গরু সঙ্কটের মুখে চট্টগ্রাম, চাহিদার চেয়ে ১ লাখ কম খামারে

করোনা শনাক্ত বেড়ে যাওয়ায় দেশে চলছে ‘কঠোর লকডাউন’। এবারের লকডাউনে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া মানুষের চলাচলে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। এদিকে আর কদিন পরেই কোরবানির ঈদ। চলমান বিধিনিষেধের কারণে এবার চট্টগ্রামে কোরবানির পশু কম আসতে পারে বলে ধারণা করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চট্টগ্রামের হাটগুলোতে অন্যান্য জেলা থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণে কোরবানির গরু না আসলে দাম থাকতে পারে বেশি। এমনকি শেষ সময়ে চলতে পারে গরুর রশি নিয়ে টানাটানিও।

জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের তথ্যমতে, চট্টগ্রামে এবার কোরবানির পশুর চাহিদা রয়েছে প্রায় ৯ লাখের মতো। অন্যদিকে ৮ হাজার ৭১টি খামারে পশু আছে ৮ লাখের কাছাকাছি। সে হিসাবে চাহিদার চেয়ে পশু কম আছে প্রায় এক লাখের মতো। তবে বাস্তব পরিসংখ্যান বলছে, এই ব্যবধান কয়েক লাখের বেশি হতে পারে।

জানা যায়, দেশের অন্যান্য জেলার চেয়ে চট্টগ্রামে কোরবানিদাতার সংখ্যা বেশি হওয়ায় প্রতি বছর সিরাজগঞ্জ, চাপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, ঠাকুরগাঁও, রংপুর, দিনাজপুর, বগুড়া, যশোর, কুষ্টিয়া, মাদারীপুরসহ বিভিন্ন জেলা থেকে গরু এনে চাহিদা পূরণ করা হয়।

তবে এবছর কোরবানির ঈদের আগে ১ থেকে ১৪ জুলাই দেশে সরকারিভাবে লকডাউন ঘোষণা করে নানা বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। লকডাউনে পণ্য পরিবহন চালু থাকলেও গণপরিবহন বন্ধ থাকার কারণে চট্টগ্রামের অনেক গরু ব্যবসায়ী গরু কিনতে যেতে পারেননি। বিভিন্নভাবে কিছু গরু আসলেও তা চাহিদার তুলনায় পর্যাপ্ত নয় বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ফলে এবারের কোরবানির হাটে গরু সঙ্কটের সঙ্গে বাড়তে পারে দামও।

জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের হিসাব মতে, এ বছর চট্টগ্রাম নগরের তিন থানা ও ১৫ উপজেলায় কোরবানির ঈদ উপলক্ষে ৮ হাজার ৭১টি খামারে ৭ লাখ ৬৩ হাজার ৩৩৪টি পশু লালন-পালন করা হয়েছে। চলতি বছরের মে মাস পর্যন্ত এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, সীতাকুণ্ডে ১৪০টি খামারে ৩ হাজার ৮৪২টি, মিরসরাইয়ে ২৬৫টি খামারে ৫ হাজার ৫৬৫টি, সন্দ্বীপে ৯০টি খামারে ৫৭ হাজার ৩৭৬টি, ফটিকছড়িতে ২৭০টি খামারে ৪৫ হাজার ১১৭টি, রাউজানে ২৬৪টি খামারে ৩ হাজার ৬৫টি, রাঙ্গুনিয়ায় ২২৫টি খামারে ৩ হাজার ৬৪০টি এবং হাটহাজারীতে ৩০৩টি খামারে ৩৪ হাজার ৮১৬টি পশু মোটাতাজা করা হয়েছে।

অন্যদিকে বোয়ালখালীতে ১৬৯টি খামারে ৩৮ হাজার ২৯০টি, পটিয়ায় ৫৩৯টি খামারে ৫৬ হাজার ৯৩৫টি, চন্দনাইশে ৫৬০টি খামারে ৩৪ হাজার ৩২১টি, আনোয়ারায় ৪০০টি খামারে ৪৪ হাজার ৭৫৮টি, সাতকানিয়ায় ২২৫টি খামারে ৩ হাজার ৫৭১টি, লোহাগাড়ায় ৪৫০টি খামারে ৩ হাজার ৭৯৯টি, বাঁশখালীতে ১৬৯টি খামারে ৩৪ হাজার ৮৫০টি এবং কর্ণফুলীতে ৪৭৫টি খামারে ৩৯ হাজার ৯১৮টি পশু মোটাতাজা করা হয়।

এর বাইরে নগরের কোতোয়ালিতে ৭৫টি খামারে ৩ হাজার ৪৭৫টি, ডবলমুরিংয়ে ৮৪টি খামারে ৬ হাজার ৯৬২টি, পাঁচলাইশে ৭৫টি খামারে ৭ হাজার ৫৩৮টি পশুসহ চট্টগ্রাম জেলায় মোট ৬ লাখ ২৯ হাজার ৯৪১টি পশু মোটাতাজা করা হয়েছে।

সর্বশেষ জুলাই মাস পর্যন্ত নগরের তিন থানা ও ১৫টি উপজেলায় ৮ হাজার ৭১টি খামারে মোট ৭ লাখ ৬৩ হাজার ৩৩৪টি পশু মোটাতাজা করার তথ্য মিলেছে।

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ রেয়াজুল হক আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, কোরবানির ঈদের আরও কিছুদিন বাকি আছে। আমরা আশা করছি, ঈদের আগে অবস্থার পরিবর্তন হতে পারে।

তিনি বলেন, জীবন ও জীবিকা দুটোই বাঁচাতে হবে। এবছর চট্টগ্রামে ৫২ হাজারের মতো কোরবানির পশুর ঘাটতি আছে। এই ঘাটতি সিরাজগঞ্জসহ অন্যান্য জেলা থেকে গরু এলে পুষিয়ে নেওয়া যাবে।

জেডএইচ

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!