মাঠের নেতারা মুখেই সরব, আচমকা থমকে গেল হাসপাতালবিরোধী আন্দোলন

শীতের হাওয়ায় শীতল হয়ে গেছে চট্টগ্রামের সিআরবিতে হাসপাতালবিরোধী আন্দোলন। লাগাতার এ আন্দোলনের অগ্রে থাকাদের দেখা নেই। মুখে সরব থাকলেও মাঠে নেই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া আওয়ামী লীগ নেতারা। একসময়ে হাসপাতালবিরোধী আন্দোলনের মাঠে হুঙ্কার দিয়ে লোক জমানো নেতাদের আচমকা এমন আচরণে কর্মীরা হতাশ।

গত বছরের জুলাই থেকেই সিআরবিতে হাসপাতাল প্রকল্প বাতিলের দাবিতে টানা আন্দোলন চলছিল। বেশ কিছু সংগঠনের পাশাপাশি আন্দোলনের মাঠে আগুন ঝরিয়েছিলেন সিনিয়র আওয়ামী লীগ নেতারা।

এর মাঝেই গত ২৭ অক্টোবর সিআরবি এলাকায় হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজ নির্মাণের প্রকল্পটি ‘বঙ্গমাতা’র নামে করার অনুমতি দেয় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্ট। ট্রাস্টের চেয়ারপারসন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওই সভার সিদ্ধান্ত ৫ ডিসেম্বর চিঠি দিয়ে জানানো হয় রেল সচিবকে। বেসরকারি ইউনাইটেড এন্টারপ্রাইজ অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেড হাসপাতালটি নির্মাণ করবে।

আরও পড়ুন: ‘গাছের সঙ্গে নিষ্ঠুরতা’—পেরেক ঠুকে সিআরবিতে ‘পরিবেশ’ আন্দোলন সুজনের

হাসপাতালের পক্ষে থাকারা বলছেন, প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় নামকরণের এই অনুমোদন থেকেই হাসপাতালের পক্ষে সরকারের অবস্থান স্পষ্ট হয়ে গেছে। এর মধ্যে হাসপাতাল প্রকল্পকে ঘিরে একটি রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া ও সিআরবির প্রবেশ পথে গেইট নির্মাণ নিয়ে রেলওয়েও নিজেদের ‘শক্ত অবস্থান’ জানিয়ে দিয়েছে।

অথচ সিআরবিতে হাসপাতাল নির্মাণ রুখতে গত বছরের জুলাইয়ে সমাজবিজ্ঞানী প্রফেসর ড. অনুপম সেনকে চেয়ারম্যান এবং অ্যাডভোকেট ইব্রাহীম হোসেন বাবুলকে সদস্য সচিব করে ১০০১ সদস্যের কমিটিও গঠিত হয়েছিল। ওই কমিটির কো-চেয়ারম্যান হিসেবে ছিলেন হয় সদ্যপ্রয়াত শহীদ জায়া বেগম মুশতারী শফি, কবি ও সাংবাদিক আবুল মোমেন, মানবাধিকার কর্মী অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত, মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধ গবেষক মাহফুজুর রহমান, অধ্যাপক ডা. একিউএম সিরাজুল ইসলাম, সাংস্কৃতিক সংগঠক ও রাজনীতিবিদ মফিজুর রহমান, খোরশেদ আলম সুজন, পরিবেশবিজ্ঞানী ড. ইদ্রিস আলী, ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের চেয়ারম্যান প্রবীর কুমার সেন, স্থপতি আশিক ইমরান, মুক্তিযোদ্ধা মো. ইউনুচ ও রাজনীতিবিদ মাজহারুল হক শাহকে।

এছাড়াও ভিন্ন ব্যানারে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছিলেন নগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি খোরশেদ আলম সুজন। আন্দোলন করতে গিয়ে এই নেতা গাছে পেরেক ঠুকে কলসি ঝুলানো এবং অশালীন ভাষার বক্তব্যের জন্য কিছুটা চাপের মুখেও পড়েন। অশালীন বক্তব্যের পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুঁড়েন নগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরীও। আওয়ামী লীগের অনেক সিনিয়র নেতা সরকারের এ প্রকল্পের বিরোধিতা করার আগে খোরশেদ আলম সুজনকে আওয়ামী লীগ থেকে পদত্যাগ করা উচিত বলেও মন্তব্য করেন।

