শীতে শীতল সবজির বাজার, নতুন আলু নিয়ে নয়া প্রতারণা

নগরের বাজার ভরে গেছে শীতকালীন নানা সবজিতে। ফলে কিছুটা স্বস্তি মিলছে কাঁচাবাজারে। আবার দফায় দফায় বাড়তে থাকা আদা ও শুকনা মরিচের দামও কিছুটা কমেছে। তবে বাজারে আসা নতুন আলু নিয়ে চলছে শুভঙ্করের ফাঁকি। সাধারণ ক্রেতাদের পকেট কাটতে নতুন আলু নিয়ে নতুন প্রতারণার ‘ফাঁদ’ পেতেছেন অসাধু ব্যবসায়ীরা।

সরেজমিন দেখা যায়, নগরের চকবাজার, বহদ্দারহাট, রাহাত্তারপুল ও দেওয়ানবাজার এলাকার খুচরা বাজারে সবজির দোকানে শীতকালীন সবজির সরবরাহ প্রচুর। ফুলকপি, বাঁধাকপি, শিম, টমেটো, গাজরসহ অন্যান্য সবজিতে ভরপুর।

প্রতিকেজি তিতকরলা বিক্রি হচ্ছে ৭৫ থেকে ৮০ টাকা দরে। যা গত সপ্তাহেও ছিল ৯০ টাকা কেজি। দেশি টমেটো বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ৭০ থেকে ৮০ টাকা দরে। যা এর আগেও বিক্রি হয়েছিল ১২০ টাকা কেজিতে। তবে ভারতীয় টমেটোর কেজি ৫০ টাকা।

এছাড়া শিমের কেজি ৫০ থেকে ৬০ টাকা, কাঁচামরিচ মানভেদে ৪০ থেকে ৫০ টাকা। মাসের ব্যবধানে শিম ও কাঁচামরিচের দাম প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে।

এদিকে মিষ্টিকুমড়ার কেজি ৩০ (পাকা) টাকা ও ৩৫ (কাঁচা) টাকা। সপ্তাহখানেক আগেও এই মিষ্টি কুমড়ার কেজি ছিল ৪৫ থেকে ৫০ টাকা। গাজর প্রতিকেজি ৪৫ থেকে ৫০ টাকা, ফুলকপি ও বাঁধাকপি ৩৫ থেকে ৪০ টাকা, বেগুন ৬০ থেকে ৭০ টাকা ও মুলা ২০ থেকে ২৫ টাকা। অথচ গত সপ্তাহেও মিষ্টিকুমড়া ৭০ থেকে ৮০ টাকা, ফুলকপি ও বাঁধাকপি বিক্রি হয়েছিল ৪৫ থেকে ৫০ টাকায়।

নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে বাজারে আসে নতুন আলু। বর্তমানে শীতের তীব্রতার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাজারে বাড়ছে নতুন আলুর সরবরাহ। এই মৌসুমে দুজাতের আলু বাজারে এসেছে। এগুলো হলো- উচ্চ ফলনশীল হাইব্রিড ও দেশি জাত।

দেশি জাতের আলু আকারে ছোট এবং খেতে খুব সুস্বাদু। তাই উচ্চ ফলনশীল হাইব্রিড জাতের আলুর তুলনায় দেশি জাতের আলুর দাম একটু বেশি। ক্রেতাদের কাছে নতুন দেশি আলুর চাহিদা বেশি। বর্তমানে বাজারে দেশি জাতের নতুন আলু ৫৫ থেকে ৬০ টাকা এবং উচ্চ ফলনশীল হাইব্রিড জাতের আলুর কেজি ২৫ থেকে ৩০ টাকা।

তবে বাজারে আসা নতুন আলু নিয়ে প্রতারণার অভিযোগ করেছেন ক্রেতারা। হাইব্রিড জাতের আকারে ছোট আলুকে দেশি জাতের আলু বলে বিক্রি করছেন অসাধু ব্যবসায়ীরা। অথচ হাইব্রিড জাতের এ আলু বিক্রি করছেন দেশি জাতের আলুর দামে! দেখতে অনেকটা একই রকম হওয়ার কারণে ক্রেতারা সহজে বুঝতে পারছেন না। ফলে নিজেদের অজান্তেই অসাধু ব্যবসায়ীদের ফাঁদে পা দিয়ে প্রতারিত হচ্ছেন সাধারণ ক্রেতারা।

