পরিকল্পিত খুনের শিকার ওমরগণি এমইএস কলেজছাত্র শাওন, নেপথ্যে সেই ‘ক্যামেরা’

ওমরগণি এমইএস কলেজের নিহত ছাত্র শাওন বড়ুয়াকে (২৩) কাপ্তাই রাস্তার মাথা এলাকা থেকে মোটরসাইকেলে অনন্যা আবাসিকের নির্জন স্থানে নিয়ে যান ইমতিয়াজ আলম মুরাদ (২১)। সেখানে ক্যামেরার ব্যাগ ছিনিয়ে নিতে ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে শাওনের উরুতে ছুরিকাঘাত করে মুরাদ। কিন্তু এরপরও শাওনের সঙ্গে না পেরে শরীরের বিভিন্ন অংশে এলোপাতাড়ি ৭টি ছুরিকাঘাত করে মৃত্যু নিশ্চিত করে মুরাদ। এরপর বিষয়টি বাকি সদস্যদের জানালে তারা মুরাদকে ঘটনাস্থলে গিয়ে নিয়ে আসে।

বুধবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) চট্টগ্রাম ষষ্ঠ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কাজী শরীফুল ইসলামের আদালতে এমন জবানবন্দি দেয় গ্রেপ্তার ইমতিয়াজ আলম মুরাদ।

এর আগে চান্দগাঁও থানা পুলিশ ৫ আসামিকে গ্রেপ্তারসহ ছিনতাই হওয়া ক্যামেরা উদ্ধার করে। তারা হলেন—চান্দগাঁও থানার ৫ নম্বর ওয়ার্ড পশ্চিম মোহরা মেহেরাজ খান চৌধুরী ঘাটা বজল ড্রাইভার বাড়ির দিদারুল আলমের ছেলে মো. ইমতিয়াজ আলম মুরাদ, একই এলাকার কুচিয়া পিতার বাড়ির নুরুল আবছারের ছেলে আশহাদুল ইসলাম ইমন (২৪), একই বাড়ির নুরুল আমিনের ছেলে মো. তৌহিদুল আলম (২৩), জানে আলমের ভাড়া ঘরের আবুল কাশেমের ছেলে অটোরিকশা চালক মো. আলমগীর (৩০) এবং কাপ্তাই রাস্তার মাথা পল্টন তালুকদার বাড়ির মো. সেলিমের ছেলে মো. বাহার (২২)।

বুধবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে নগরের চান্দগাঁও থানায় আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (উত্তর) পংকজ দত্ত গ্রেপ্তার আসামিদের বরাত দিয়ে বলেন, আশহাদুল ইসলাম ইমন (২৪) ও মো. তৌহিদুল আলম (২৩) বিয়েসহ নানা ইভেন্টে কন্ট্রাক্টে ফটোগ্রাফি করতো। কিন্তু নিজেদের ক্যামেরা না থাকায় কাজ করতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছিল। ক্যামেরার প্রয়োজনীতা মিটাতে বাহারসহ মিলে করে ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা। তবে এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য যুক্ত করে মো. ইমতিয়াজ আলম মুরাদসহ (২১) অটোরিকশা চালক মো. আলমগীরকে (৩০)।

আরও পড়ুন : ওমরগণি এমইএস কলেজছাত্র শাওন খুনের নেপথ্যে কী

এরপর তারা অনলাইন থেকে বিভিন্ন ফটোগ্রাফারের ফোন নম্বর নিয়ে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে থাকেন। এতে উচ্ছ্বাস বড়ুয়ার পেইজ থেকে ফোন নম্বর নিয়ে কন্ট্রাক্ট করার চেষ্টা করে মুরাদ। কিন্তু তিনি সীতাকুণ্ড উপজেলার কুমিরা ইউনিয়নের বাসিন্দা জনি বড়ুয়াকে কাজটি করতে বলেন। এদিকে জনি বড়ুয়াও কাজটি না করে শাওনকে এ কাজ করতে বলেন।

এদিকে মুরাদসহ অন্যরা গায়ে হলুদের কথা বলে শাওনকে কন্ট্রাক্ট করে ৫০০ টাকা অগ্রিম দেয়। শাওনও গ্রাহকের চাহিদামতো দামি ক্যামেরা ও ল্যান্সসহ নানা সরঞ্জাম নিয়ে ইভেন্টে কাজ করতে যায়।

সোমবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় কাপ্তাই রাস্তার মাথা এলাকা থেকে শাওনের মোটরসাইকেলের পেছনে উঠিয়ে ইভেন্টে নিয়ে যাওয়ার জন্য রওয়ানা দেন মুরাদ। এসময় অন্য আসামিরা অটোরিকশা নিয়ে তাদের পিছু নেয়। পরে অনন্যা আবাসিক এলাকার ইউনিট-২ এর ১ নং রোড এ-ব্লক এবং সি-ব্লকের মধ্যবর্তী বড় রাস্তায় নিয়ে শাওনের কাছে থাকা ক্যামেরার ব্যাগ ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে মুরাদ। কিন্তু শাওন ব্যাগ না দিয়ে ধস্তাধস্তি করতে থাকে। এসময় মুরাদ শাওনকে উরুতে ছুরিকাঘাত করে। এতেও শাওনের সঙ্গে পেরে না উঠে শরীরের বিভিন্ন স্থানে ৭টি ছুরিকাঘাত করে মৃত্যু নিশ্চিত করে।

এরপর গ্রেপ্তার অন্য আসামিদের মুরাদ জানায়, শাওনকে মেরে ফেলেছে। তাকে যেন তারা উদ্ধার করে নিয়ে যায়। পরে অটোরিক্শা নিয়ে এসে মুরাদকে নিয়ে যায় তারা। এসময় শাওনের ক্যামেরা ও ল্যান্স নিয়ে যায় বলে জানান অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (উত্তর) পংকজ দত্ত।

তিনি আরও বলেন, বাহারের কাছ থেকে ১টি ডিজিটাল ক্যামেরা উদ্ধারসহ ১টি ক্যামেরার ল্যান্স, ২টি ফ্লাশ লাইট, ৩টি ক্যামেরার ব্যাটারি উদ্ধার করা হয়। এছাড়া শাওনের সঙ্গে থাকা মোটরসাইকেল, হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত অটোরিকশা এবং ২টি মোবাইল উদ্ধার করা হয়।

এর আগে ২৭ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত আলোকিত চট্টগ্রামের এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে উঠে আসে মূল্যবান ক্যামেরা ছিনতাই করতে খুন করা হয় শাওনকে।

এদিকে আজ সকালে নগরের জামালখান প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করে শাওন বড়ুয়ার সহকর্মীরা। মানবন্ধন শেষে আসামিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করে বিক্ষোভ মিছিল করা হয়।

আরএস/আরবি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!