আবারও মানবতার নজির দেখাল কেএসআরএম, উত্তাল সাগর থেকে উদ্ধার ১৬ মহিষ

উত্তাল সাগরে ভাসছে অসহায় মহিষের দল। সিত্রাং তাণ্ডবে তারা হারিয়ে ফেলেছে ঠিকানা। বাঁচার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করছিল অবলা এ প্রাণীগুলো। এর মধ্যে কয়েকটি মহিষ ছিল আহত।

পরিস্থিতি যখন এমন ঠিক সেই মুহূর্তে অসহায় মহিষগুলো উদ্ধারে উত্তাল সাগরে নেমে পড়ে একদল শ্রমিক। একে একে তারা উদ্ধার করে পাড়ে তুলে আনে ১৬টি মহিষ।

মানবতার এমন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে সীতাকুণ্ডের কেএসআরএম গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান কবির স্টিল লিমিটেড শিপইয়ার্ডের শ্রমিকরা। মঙ্গলবার (২৫ অক্টোবর) দুপুর ৩টার দিকে সীতাকুণ্ড উপজেলার মাদাম বিবির হাট ও শীতলপুর এলাকায় অবস্থিত কবির গ্রুপের দুটি শিপইয়ার্ড থেকে মহিষগুলো উদ্ধার করা হয়।

আরও পড়ুন: সিলেটে বন্যাকবলিত ৫০০ পরিবারের পাশে কেএসআরএম

জানা যায়, সোমবার (২৪ অক্টোবর) মধ্যরাতে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের তাণ্ডবে চট্টগ্রামের অন্যান্য উপকূলীয় এলাকার মতো লণ্ডভণ্ড হয়ে পড়ে সীতাকুণ্ডের উপকূলীয় এলাকা। বন্যার পানিতে ডুবে যায় এসব এলাকার বাড়ি-ঘর। নানা জিনিসপত্রের সঙ্গে পানিতে ভেসে যায় অসংখ্য গবাদিপশু।

এদিকে আজ (মঙ্গলবার) দুপুর ৩টার দিকে শীতলপুর এলাকায় অবস্থিত কবির স্টিল লিমিটেডের শিপব্রেকিং ইয়ার্ড এলাকার সাগরে অসহায়ভাবে ভাসতে থাকে বেশ কয়েকটি মহিষ। এ অবস্থায় অবলা এসব প্রাণীকে বাঁচাতে এগিয়ে আসে শিপইয়ার্ডে কর্মরত শ্রমিকরা। তাঁরা সাগর থেকে একে একে উদ্ধার করে ১০টি মহিষ।

এদিকে উপজেলার মাদাম বিবির হাট এলাকায় অবস্থিত কবির গ্রুপের আরেকটি শিপব্রেকিং ইয়ার্ডের সাগরেও ভাসছিল মহিষ। সেখানেও উদ্ধার তৎপরতা চালায় ইয়ার্ডে কর্মরত শ্রমিকরা। অসহায়ভাবে ভাসতে থাকা ৬টি মহিষকে সাগর থেকে ইয়ার্ডে তুলে আনে কবির স্টিলের শ্রমিকরা।

সবমিলিয়ে কবির স্টিলের শিপইয়ার্ডে এখন ১৬টি মহিষ রয়েছে। প্রকৃত মালিকদের এসব মহিষ হস্তান্তর করতে চায় কবির স্টিল কর্তৃপক্ষ। এজন্য ইতোমধ্যে সীতাকুণ্ড উপজেলা প্রশাসনকে বিষয়টি অবহিতও করা হয়েছে।

যোগাযোগ করা হলে কেএসআরএম গ্রুপের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মেহেরুল করিম আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, সীতাকুণ্ডের মাদাম বিবির হাট ও শীতলপুরে অবস্থিত আমাদের দুটি শিপইয়ার্ড থেকে সাগরে ভাসতে থাকা ১৬টি মহিষ উদ্ধার করা হয়েছে। গত রাতে (সোমবার) সিত্রাংয়ের তাণ্ডবে মহিষগুলো পানিতে ভেসে গিয়েছিল। আজ (মঙ্গলবার) দুপুরে আমাদের শিপইয়ার্ড এলাকায় সাগরে মহিষগুলো অসহায়ভাবে ভাসছিল। এ অবস্থায় আমাদের শ্রমিকরা মহিষগুলো উদ্ধার করেছে। এর মধ্যে ২-৩টি মহিষ আঘাত পেয়েছিল। সেগুলোকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। মহিষগুলো প্রকৃত মালিকের কাছে হস্তান্তরের জন্য আমরা উপজেলা প্রশাসনকে জানিয়েছি। আপাতত মহিষগুলো আমাদের শিপইয়ার্ডে আছে।

আরও পড়ুন: চট্টগ্রামে ঠাঁইহারা দুই অনাথ শিশু পাচ্ছে কেএসআরএমের স্নেহের আশ্রয়

এদিকে কবির গ্রুপের শিপইয়ার্ড থেকে মহিষ উদ্ধার সম্পর্কে জানার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করেছেন সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শাহাদাত হোসেন। ফেসবুক পোস্টে ইউএনও লিখেন— ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং এর জলোচ্ছ্বাসের কারণে সীতাকুণ্ডে যে সকল মহিষ ভেসে আসছে সেগুলো আমাদের কাছে আমানত স্বরুপ। এই মহিষ কেউ চুরি করে নিয়ে গেলে বা জবাই করলে তার বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

প্রসঙ্গত, এর আগে কুতুবদিয়ার অদূরে সপ্তাহ ধরে সাগরে ভাসতে থাকা এক ভারতীয় জেলেকে উদ্ধার করেছিল কেএসআরএম গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান এস আর শিপিং লিমিটেড। ২০১৯ সালের ১০ জুলাইয়ের এ ঘটনা বিশ্বজুড়ে আলোচিত হয়। এমন মানবিকতায় সর্বমহলে প্রশংসিত হয় কেএসআরএম।

জেএন/আলোকিত চট্টগ্রাম

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!