হাসপাতালে করোনা রোগীর ‘সাপোর্ট’ যন্ত্রাংশ ‘বিনাটাকায়’ সচল করবে ‘মানবিক যুবক’

চট্টগ্রামের সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে বাড়ছে করোনা রোগীর সংখ্যা। এ কারণে দেখা দিয়েছে শয্যা সংকট। বাড়তি রোগীর চাপ সামলাতে কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি চিকিৎসকরা। প্রায় প্রতিদিন নগরের করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালগুলোতে রোগীর চাপ বাড়ছে। এর মধ্যে মুমূর্ষু রোগীর সংখ্যাই বেশি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রোগীর চাপ বাড়ায় সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে আইসিইউ (নিবির পরিচর্যা ইউনিট) শয্যা যেমন ফাঁকা নেই তেমনি এইচডিইউ (হাই ডিপেন্ডেন্সি ইউনিট) শয্যারও দেখা দিয়েছে সংকট।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনা আক্রান্তদের শ্বাসকষ্টে ও ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রে দ্রুত সময়ের মধ্যে অক্সিজেন সাপোর্টের প্রয়োজন হয়।

এমন পরিস্থিতিতে করোনা রোগীদের চিকিৎসা ব্যবস্থায় আইসিইউ ও এইচডিইউর চেয়ে হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা ব্যবহারের উপর বেশি জোর দিচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা।

আরও পড়ুন: ‘মানবিক হাসপাতালের’ যাত্রা শুরু, ফোন করলেই বাসায় যাবে ডাক্তার

চিকিৎসকরা বলছেন, হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলার মাধ্যমে রোগীকে ৮০ লিটার পর্যন্ত অক্সিজেন সাপোর্ট দেওয়া যায়। সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইনে লিক বা বিকল হলে দেখা দিতে পারে মৃত্যুর শঙ্কা। সঠিক সময়ে মুমূর্ষ রোগীদের অক্সিজেন ও হাইফ্লো ন্যাজাল ক্যানেলা সাপোর্ট দিতে না পারলে রোগী যেকোনো সময় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তে পারেন।

এক্ষেত্রে হাইফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা, বাইপেপ ও সিপেপ মেশিন এখন মুমূর্ষ রোগীদের চিকিৎসায় আশার আলো দেখাচ্ছে। তবে ব্যয়বহুল মেশিনগুলো নষ্ট হওয়ার পর তা সারিয়ে তোলা ও টেকনেশিয়ান পাওয়া সময়সাপেক্ষ ব্যাপার হওয়ায় ব্যবহৃত অনেক মেশিন বর্তমানে নষ্ট হয়ে পড়ে আছে হাসপাতালে। কেননা একটি হাইফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা মেরামত করতে লাখ টাকা খরচ হয়।

সম্প্রতি বেসরকারি একটি টেলিভিশন চ্যানেলের সাক্ষাৎকারে স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. মিনজুর রহমান বলেন, চট্টগ্রামের সরকারি হাসপাতালগুলোতে অনেক হাইফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা নষ্ট হয়ে যাওয়ায় আইসিইউ’র উপর চাপ বেড়ে গেছে। নষ্ট হয়ে যাওয়া হাইফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলাগুলো যদি মেরামত করা যায় তাহলে আইসিইউ’র উপর চাপ অনেকটা কমে আসবে।

এদিকে করোনাকালের সংকটময় মুহূর্তে বন্দর হাসপাতালের মেকানিকেল ও বায়োমেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট ফোরকান উল্লাহ ভূঁইয়া দিয়েছেন ‘মানবিক’ এক ঘোষণা। করোনা রোগীদের সেবায় হাইফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা, বাইপেপ, সিপেপ মেশিন, সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্লান্ট, মেডিকেল ইকুইপমেন্ট, ফ্লোমিটার অক্সিজেনের বোতল রিপেয়ারসহ সব ধরনের সার্ভিস তিনি করে দিবেন কোনো টাকা ছাড়াই!

জানা গেছে, আরব আমিরাতের বিখ্যাত তাওয়াম হাসপাতালে কাজের অভিজ্ঞতা রয়েছে ফোরকান উল্লাহ ভূঁইয়ার। এক বছর আগে তিনি অক্সিজেন প্লান্ট ইনচার্জ হিসেবে বন্দর হাসপাতালে যোগ দেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফোরকান উল্লাহ ভূঁইয়া আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে আমি এ সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সঠিক সময়ে অক্সিজেনের অভাবে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অনেক রোগী মারা যাচ্ছে। তাই চিকিৎসা সুবিধায় নষ্ট হয়ে পড়ে থাকা হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলাসহ অন্যান্য মেডিকেল ইকুইপমেন্টগুলো আমি বিনামূল্যে মেরামত করে দেব। দিনরাত ২৪ ঘণ্টা ০১৮৯২-০৪৪৯৯৮ নম্বরে যোগাযোগ করলে ফ্রি সার্ভিস দেওয়া হবে।

তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবরে জানতে পারলাম চট্টগ্রামের বিভিন্ন হাসপাতালে ৪০টি হাইফ্লো ন্যাজল ক্যানোলা দীর্ঘদিন বিকল হয়ে পড়ে আছে। শ্বাসকষ্ট ও ডেলটা ভেরিয়েন্ট রোগীর জন্য হাইফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা খুবই জরুরি। তাই সংকটকালীন পরিস্থিতিতে করোনা রোগীর পাশে দাঁড়াতে প্রয়োজনীয় মেডিকেল ইকুইপমেন্ট বিনামূল্যে সার্ভিসিং করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

আরবি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!