হাটহাজারীতে সন্তানদের মামলায় ফাঁসাচ্ছে বাবা—নাটের গুরু মেয়ের জামাই!

হাটহাজারীতে বাবার কারণে কঠিন অবস্থায় পড়েছেন সন্তানেরা। বাবার একের পর এক অভিযোগ ও মামলায় পুরো পরিবারটিই এখন অসহায়। আর এসবই তিনি করছেন মেয়ের জামাইয়ের ইশারায়। আর এসবের আড়ালে রয়েছে অর্থের লোভ।

হাটহাজারী পৌরসভার কালা চাঁন ফকির বাড়িতে ঘটেছে এমন ঘটনা। মামলা ও হয়রানি থেকে মুক্তি পেতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বরাবর অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী সন্তান মো. আইয়ুব। ১২ ডিসেম্বর ভগ্নিপতি আবু হুরাইরা ও বোন খুরশিদা বেগমের বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শাহিদুল আলম বরাবর অভিযোগ করেন তিনি।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ২০১৭ সালে হাটহাজারী কলেজ রোডে ‘মেট্রিক সলিওশন’ নামে একটি কম্পিউটার ব্যবসা নিয়ে মো. আইয়ুবের বড় ভাই মো. মামুনুর রশিদ ও ভগ্নিপতি আবু হুরাইরার সঙ্গে বিরোধ হয়। ২০১৭ সালে মামুনুর রশিদ চীন সরকারের বৃত্তি নিয়ে পিএইচডি করতে চলে যান। মামুনের অনুপস্থিতিতে ভগ্নিপতি আবু হুরাইরা প্রতিষ্ঠানটি হাতিয়ে নেওয়ার জন্য উঠেপড়ে লাগে। এ নিয়ে আদালতে একাধিক মামলা চলছে।

এদিকে আবু হুরাইরার শালা মো. মামুনুর রশিদসহ পুরো পরিবারকে হয়রানির জন্য মো. মামুনের বাবা ও নিজের শ্বশুর মো. ইছহাককে টোপ হিসেবে ব্যবহারের ফাঁদ পাতেন। তাঁকে কৌশলে নিজের বাড়িতে নিয়ে যান তিনি। তারপর শ্বশুর ইছহাক ও নিজে আদালত, থানা ও উপজেলা প্রশাসনে ১২টি মামলা ও ১০টি অভিযোগ করেন।

মামলা ও অভিযোগের পর আইয়ুবের পরিবার সামাজিকভাবে চরম হেয় প্রতিপন্ন ও আর্থিক ক্ষতির শিকার হন। বিষয়টি বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হওয়ার পর সামাজের লোকজনের নানা কটু কথায় আইয়ুবের পরিবার সামাজিকভাবে একঘরে হয়ে পড়েন। মামলার ঘানি টানতে গিয়ে ভিটেমাটি পর্যন্ত হারান।

সরেজমিন গেলে স্থানীয়রা জানান, বৃদ্ধ ইছহাক প্রচণ্ড বদমেজাজি। সন্তানেরা একাধিকবার সামাজিকভাবে বৈঠক করে ঘরে ফিরিয়ে এনে ভরণপোষণের দায়িত্ব নিতে চাইলেও তিনি রাজি হননি। সন্তানেরা তাঁকে কখনো মারধর করেনি। ভগ্নিপতি আবু হুরাইরা ৮টি মামলা, ৫টি অভিযোগ ও মো. ইছহাক ৪টি মামলা ও ৫টি অভিযোগ করেন। এসব মামলা ও অভিযোগের ঘানি টানতে গিয়ে মামুনুর রশিদের পরিবার পথে বসে গেছেন। এমনকি ভিটেমাটি পর্যন্ত হারিয়েছেন।

অন্যদিকে ইছহাকের করা অভিযোগ যাচাই করে দেখা গেছে, ২০১৮ সালের ১০ আগস্ট, ২০১৯ সালের ২০ মার্চ ও ২০২২ সালের ৬ ডিসেম্বর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর করা অভিযোগ প্রায় অভিন্ন।

