৪ চোরে ঐক্যজোট—৩ জন করে চুরি, আরেকজন স্বর্ণ গলিয়ে বানায় বার

নগরের কোতোয়ালির থানার বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে অভিনব কায়দায় চুরির মূল হোতাসহ ৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ সময় তাদের কাছ থেকে সাড়ে ৩ ভরি চোরাই স্বর্ণালংকারসহ চুরির কাজে ব্যবহৃত সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়।

গ্রেপ্তাররা হলেন— ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা থানা এলাকার মো. জাকির হোসেনের ছেলে শাফায়েত হোসেন ওরফে রিফাত (২২), কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর এলাকার আবুল হোসেনের ছেলে মো. আশিক (১৯), চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলার ধলঘাট এলাকার সন্তোষ দত্তের ছেলে বিজয় দত্ত (২০) এবং কক্সবাজারের রামু থানার পালপাড়া এলাকার শ্যামল পালের ছেলে জয় পাল (২৩)।

জানা যায়, গ্রেপ্তার সবাই সিরিজ চোরচক্রের সদস্য। তারা ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন বাসা-বাড়িকে টার্গেট করে পরিকল্পনা সাজিয়ে বিভিন্ন সময়ে চুরি করে আসছিল। এরই ধারাবাহিকতায় গত মার্চে কোতোয়ালি থানার রহমতগঞ্জ বাই লেইনের একটি ভবন থেকে সাড়ে ৮ ভরি স্বর্ণালংকারসহ ৭০ হাজার টাকা চুরি করে চক্রের সদস্যরা। এ ঘটনায় ফরিদুল আলম নামে একজন বাদি হয়ে কোতোয়ালি থানায় মামলা করেন।

একইভাবে গত ১ এপ্রিল দেওয়ানবাজার এলাকার একটি ভবন থেকে সাড়ে ৫ ভরি স্বর্ণালংকার চুরি হয়ে যাওয়ার অভিযোগে কোতোয়ালি থানায় মামলা করেন মো. বোরহান উদ্দিন চৌধুরী নামে এক ব্যক্তি।

আরও পড়ুন: আমরা সবাই বাঙালি : জগন্নাথ দেবের স্নানযাত্রা মহোৎসবে হেলাল আকবর চৌধুরী বাবর

এর চারদিন পর ৫ এপ্রিল মোমিন রোডের একটি বাসা থেকে প্রায় ১৩ ভরি স্বর্ণালংকার চুরি করে ওই চক্রের সদস্যরা। এ ঘটনায়ও মামলা করা হয় কোতোয়ালি থানায়। এছাড়া গত ২ মে রহমতগঞ্জ বাই লেইনের অপর একটি ভবন থেকে দুই ভরি স্বর্ণালংকারসহ ল্যাপটপ ও কাপড় চুরি করে চোরচক্রের সদস্যরা। এ ঘটনায় থানায় আরেকটি মামলা করা হয়।

চুরির ঘটনায় কোতোয়ালি থানায় হওয়া বিভিন্ন মামলার পরিপ্রেক্ষিতে বিশেষ নজরদারি করা হয়। বিভিন্ন এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ পর্যবেক্ষণ করে টেরিবাজার মোড় থেকে শাফায়েত হোসেন ওরফে রিফাতকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এ সময় তার কাছ থেকে চুরির কাজে ব্যবহৃত একটি লোহার ছেনি ও একটি লোহার কাটার উদ্ধার করা হয়। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে মঙ্গলবার বলুয়ারদিঘীর পূর্ব পাড় থেকে মো. আশিককে গ্রেপ্তার করা হয়।

তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে কোরবানীগঞ্জ এলাকা থেকে বিজয় দত্ত এবং কে সি দে রোডের ডেল মার্কেটের সামনে থেকে জয় পালকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এ সময় তাদের কাছ থেকে সাড়ে ৩ ভরি স্বর্ণালংকার উদ্ধার করা হয়েছে। গ্রেপ্তার জয় পাল মূলত একজন স্বর্ণের কারিগর। এই চোরচক্রের গ্রেপ্তার বাকি তিন চোর বিভিন্ন বাসা-বাড়ি থেকে স্বর্ণালংকার চুরি করে। এরপর চোরাই স্বর্ণালংকার এনে দেয় জয় পালকে। জয় স্বর্ণালংকার গলিয়ে বার আকারে বিভিন্ন কারিগরের কাছে জমা রাখে।

দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহেদুল কবির আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, যাদেরকে গ্রেপ্তার করেছি সেই চারজন মিলেই হচ্ছে একটা চোর গ্রুপ। তারা কোতোয়ালি থানা এলাকাসহ নগরের নানা এলাকায় দিন-রাতে ঘুরাফেরা করে বিভিন্ন বাসা-বাড়ির প্রতি বিশেষ নজর রাখত। এরপর সুযোগ বুঝে তারা টার্গেট করা বাসা-বাড়িতে ঢুকে চুরি করে। কোনো বাসায় তালা দেওয়া থাকলে তা লোহার কাটার বা ছেনির সাহায্যে ভেঙে মূল্যবান জিনিসপত্র চুরি করতো। এরা কেবল স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা চুরি করতো, টিভি-ফ্রিজ কিংবা বাসা বাড়ির অন্য কোনো কিছু এরা চুরি করতো না। এটা একটা তাদের কৌশল ছিল।

তিনি আরও বলেন, এই গ্রুপের জয় পাল নামে যে গ্রেপ্তার হয়েছে সে হচ্ছে মূলত স্বর্ণের মেকার। বাকি তিনজন ধারাবাহিকভাবে চুরি করে এসে স্বর্ণালংকারগুলো জয় পালকে দিতো। জয় এসব গলিয়ে সংরক্ষণসহ বিক্রির কাজ দেখাশুনা করতো। এই চোর গ্রুপটির কাছে আরো চোরচক্রের তথ্য পেয়েছি। তাদের নাম আমাদের কাছে আছে। ধারাবাহিকভাবে তাদের সবাইকে গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।

জেএন/এসআই

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!