এদিকে এত রথী-মহারথী থাকার পরও আন্দোলন ঝিমিয়ে পড়াকে মানতে পারছেন না হাসপাতালবিরোধী সমর্থকরা। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকে ক্ষোভপ্রকাশও করেছেন। কেউ বলছেন— ‘সাত আটজন ছাড়া সিআরবি রক্ষকরা শীতের কবলে পড়েছে!’ আবার কেউ বলছেন— ‘অনেকে নিজ নিজ ভাগ নিয়ে কেটে পড়েছেন।’

আরও পড়ুন : সিআরবিতে হাসপাতাল—প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তেই অটল থাকবেন মাহতাব

আন্দোলনের নেতারা যা বললেন

যোগাযোগ করা হলে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও সাবেক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, আমি করোনা পজিটিভ। ডাক্তার আমাকে কথা বলতে বারণ করেছে। আমি এখন কোনো কথা বলতে পারছি না। আমার জন্য দোয়া করবেন।

সিআরবি আন্দোলনের মূল নেতারা নিষ্ক্রিয় হয়ে গেছেন কিনা— এমন প্রশ্নের উত্তরে নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব এডভোকেট ইব্রাহীম হোসেন বাবুল বলেন, আমরা আমাদের কর্মসূচি কন্টিনিউ করবো। আমরা মাঠের কর্মসূচিও রাখবো, একইসঙ্গে আইনি লড়াইয়েরও প্রস্তুতি নিচ্ছি। আমরা চাচ্ছি অহিংস ও অরাজনৈতিকভাবে আন্দোলনটা এগিয়ে নিতে।

নাগরিক কমিটির কো-চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করা চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান বলেন, এখন পর্যন্ত এই আন্দোলনের ব্যাপারে দল থেকে কোনো বাধা দেওয়া হয়নি। যদি দল এই বিষয়ে অবস্থান জানতে চায়, তাহলে আমরা দলের কাছে জবাবদিহি করবো। আমরা চট্টগ্রামের মানুষের স্বার্থে এই আন্দোলন চালিয়ে নিচ্ছি।

আরও পড়ুন : কঠোর হচ্ছে আ.লীগ—সিআরবির হাসপাতালবিরোধী নেতারা দলীয় নজরদারিতে

অপরদিকে ডা. মাহফুজুর রহমানের দাবি— ‘আন্দোলন ঠিকভাবেই চলছে। সিনিয়র অনেকে বিভিন্ন কারণে যেতে পারছেন না। যেমন ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল করোনা আক্রান্ত। কিন্তু আমি প্রতিদিন যাচ্ছি।

রাস্তা বন্ধ করে রেলওয়ের গেট বসানো প্রসঙ্গে তিনি বলেন, একটা সংকট তৈরি করার জন্যই এসব করা হচ্ছে। রাস্তা বন্ধ করে দিচ্ছে, গেইট বসাচ্ছে। তারা চাচ্ছে একটা বিশেষ পরিস্থিতি হোক। আমরা সেই ফাঁদে পা না দিয়ে আমাদের কাজ করছি।

‘উস্কানি দিয়ে আন্দোলনকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে’ বলে মন্তব্য করেন নগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনি। তিনি বলেন, রেলওয়ে গেট বসাচ্ছে, আর একটা পক্ষ বলে যাচ্ছে আন্দোলন নিষ্ক্রিয় হয়ে গেছে। এটা মূলত উস্কানি। তারা চাচ্ছেন আমরা গিয়ে বাধা দিই। এই সুযোগে একটা পরিস্থিতি তৈরি করে তারা আন্দোলনকে ঠেকিয়ে দিবে। আমরা এই ফাঁদে পা দিচ্ছি না।

আলোকিত চট্টগ্রাম

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!