ই-অরেঞ্জের কোটি কোটি টাকার প্রতারণার নেপথ্যে ৭ রাঘববোয়াল

গ্রাহকের কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া ই-অরেঞ্জের প্রতারণার নেপথ্যে রয়েছেন সাবেক পুলিশ কর্তাসহ ৭ রাঘববোয়াল। প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক ও বরখাস্তকৃত পুলিশ পরিদর্শক শেখ সোহেল রানাসহ ওই সাত রাঘববোয়ালের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে জারি করা হয়েছে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা।

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জুয়েল দেবের আদালত বৃহস্পতিবার (৭ ডিসেম্বর) শুনানি শেষে সাতজনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।
গ্রেপ্তারি পরোয়ারা জারি হওয়া অন্য আসামিরা হলেন— ই-অরেঞ্জের পরিচালক ও বরখাস্তকৃত পুলিশ পরিদর্শক শেখ সোহেল রানার বোন সোনিয়া মেহজাবিন ও তাঁর স্বামী মাসুকুর রহমান, অংশীদার বিথী আক্তার, প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা আমানুল্লাহ, জায়েদুল ফিরোজ ও কাউসার আহমেদ।

মামলার নথি থেকে জানা যায়, পুরো টাকা পরিশোধের পরও মাসের পর মাস পণ্য ডেলিভারি না দেওয়ার অভিযোগে ই-অরেঞ্জের মালিকসহ সাতজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন নুরুল আবছার পারভেজ নামে এক গ্রাহক। ২০২১ সালের ৬ অক্টোবর তৎকালীন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট হোসেন মো. রেজার আদালতে এ মামলা করেন তিনি।

মামলায় অভিযোগ করা হয়, ২০২১ সালের ২৭ মে’র পর বিভিন্ন সময় পণ্য কেনার জন্য ই-অরেঞ্জকে অর্থ দেন পারভেজ। নির্দিষ্ট সময় পার হয়ে যাওয়ার পরও তাঁকে পণ্য সরবরাহ করেনি প্রতিষ্ঠানটি। অর্ডার নেওয়ার পর ই-অরেঞ্জ কর্তৃপক্ষ ফেসবুকে নোটিশের মাধ্যমে বিভিন্ন সময় গ্রাহকদের পণ্য সরবরাহের আশ্বাস দেয়। কিন্তু পণ্য সরবরাহ না করে দেশের প্রায় এক লাখ গ্রাহকের ১ হাজার ১শ কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়। আত্মসাৎ করা টাকার মধ্যে চট্টগ্রামের নুরুল আবছার পারভেজ, মোর্শেদ সিকদার ও মাহমুদুল হাসান খান নামের তিনজন ব্যবসায়ীর প্রায় সাড়ে ১১ লাখ টাকা পাওনা রয়েছেন। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন।

আরও পড়ুন : হায় হায় কোম্পানি ই—অরেঞ্জের প্রতারণার জাল, চট্টগ্রামে মামলা

রাজধানীর গুলশান থানার মামলায় সিআইডির চার্জশিট থেকে জানা গেছে, সোনিয়া ও তাঁর স্বামী মাসুকুর ২০১৮ সালে ই-কমার্স ব্যবসার পরিকল্পনা করেন। মাসুকুরের সহযোগিতায় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন থেকে ই-অরেঞ্জের নামে দুটি ট্রেড লাইসেন্স নেন সোনিয়া। নাজমুল আলম নামের এক ব্যক্তিকে প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্ব দেওয়া হয়। সোনিয়া একপর্যায়ে বিথী আক্তার নামের এক নারীর নামে মালিকানা হস্তান্তর করেন। মালিকানা বদলের কাগজপত্রে বিথীর প্রকৃত ঠিকানা দেওয়া হয়নি। যা পূর্বপরিকল্পিত প্রতারণার অংশ। সোহেল ও সোনিয়ার ঘনিষ্ঠ এই বিথী|

অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়, ই-অরেঞ্জ নামে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান খুলে কম দামে পণ্য বিক্রির ফাঁদে ফেলে গ্রাহকের ১ হাজার ১শ’ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ ওঠে প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার সোনিয়া মাহজাবিনের বিরুদ্ধে। পরে বিভিন্ন তদন্ত সংস্থার প্রাথমিক তদন্তে বেরিয়ে আসে ই-অরেঞ্জের নেপথ্যে রয়েছেন সোনিয়ার ভাই সোহেল রানাও।

প্রতারণায় সোহেলের নাম উঠে এলে তিনি গা ঢাকা দেন। পরে বিদেশে পালিয়ে যান। ২০২১ সালের ৪ সেপ্টেম্বর তিনি ভারতে আটক হন। তাকে বাংলাদেশে ফেরত আনতে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে ভারতের ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরোকে (এনসিবি) কয়েক দফা চিঠিও দেওয়া হয়েছে|

যোগাযোগ করা হলে বাদীপক্ষের আইনজীবী গোলাম মাওলা মুরাদ আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, নুরুল আবছার পারভেজ নামে এক গ্রাহকের প্রতারণা মামলার অভিযোগপত্র জমা দিয়েছে পিবিআই। আদালত সেই অভিযোগপত্র গ্রহণ করেছেন এবং ই-অরেঞ্জের প্রতারণার নেপথ্যে থাকা সাত রাঘববোয়ালের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন।

আরএস/আরবি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!