চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) সহকারী পুলিশ কমিশনার (অব.) এবিএম সাহাদাৎ হোসেন মজুমদার (৬২) ও তাঁর স্ত্রী রাজিয়া সুলতানা চৌধুরীর বিরুদ্ধে দুটি মামলা করেছে দুর্নীতি কমিশন (দুদক)।
রোববার (৭ মে) দুদক জেলা কার্যালয় চট্টগ্রাম-১ এর সহকারী পরিচালক মো. এনামুল হক বাদী হয়ে এ মামলা করেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দুদক চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়-১ এর উপপরিচালক নাজমুচ্ছায়াদাত।
মামলায় অভিযুক্ত এবিএম সাহাদাৎ হোসেন মজুমদার ফেনী ফুলগাজী উপজেলার উত্তর তারাকুচা গ্রামের মৃত মোশারফ হোসেন মজুমদারের ছেলে। তিনি বর্তমানে নগরের পাহাড়তলী থানার দক্ষিণ কাট্টলী চুনা ফ্যাক্টরি রোড ১১৪৮/সি বাসায় থাকেন।
তিনি অবসরপ্রাপ্ত সহকারী পুলিশ কমিশনার, পাহাড়তলী অলংকার পুলিশ বক্সের সাবেক পেট্রোল পরিদর্শক ও দামপাড়া সিএমপিতে পাবলিক অর্ডার ম্যানেজমেন্ট পদে কর্তব্যরত ছিলেন। অপর অভিযুক্ত রাজিয়া সুলতানা চৌধুরী তাঁর স্ত্রী।
মামলার অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, দুর্নীতি দমন কমিশনে দেওয়া সম্পদ বিবরণীতে ১৮ লাখ ৩২ হাজার ৫২২ টাকার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ অর্জনের তথ্য গোপনসহ ৬৮ লাখ ৮ হাজার ২৮৭ টাকার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ ভোগদখল করছেন এবিএম সাহাদাৎ হোসেন মজুমদার।
এছাড়া স্ত্রী রাজিয়া সুলতানা চৌধুরীর দেওয়া সম্পদ বিবরণীতে ২৭ লাখ ১ হাজার ৮০৪ টাকার সম্পদ অর্জনের তথ্য গোপনসসহ ৭৫ লাখ ২৬ হাজার ৪৪৮ টাকার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ ভোগদখলে রেখেছেন।
দুদকের অনুসন্ধানে দেখা যায়, এবিএম সাহাদাৎ হোসেন মজুমদার গত ২০১৯ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর ২ কোটি ১৬ লাখ ৫৯ হাজার ৯৩৬ টাকার স্থাবর ও ১০ লাখ ৮৬ হাজার ৮০ টাকার অস্থাবর সম্পদসহ সর্বমোট ২ কোটি ২৭ লাখ ৪৬ হাজার ১৬ টাকার সম্পদ বিবরণী জমা দেন। কিন্তু তাঁর নামে ২ কোটি ২৪ লাখ ৩২ হাজার ৪৫৮ টাকার স্থাবর ও ২১ লাখ ৪৬ হাজার ৮০ টাকার অস্থাবর সম্পদসহ সর্বমোট ২ কোটি ৪৫ লাখ ৭৮ হাজার ৫৩৮ টাকার সম্পদ অর্জনের তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়। এতে তিনি ১৮ লাখ ৩২ হাজার ৫২২ টাকার সম্পদ অর্জনের তথ্য গোপন করেছেন।
এছাড়া পাঁচতলা মার্কেট নির্মাণে গণপূর্ত বিভাগের প্রকৌশলীর পরিমাপে (সিভিল) ১০ লাখ ৪৮ হাজার ১২ টাকা নির্মাণ ব্যয়ও কম দেখিয়েছেন।
এদিকে আয়কর নথি অনুযায়ী নগদ ও ব্যাংকে ১০ লাখ ৬০ হাজার টাকা থাকলেও তা গোপন করেন সম্পদ বিবরণীতে। এছাড়া আয়কর নথি অনুযায়ী পারিবারিক ব্যয়সহ অন্যান্য ব্যয় ৬৭ লাখ ৪০৭ টাকা কম দেখিয়েছেন।
সম্পদ বিবরণী ও অনুসন্ধানে পাওয়া তথ্যে জানা যায়, তিনি ৬৮ লাখ ১৮ হাজার ২৮৭ টাকার সম্পদ জ্ঞাত আয় বহির্ভূতভাবে অর্জন করেছেন।
অন্যদিকে স্ত্রী রাজিয়া সুলতানা চৌধুরীর সম্পদ বিবরণীতে দেখা যায়, চারতলা ভবন নির্মাণে গণপূর্ত বিভাগের পরিমাপে ১৭ লাখ ৬৬ হাজার ৮০৪ টাকা মূল্যের স্হাবর সম্পদ অর্জনের তথ্য গোপন করা হয়েছে। এছাড়া ব্যবসায় বিনিয়োগ, নগদ ও ব্যাংকে থাকা ২৭ লাখ ১ হাজার ৮০৪ টাকার তথ্য গোপন করা হয়েছে। নিজেকে ব্যবসায়ী পরিচয় দিলেও ট্রেড লাইসেন্স বা অন্য কোনো রেকর্ডপত্র উপস্হাপন করতে না পারায় ৭৫ লাখ ২৬ হাজার ৪৪৮ টাকার বিপরীতে তাঁর গ্রহণযোগ্য কোনো আয়ের উৎস পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে দুদক চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়-১ এর উপপরিচালক নাজমুচ্ছায়াদাত বলেন, তদন্তের সময় ঘটনার সঙ্গে অন্য কারো সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া গেলে তা আমলে নেওয়া হবে। দুদক মামলাটি তদন্তের ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
আরএস/আরবি