চাঁন ফকিরের বাড়ির বৃদ্ধ মো. শফি বলেন, ইছহাক বদমেজাজি। তিনি প্রায়সময় মারামারি করেন। তাঁকে ছেলেরা কখনো মারধর করেনি। দুবছর আগে পুকুরঘাটে পড়ে আহত হওয়ার ঘটনাকে পুঁজি করে ছেলেদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করে সামাজিকভাবে হয়রানি করছেন। পুরো বিষয়ের ইন্ধনদাতা ভগ্নিপতি মো. আবু হুরাইরা। তিনি দেশ ও সমাজবিরোধী কাজে জড়িত। তিনিই এসবের কলকাঠি নাড়ছেন। মামুনের পরিবারের অনুরোধে আমি ইছহাককে বাড়িতে ফিরিয়ে আনা ও ভরণপোষণের বিষয়টি সমাধান করতে চাইলেও তিনি রাজি হননি।

মো. আবদুল মান্নান, ফারুক সওদাগর ও মো. হাসানসহ স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তি জানান, ইছহাক ভীষণ বদমেজাজি মানুষ। তিনি স্ত্রী-সন্তানদের মারধর করতেন। সন্তানেরা তাকে মারধরের প্রশ্নই আসে না। মামুনুর রশিদের পরিবার উচ্চশিক্ষিত। এগুলো ভগ্নিপতি আবু হুরাইরার ষড়যন্ত্র।

ইছহাকের দুমেয়ে রোকেয়া বেগম ও নাজমা আকতার জানান, বাবার এসব কর্মকাণ্ডের জন্য তারা শ্বশুরবাড়িতে লজ্জায় মুখ দেখাতে পারেন না। তিনি শ্বশুরবাড়িতেও মেয়েদের নামে আজেবাজে কথা বলে তাদের হেয় করছেন।

এদিকে ইছহাকের স্ত্রী নুরজাহান বেগম বলেন, আমি খুবই অসুস্থ। যেকোনো সময় মারা যেতে পারি। মৃত্যুর আগে এমন অপমান সইতে হবে কখনো কল্পনা করিনি।

ইছহাকের ছেলে চীনে পিএইচডিরত মো. মামুনুর রশিদ আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, কোনো ছেলে তার বাবাকে মারতে পারে না। আমি ১২ বছর স্কুলে শিক্ষকতায় শিক্ষার্থীদের পিতা-মাতাকে সম্মানের শিক্ষা দিয়েছি। এখন পিএইচডি করার জন্য চীনে এসেছি। উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে বাবাকে মারধর করব এমনটি ভাবাও যায় না। এগুলো ভগ্নিপতি আবু হুরাইরার ষড়যন্ত্র। কেউ যদি এলাকায় এসে বিষয়টি অনুসন্ধান করেন তাহলে প্রকৃত ঘটনা জানতে পারবেন। আমার ভগ্নিপতি ও বাবার মামলা ও অভিযোগের খরচ চালাতে গিয়ে ভিটামাটি পর্যন্ত হারিয়েছি। আমার বাবাকে ব্যবহার করে পুরো পরিবারকে সে (ভগ্নিপতি) পথে বসিয়ে দিয়েছে। পুরো বিষয়টি মিথ্যা ও বানোয়াট। আমি এর সুষ্ঠ বিচার চাই। আশা করি, আমরা ন্যায়বিচার পাব।

অভিযোগকারী মো. আইয়ুব বলেন, আমাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নিয়ে বিরোধের জেরে ভগ্নিপতি আমার বাবাকে ব্যবহার করে আমাদের বিরুদ্ধে মোট ১৩টি মামলা ও ৯টি অভিযোগ করেছেন। মামলার ঘানি টানতে গিয়ে আমরা ভিটেমাটি পর্যন্ত হারিয়েছি। সামাজিকভাবেসহ বিভিন্নভাবে আমার বাবাকে ঘরে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেছি। কিন্তু তিনি ঘরে না এসে একর পর এক মিথ্যা মামলা ও অভিযোগ করে আমাদের হয়রানি করছেন। এসব মামলা ও হয়রানি থেকে মুক্তি পেতে আমি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর অভিযোগ করেছি।

যোগাযোগ করা হলে ইউএনও মো. শাহিদুল আলম আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, মো. আইয়ুব নামে এক ব্যক্তি মিথ্যো মামলা ও হয়রানি থেকে রক্ষা পেতে অভিযোগ করেছেন। বিষয়টি পারিবারিক হওয়ায় আগামী ২-৩ দিনের মধ্যে উপয়পক্ষকে ডেকে শুনানি করা হবে।

আলোকিত চট্টগ্রাম

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!