চট্টগ্রামে হঠাৎ কমে গেল এইচএসসি পরীক্ষার্থী, কারণ জানালেন ৩ অধ্যক্ষ

চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডে আশঙ্কাজনক হারে কমেছে এইচএসসি পরীক্ষার্থী। গত বছরের তুলনায় এবার পরীক্ষার্থী কমেছে ৭ হাজার ২১৩ জন।

এবার চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডে উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এইচএসসি) পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন ৯৩ হাজার ৮৮৯ জন পরীক্ষার্থী। আজ রোববার (৬ নভেম্বর) থেকে শুরু হওয়ার কথা রয়েছে এবারের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা।

পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ২০১৯ সালে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের অধীনে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ৯৯ হাজার ৭৯৬ জন। ২০২০ সালে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা কমে ছিল ৯৭ হাজার ৯০৫ জন। ২০২১ সালে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা কিছুটা বেড়ে হয় ১ লাখ এক হাজার ১০২ জন। সর্বশেষ ২০২২ সালে এক লাফে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা কমেছে ৭ হাজার ২১৩ জন!

শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনাপরবর্তী শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার বিষয়টি বেশি দেখা যাচ্ছে। কেউ কেউ চাকরিতে প্রবেশ করেছেন, আবার গ্রামে এইচএসসি পরীক্ষার আগেই মেয়েদের বিয়ে হয়ে যাচ্ছে। শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা চালিয়ে যেতে এখনই পদক্ষেপ না নিলে শিক্ষার্থীর সংখ্যা আরো কমে যাবে।

এ প্রসঙ্গে আলোকিত চট্টগ্রাম প্রতিবেদক কথা বলেন চট্টগ্রামের শীর্ষস্থানীয় তিন কলেজ অধ্যক্ষর সঙ্গে। তাঁরা জানিয়েছেন শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার কারণ।

চট্টগ্রাম সরকারি হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজ অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. কামরুল ইসলাম বলেন, আমরাও বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত। করোনার পর শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কম, সেইসাথে মনোযোগও কমে গেছে। অনেক সময় তাদেরকে নিয়ে অভিভাবকদের আমরা চিঠি দিই। দেখা যায়, অভিভাবকদের থেকেও অনেক সময় আমরা উল্লেখযোগ্য সাড়া পাই না। যেমন- আমাদের কলেজে একাদশে যারা আছে তাদের অর্ধবার্ষিক পরীক্ষার পর প্রায় ১৩২ জনকে আমরা চিঠি দিয়েছি, তাদের অভিভাবকদের সাথে আলোচনা করার জন্য, কিন্তু তেমন উল্লেখযোগ্য সাড়া পাইনি।

শিক্ষার্থীরা অ্যাকাডেমিক ফলাফল ভালো করছে না, প্যাকটিকেল পরীক্ষায়ও তারা অংশগ্রহণ করছে না। এভাবে অনেক শিক্ষার্থী অনুপস্থিত কিংবা ঝরে যাচ্ছে। করোনার পর থেকে এই সমস্যাগুলো বেশি দেখা যাচ্ছে। এছাড়া শহরে কিছুটা কম হলেও উপজেলা পর্যায়ে মেয়েদের বিয়ে হওয়ায় প্রবণতা বেড়েছে। আমরা কাউন্সিলিং করে যাচ্ছি এবং চেষ্টা করছি শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মোটিভেট করতে হবে— বলেন তিনি।

চট্টগ্রাম সরকারি সিটি কলেজ অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. সুদীপা দত্ত বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমরা খুবই চিন্তিত। করোনা পরবর্তী শিক্ষার্থীদের ক্লাস উপস্থিতির হার আশঙ্কাজনক হারে কমেছে। শিক্ষার্থীদের অ্যাকাডেমিক ফলাফলও ভালো হচ্ছে না। আমরা শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ঠিকমতো পাই না। এছাড়া মনোযোগের অভাব রয়েছে। অনেক মেয়েদের বিয়ে হয়ে গেছে। করোনায় কারো কারো বাবা-মা চাকরিচ্যুত হওয়ায় শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার খরচ চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন। এবার টেস্ট পরীক্ষার পর ফরম ফিলআপের জন্য ফোন করেও অনেককে ফরম ফিলআপ করাতে পারিনি। অনেকেই আর্থিক সমস্যার কথা বলেছে।

এদিকে চট্টগ্রাম কলেজ অধ্যক্ষ প্রফেসর মোজাহেদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, সারাদেশেই করোনা পরবর্তী শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার চিত্র দেখা গেছে। তবে এবার আমাদের কলেজে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা কমেনি। মূলত করোনার পর থেকে শিক্ষার্থীদের মধ্যে পড়াশোনা নিয়ে এক ধরনের অনীহা, সংকট দেখা গেছে। কেউ কেউ চাকরিতে ঢুকেছে, মেয়েদের মধ্য অনেকের বিয়ে হয়ে গেছে, যদিও এটি উপজেলা কিংবা মফস্বল পর্যায়ে বেশি। শিক্ষার্থীদের কীভাবে ক্লাসমুখী করা যায় এবং অভিভাবকদের কীভাবে আরো সচেতন ও উৎসাহিত করা যায় তা নিয়ে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি।

এ ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক নারায়ণ চন্দ্র নাথ আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, সব বোর্ডেই পরীক্ষার্থীর সংখ্যা কমেছে। তবে কেন কমেছে, এটি নিয়ে আমরা এখনই মন্তব্য করতে চাচ্ছি না। এ বিষয়ে জরিপ করলে বোঝা যাবে, শিক্ষার্থীরা কেন পরীক্ষা দিচ্ছে না বা পরীক্ষার্থীর সংখ্যা কেন কমে যাচ্ছে।

চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের তথ্যমতে, এবার ১১১টি কেন্দ্রে ২৬৭টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে পরীক্ষায় অংশ নেওয়া পরীক্ষার্থীদের মধ্যে ৪৫ হাজার ৩৩৯ জন ছাত্র এবং ৪৮ হাজার ৫৪৩ জন ছাত্রী। এছাড়া চট্টগ্রাম জেলায় (মহানগরসহ) পরীক্ষায় অংশ নিবে ৬৮ হাজার ৯৯৬ জন, কক্সবাজারে ১১ হাজার ৪৫৪ জন, রাঙামাটিতে ৫ হাজার ১১৫ জন, খাগড়াছড়িতে ৫ হাজার ৪৭১ জন এবং বান্দরবানে ২ হাজার ৮৫৩ জন।

বিজ্ঞান বিভাগ থেকে অংশ নিবে ১৮ হাজার ৬৭৫ জন পরীক্ষার্থী। এর মধ্যে ৯ হাজার ৭৮৬ জন ছাত্র ও ৮ হাজার ৮৮৯ জন ছাত্রী। মানবিক বিভাগ থেকে ৪১ হাজার ৯৮৮ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ১৭ হাজার ৪২৩ জন ছাত্র ও ২৪ হাজার ৫৬৫ জন ছাত্রী। ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ থেকে ৩৩ হাজার ২১৯ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ১৮ হাজার ১৩০ জন ছাত্র এবং ১৫ হাজার ৮৯ জন ছাত্রী।

এসআই/আলোকিত চট্টগ্রাম

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!