৬ বছরেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি পায়নি ছাত্রলীগ, মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে শিবির—কক্সবাজার পলিটেকনিকে

শিবিরের আঁতুড়ঘর হিসেবে পরিচিত কক্সবাজার পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট। গুরুত্বপূর্ণ এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটিতেই অর্ধযুগেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি পায়নি ছাত্রলীগ। ২০১৭ সালে গঠিত কমিটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক ইতোমধ্যে পাঠ চুকিয়ে ফেলেছেন। আর এ সুযোগে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি ‘শিবির’ ফের এখানে মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

জানা যায়, পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ছাত্রলীগ সভাপতি কাজী সেজান মাহমুদ হিমেল ও সাধারণ সম্পাদক রাজিবুল হক রাজু প্রাতিষ্ঠানিক পাঠ চুকিয়ে ফেলেছেন। তাদের অনুপস্থিতিতেই জয় বাংলা স্লোগান ও বিভিন্ন কর্মসূচিতে ঝিমিয়ে পড়া ইউনিটকে চাঙ্গা করে রেখেছেন ছাত্রলীগ কর্মীরা। কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে পলিটেকনিক ছাত্রলীগের ব্যানারে প্রোগ্রাম করে যাচ্ছেন তারা।

ক্যাম্পাস ছাত্রলীগের কর্মীরা জানান, ২০১৭ সালের ৩০ জুলাই কক্সবাজার ছাত্রলীগ সভাপতি ইশতিয়াক আহমেদ জয় ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মোরশেদ হোসেন তানিমের স্বাক্ষরিত প্যাডে কক্সবাজার পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ছাত্রলীগের কমিটি অনুমোদন দেওয়া হয়। এতে কাজী সেজান মাহমুদ হিমেলকে সভাপতি ও রাজিবুল হক রাজুকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। কমিটির মেয়াদ অর্ধযুগ হতে চললেও এখনও হয়নি পূর্ণাঙ্গ কমিটি।

এদিকে সভাপতি-সম্পাদক ২০১৮ সালেই পাঠ চুকিয়ে ক্যাম্পাসের বাইরে রয়েছেন। এমন সংকটময় মুহূর্তে ছাত্রলীগ কর্মী ফাওয়াজ মো. চৌধুরী, সাইফুল ইসলাম নয়ন, শাহরিয়ার করিম ফাহিম, শাহারিয়া নূর, শোয়াইব ছিদ্দিকি আদিল, খোরশেদ আলমসহ কয়েকজন ক্যাম্পাস ছাত্রলীগের হাল ধরেছেন।

সাধারণ শিক্ষার্থীরা বলছেন, স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তিদের প্রধান টার্গেট কক্সবাজার পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট। এখানে ফের সক্রিয় হয়ে উঠেছে শিবির কর্মীরা। শিবিরের ব্যানারে নবীন বরণ, শিক্ষাসামগ্রী বিতরণ ও কর্মিসভা করতে দেখা যায় বিভিন্ন মেস ও ক্লাসরুমে। এতে স্থানীয় জামায়াত নেতাদের আর্থিক সহায়তা দেওয়ার খবরও পাওয়া গেছে।

কয়েকজন ছাত্রলীগ কর্মী জানান, এখানে শিবির ক্যাডার ও ছাত্রদলের ক্যাডারদের হামলায় অনেক ছাত্রলীগ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। এলাকাবাসী ও পুলিশের সহায়তায় কোনোমতে প্রাণে বেঁচে গিয়েছিলেন সাজ্জাদ হোসেন চৌধুরী ও তাঁর পাঁচ সহযোদ্ধা।

যোগাযোগ করা হলে কক্সবাজার পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মো. সাজ্জাদ হোসেন চৌধুরী আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, কক্সবাজার জেলার সাবেক সহসভাপতি জালাল উদ্দীন মিঠু, বর্তমান সহসভাপতি বোরহান উদ্দিন খোকন, বর্তমান সাংগঠনিক সম্পাদক এহেছানুল হক মিলন, সাবেক কক্সবাজার পৌর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শাকিল আজম ও বর্তমান সাধারণ সম্পাদক মনিরুল হকসহ আরো অনেক বাঘা বাঘা নেতা তৈরির কারখানা কক্সবাজার পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট।

২০১৭ সাল থেকে কোনো নেতাকে রাজপথেই দেখা যাচ্ছে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি নুরুল আজিম কনক ও সাধারণ সম্পাদক এম এ মনজুর পরিষদ পলিটেকনিকে ছাত্রলীগের আবাদ করেছেন। সাবেক সভাপতি আলী আহাম্মেদ ও সাধারণ সম্পাদক আবু তাহের আজাদ পরিষদ জেলার শক্তিশালী ইউনিট হিসেবে পরিচিতি পায়। সর্বশেষ ইশতিয়াক আহাম্মেদ জয় ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মোরশেদ হোসাইন তানিম পরিষদের সময়ে পলিটেকনিক তার গৌরব অক্ষুন্ন রাখে। কিন্তু বর্তমানে এসএম সাদ্দাম হোসাইন ও আবু মো. মারুফ আদনান পরিষদের সাংগঠনিক কার্যক্রমের সময়ে পলিটেকনিকের কেন এ অবস্থা? যেখানে পলিটেকনিক ছাত্রলীগে প্রতিবছর নতুন নেতৃত্ব সৃষ্টি হয়, সেখানে বছরের পর বছর কেন কোনো নেতৃত্ব সৃষ্টি হচ্ছে না?

দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি এসএম সাদ্দাম হোসাইন বলেন, এমন কোনো অভিযোগ জেলা ছাত্রলীগকে জানানো হয়নি। যদি এমন কোনো অভিযোগ থাকত সৎ উদ্দেশ্য নিয়ে তা আমাদের জানালে আমরা সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিতে পারতাম। আমাদের না জানিয়ে গণমাধ্যমের কাছে জানানো মানে এতে কোনো অসৎ উদ্দেশ্য রয়েছে। তবে সাংগঠনিক কার্যক্রম গতিশীল করতে কক্সবাজারের সকল ক্যাম্পাসে কমিটি গঠন করা হবে।

একই প্রসঙ্গে সাধারণ সম্পাদক আবু মো. মারুফ আদনান বলেন, ২০২০ সালের নভেম্বরে জেলা ছাত্রলীগের দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে কোভিডের কারণে বেশিরভাগ ক্যাম্পাসের পাঠদান বন্ধ ছিল। হুট করে কমিটি ঘোষণা করলে জুনিয়র ছেলেরা কি করতে কি ঘটিয়ে ফেলে তো বলা যায় না। সাংগঠনিক কার্যক্রম গতিশীল করতে প্রতিটি কর্মীকে নার্সিং করে গড়ে তুলতে হচ্ছে।

তিনি বলেন, দ্রুত সময়ের মধ্যে সকল ক্যাম্পাসের কমিটি দেওয়া হবে। তাছাড়া অন্যান্য যেসকল কমিটির মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে তা নতুন কমিটির আওতায় আনার জন্য কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।

এসআই/আলোকিত চট্টগ্রাম

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!