উদ্দিন। তাঁর ভাইয়ের প্রতিষ্ঠানের নাম ‘ফাহিম কন্সট্রাকশন’।

একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, চট্টগ্রাম নগরের নাসিরাবাদ এলাকার আল-ফালাহ গলিতে ‘আইএস অবকাশ’ নামের বিল্ডিংয় ৪টি ফ্ল্যাট রয়েছে জসীম উদ্দিনের। প্রতিটি ফ্ল্যাটের দাম কোটি টাকার বেশি।

নগরের খুলশি এলাকায় ১২ কাঠা জায়গার ওপরে নির্মাণাধীন রয়েছে জসীম উদ্দিনের ১০ তলার বহুতল ভবন। যার বাজারমূল্য প্রায় ২০ কোটি টাকা। একাধিক দামি প্রাইভেট গাড়িও রয়েছ তাঁর। হাতে যে রোলেক্স ঘড়ি পড়েন সেটির দাম ২০ লাখ টাকা!

নগরের পাঁচলাইশের হামজারবাগ হামজার খাঁ লেনের শাহ আমানত আবাসিকে স্ত্রী ও শ্যালিকার নামে রয়েছে চার কাঠা করে আট কাঠার দুটি প্লট। সেখানে একটি প্লটে আটতলার বহুতল ভবন উঠছে। আরেকটিতে সেমিপাকা ঘর রয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, নির্মাণাধীন ভবন ও জায়গার বর্তমান বাজারমূল্য ১৫ কোটি টাকা। ওই আবাসিকের প্রায় ২৮টি ভবনের নেতৃত্ব জসিমের হাতে।

এদিকে দুদকের তদন্তের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মু. তৌহিদুল ইসলাম। তিনি আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, দুদকের চিঠি পেয়েছি। চিঠিতে আগামী সাত কার্যদিবসের মধ্যে নির্বাহী প্রকৌশলী জসীম উদ্দিনের বিভিন্ন তথ্য দিতে বলা রয়েছে। যেসব কাগজপত্র চাওয়া হয়েছে তা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পাঠিয়ে দেওয়া হবে।

প্রসঙ্গত, চট্টগ্রামে ‘আলাদীনের চেরাগ’ সিটি কর্পোরেশনের এক চাকুরের হাতে, ১৬ বছরে অর্ধশত কোটিরও বেশি সম্পদ— শিরোনামে জসীম উদ্দিনের বিরুদ্ধে ২০২২ সালের ২৮ ডিসেম্বর প্রতিবেদন প্রকাশ করে দৈনিক চট্টগ্রাম প্রতিদিন।

আলোকিত চট্টগ্রাম

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!