৬ দিন ধরে হাঁটুপানি ওমর আলী মাতব্বর লেইনে—কাউন্সিলর দায় চাপালেন সিডিএর ঘাড়ে

বুধবার সকাল সাড়ে ১১টা। মাথার ওপর রোদ উঠেছে। নগরের আতুরার দোকান হয়ে ওমর আলী মাতব্বর লেইনের কিছুদূর যেতেই দেখা গেল রাস্তায় জমে আছে হাঁটুপানি। আর এই পানির মধ্যেই চলাচল করছেন এলাকার মানুষ ও পথচারী।

খোঁজ নিয়ে জানা গেল, একদিন কিংবা দুদিন নয় ৬ দিন ধরে পানিবন্দী ওই এলাকার মানুষ। অথচ পাশেই রয়েছে কাউন্সিলর কার্যালয়। তবে কাউন্সিলরকে এলাকার কেউ একদিনও চোখে দেখেননি।

গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে আজ বুবধার দুপুরের পর পর্যন্ত বৃষ্টি ছিল না। তবুও এই এলাকায় জমে আছে হাঁটুপানি। তবে এখনও পর্যন্ত খোঁজখবর নিতে আসেননি স্থানীয় কাউন্সিলর এমন অভিযোগ এলাকার বাসিন্দা ও দোকান মালিকদের।

আরও পড়ুন: ‘হঠাৎ বৃষ্টিতে’ রাস্তা—অলিগলিতে হাঁটুপানি, খোলা মাঠ যেন পুকুর

সরেজমিন দেখা গেছে, আঁছি শাহ মাজার থেকে বহদ্দারহাট পুকুর পাড়ের পূর্ব পাশে রাস্তাজুড়ে হাঁটুপানি। এছাড়া আশপাশের নিচতলার বাসবাড়ি ও দোকানেও জমে আছে পানি। দুর্ভোগ নিয়ে পথ চলছে এলাকার মানুষ ও পথচারীরা। স্কুল-কলেজ শিক্ষার্থীদেরও দুর্ভোগের কমতি নেই। পানি থেকে বাঁচতে অনেককে বাধ্য হয়ে দ্বিগুণ ভাড়ায় পৌঁছতে হয়েছে গন্তব্যে। এসময় এলাকার কিছু কিশোর ব্যস্ত মাছের খোঁজে।

এদিন সকাল ১১টা ৩৭ মিনিটের দিকে হাঁটুর ওপর প্যান্ট তুলে পানি ডিঙিয়ে আসতে দেখা গেল চান্দগাঁও এনএমসি উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী কৌশিক আলম নিহানকে। জানতে চাইলে সে বলে, বৃষ্টি ও পানির কারণে ৩ দিন স্কুলে যেতে পারিনি। আজ আসা-যাওয়া করতে হলো পানির মধ্যেই। রাস্তায় ৫-৬ দিন ধরে পানি জমে আছে। অল্প বৃষ্টিতে এলাকায় পানি উঠে। সহজে আর নামে না।

এলাকাবাসী জানান, জলাবদ্ধতার সমস্যা এলাকায় দীর্ঘদিনের। অল্প বৃষ্টিতে জমে যায় হাঁটুপানি। পানি নামতে সপ্তাহ পেরিয়ে যায়। কাউন্সিলর এসব বিষয়ে অবগত হলেও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেননি। ফলে প্রতিবছর দুর্ভোগ বাড়ছেই।

এলাকার বাসিন্দা ও গাউসিয়া হার্ডওয়্যারের মালিক মো. হোসেন বলেন, ২০ বছর ধরে এলাকায় আছি। এখানে অল্প বৃষ্টিতেই পানি উঠে। ৫ দিন পর দোকান খুললাম। বৃষ্টি বন্ধ হলেও রাস্তার পানি নামছে না। আশপাশের নালাগুলো আবর্জনায় ভরা। পরিষ্কারের বালাই নেই। কাউন্সিলন মহোদয়কে এখনও পর্যন্ত দেখা যায়নি।

তিনি আরও বলেন কাউন্সিলর মহোদয় একসময় এই পথ দিয়ে গাড়ি নিয়ে যাওয়া-আসা করতেন। তখন তাকে সমস্যার কথা বলা হয়েছিল। আশ্বাস দিয়েছিলেন, কিন্তু সমস্যার সমাধান হয়নি।

আরও পড়ুন: জলের নিচে চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল, হাঁটুপানি ডিঙিয়ে মেলে জরুরি ওষুধ

দোকানদাররা জানান, প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে এখানে পানি উঠে। এবার গতবারের চেয়ে পানির পরিমাণ ছিল বেশি। এছাড়া সহজে পানি নামছেও না। ফলে দুর্ভোগ বাড়ছে।

আমিনস পুষ্প বিতানের মালিক নুরুল আমিন বলেন, এলাকায় দোকান নিয়েছি দুবছর। গতবারের চেয়ে এবার পানি বেশি উঠেছে। প্রায় ৬ দিন মানুষ পানিবন্দী। ব্যবসা-বাণিজ্যও একরকম বন্ধ। বেচাবিক্রি নেই। তবে আমাদের দুঃখ দেখার কেউ নেই।

স্ক্র্যাপ দোকান মালিক মো. সৈয়দ বলেন, দোকানের ভেতর পানি ছিল কোমর সমান। তাই ৩ দিন ধরে বাধ্য হয়ে দোকান বন্ধ রাখতে হয়েছে। দোকানের পানি কমলেও রাস্তার পানি কমছে না। ড্রেন-নালাগুলো সঠিক সময়ে পরিষ্কার না করায় এমন অবস্থা বলে জানান তিনি।

এদিকে অভিযোগ অস্বীকার করে সব দোষ চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) ঘাড়ে চাপিয়েছেন কাউন্সিলর।

জানতে চাইলে ৬ নম্বর পূর্ব ষোলশহর ওয়ার্ড কাউন্সিলর এম আশরাফুল আলম আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, নগরে জলাবদ্ধতা নিরসনের কাজ করছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। খালে যদি পানি না যায় সেটা কি আমাদের বা আমার একার দোষ?

আমি দেখতে যাইনি কিন্তু আমার যা করার তা করেছি। মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে গেছি। তাদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করেছি। এখনও করছি। আমার ওয়ার্ডে ২ লাখ মানুষ। সবার বাসায় যাওয়া ও সেবাযত্ন করা কি আমার একার পক্ষে সম্ভব?

আরও পড়ুন: পানির নিচে চট্টগ্রাম—সমালোচনার ঝড়, কটাক্ষ

তিনি বলেন, এই রোডের টেন্ডার হয়েছে। আগামী নভেম্বর-ডিসেম্বরের দিকে কাজ শুরু হবে। শুধু রাস্তা উঁচু করলে হবে না। খালগুলো পরিষ্কার থাকতে হবে। এলাকার ড্রেনগুলো এখনও ৫ ফুট গভীর পর্যন্ত পরিষ্কার আছে। কিন্তু খালে পানি যেতে না পারায় রাস্তায় পানি আটকে আছে।

তিনি আরও বলেন, খাল পরিষ্কারের দায়িত্ব আমাদের না। আমাদের দায়িত্ব ড্রেন পরিষ্কারের। ড্রেন পরিষ্কার করলেও কয়েকদিন বৃষ্টি হলে পলি জমে যাচ্ছে। পলিগুলো আমাদের বারবার পরিষ্কার করতে হচ্ছে। লোকবল সংকট নিয়েও আমাদের কার্যক্রম অব্যাহত আছে।

আলোকিত চট্টগ্রাম

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!