এমনই এক ভুক্তভোগী ক্রেতা আমজাদ হোসেন। তিনি আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, বাজারে ছোট আকারের নতুন আলু দেখে দেশি মনে করে ৩শ টাকা দিয়ে ৫ কেজি কিনেছিলাম। দোকানদার দেশি আলু বলে প্রতিকেজি ৬০ টাকা করে নেয়। পরে বাসায় গিয়ে বুঝতে পারি এগুলো দেশি আলু ছিল না। সাধারণত হাইব্রিড আলু আকারে বড় হয়। কিন্তু প্রতারক ব্যবসায়ীরা আকারে ছোট আলুগুলোকে আলাদা করে দেশি আলু বলে ক্রেতাদের কাছে বেশি দাম বিক্রি করছেন। দেশি আলু খেতে যেমন সুস্বাদু, তেমনি বেশিদিন সংরক্ষণ করা যায়। এছাড়া সহজে পচে না। আর হাইব্রিড আলু দ্রুত পচে যায়।

এদিকে চলতি বছরের মাঝামাঝি থেকে টানা বাড়তে থাকা শুকনা ঝাল মরিচের দাম কিছুটা কমেছে। এখন এ মরিচের কেজি ৪৬০ টাকা। গত সপ্তাহেও যা ছিল ৪৮০ টাকা। আবার এরও কয়েকদিন আগে শুকনা ঝাল মরিচের দাম ঠেকেছিল ৫০০ টাকায়!

তবে শুকনা ঝাল মরিচের দাম কমলেও বেড়েছে দেশি মিষ্টি মরিচের দাম। হাটহাজারীর মিষ্টি মরিচ খ্যাত শুকনা মরিচের কেজি এখন ৫২০ টাকা। কয়েকদিন আগেও এটি বিক্রি হয়েছিল ৪৫০ টাকা কেজিতে।

এছাড়া কয়েক দফা বাড়ার পর বছরের শেষে এসে কমেছে আদার দাম। বর্তমানে বাজারে আদা বিক্রি হচ্ছে ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা কেজি দরে। সপ্তাহের ব্যবধানে আদার দাম কেজিতে কমেছে প্রায় ৪০ টাকা।

কেজিতে ৭ থেকে ৮ টাকা কমে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা, রসুন ১০ টাকা কমে ১১০ টাকা এবং মসুর ডাল চিকন ১৪০ টাকা ও মোটা ১০০ টাকা।

তবে মাসের ব্যবধানে বেড়েছে ছোলা ও শুকনা হলুদের দাম। কেজিতে ১৫ টাকা বেড়ে ছোলার দাম প্রতিকেজি ৯০ টাকায়। ইন্ডিয়ান শুকনা হলুদ কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকা। দেশি শুকনা হলুদ ১৫ টাকা বেড়ে প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ১৪৫ টাকায়।

চকবাজার এলাকার মুদি ব্যবসায়ী মো. নাজমুল হোসেন আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, আদা আর শুকনা ঝাল মরিচের দাম গত কয়েক মাসে কয়েক দফা বেড়েছিল। শুকনা ঝাল মরিচের দাম মূলত বাজারে সরবরাহের ওপর নির্ভর করে। বর্তমানে আরও দুজাতের শুকনা মরিচ বাজারে আসায় ঝাল মরিচের দাম একটু কমেছে। আদা-পেঁয়াজের দামও কমেছে। মূলত আমদানির ওপর নির্ভর করে দাম বাড়ে ও কমে। আদা-পেঁয়াজ যেহেতু বেশিদিন মজুত করা যায় না, তাই চাহিদা অনুযায়ী নিয়মিত আমদানি হলে দাম ক্রেতার নাগালের মধ্যে থাকে।

আরবি/আলোকিত চট্টগ্রাম

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!